২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ১২:০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন
৯ হাজার গ্রাহকের শতকোটি টাকা আত্মসাৎ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১১-২০২৩
৯ হাজার গ্রাহকের শতকোটি টাকা আত্মসাৎ

ভালো মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে রাজশাহীর একটি সমবায় সমিতি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করেছিল শতকোটি টাকা। সেই টাকা আবার বিনিয়োগ করা হয়েছিল বহুস্তর বিপণন বা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপে (এমটিএফই)। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইভিত্তিক অ্যাপটি বন্ধ হওয়ার পর রাজশাহীর ‘ভাই ভাই সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির’ শতকোটি টাকা গচ্চা গেছে।


এই ঘটনার পর প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা শামীম আহমেদ উধাও হয়েছেন। এখন মুনাফা তো দূরের কথা, আসল টাকাই ফেরত পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন গ্রাহকেরা।


সমবায় সমিতির গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শামীম আহমেদ (সুজন) রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা। শামীমের সঙ্গে ছিলেন তাঁর বড় ভাই সুমন এবং তাঁদের বাবা সাদিকুল ইসলাম। নগরীর মহিষবাথান এলাকায় নিজেদের বাড়িতে এর কার্যালয় ছিল। এক যুগ ধরেই ঋণ কার্যক্রম চালাতেন তাঁরা। অন্তত সাড়ে ৯ হাজার সদস্য রয়েছেন এ সমিতির। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সব মিলিয়ে অন্তত ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে সমিতির সদস্যদের।


এই সমিতির সদস্যরা বলছেন, সম্প্রতি এমটিএফই অ্যাপের কথা বলে ১৪ শতাংশ মুনাফা দেওয়ার নাম করে আমানত সংগ্রহ শুরু করেন শামীম আহমেদ। এ ছাড়া রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। সব অর্থই এমটিএফইতে বিনিয়োগ করেন তিনি। এমটিএফই অ্যাপ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই। কারণ, এই অর্থ ফেরত আনার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকেই কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমনকি সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান এর দায়ও নিচ্ছে না। 


এই পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার বিকেলে শামীম আহমেদের বাড়ি ঘেরাও করেন গ্রাহকেরা। সমিতির সদস্য আকলিমা বেগম জানান, তিনি নিজে, তাঁর শাশুড়িসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা মিলে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা সমিতিতে বিনিয়োগ করেছিলেন। ওই সময় শামীম বলেছিলেন, ব্যাংকে রাখলে ১ লাখ টাকায় যে অর্থ পাওয়া যাবে, তার চেয়ে দ্বিগুণ অর্থ মিলবে সমবায় সমিতিতে। 


জালিলা বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘আমি জমি বিক্রি করে ৫০ লাখ টাকা দিয়েছি সমবায় সমিতিতে। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা, এখন আর টাকা ফেরত পাচ্ছি না।’ সারেদা বেগম নামের আরেক নারী বলেন, ‘আমি ভিক্ষা করে ১৫ হাজার টাকা এই সমিতিতে জমিয়েছি। এখন আমার শেষ সম্বলটাও চলে গেল।’ 

জানতে চাইলে নগরীর ৫ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরু বলেন, ‘প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা এসেছিলেন আমার কাছে। আমি শামীম আহমেদের বাবা ও ভাইকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। তাঁরা টাকা দ্রুত ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু শামীম আহমেদ পলাতক রয়েছেন।’


রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘টাকা নিয়ে সমবায় সমিতি পালিয়ে যাওয়ার কারণে বাড়ি ঘেরাও করে একটা বিক্ষোভ হয়েছে, এ রকম শুনেছি। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


শেয়ার করুন