২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৬:৫২:২৭ পূর্বাহ্ন
একই বিন্দুতে থাকবে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১১-২০২৩
একই বিন্দুতে থাকবে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ভারতের প্রকৃত অবস্থান নয় বলে মনে করছে বিএনপি। ভূরাজনৈতিক ইস্যুতে চীনা সমীকরণে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শেষ পর্যন্ত ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একই বিন্দুতে অবস্থান করবে বলে মনে করছে দলটি। দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর গত শনিবার রাতে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। তাদের বিশ্লেষণ বলছে- ভূরাজনৈতিক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন। তাই এখনই অতটা উদ্বিগ্ন নন দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা।


গত শুক্রবার ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের ‘টু-প্লাস-টু’ বৈঠকে বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই স্পষ্ট করে তুলে ধরেছি আমরা। বাংলাদেশের নির্বাচন সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং সে দেশের মানুষই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। মন্ত্রিপর্যায়ের এ বৈঠকের পর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র যে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে, সেখানে এ প্রসঙ্গটি আসেনি। বিএনপি নেতারা বলেন, অনেক নেতিবাচক আলোচনার মধ্যে এটিই তাদের আশা জাগিয়েছে।


বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের মন্তব্যের পর এ নিয়ে বিএনপি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করবে কি-না সে বিষয়ে দলের নেতারা ভাবছেন। তবে এ নিয়ে ভিন্ন মতও আছে। দলের নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, ভারতের বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপির একটি কৌশলী বক্তব্য আসা উচিত। কেউবা মনে করছেন, বিষয়টি কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনায় নেওয়া যেতে পারে। বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক নেতা বলেন, চীনের বিষয়ে বক্তব্য দেওয়াটা যতটা সহজ বিএনপির জন্য, ভারতের বিষয়ে ততটা নয়। কারণ এ ক্ষেত্রে চীন ও ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কগত বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে।


জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত পথসভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং গণতান্ত্রিক বিশ^কে আহ্বান জানাতে চাই, বাংলাদেশের জনগণের আকাক্সক্ষা হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন; যে নির্বাচনে মানুষ ভোট দেবে, তার ভোটের ভিত্তিতে ফলাফল হবে এবং বিজয়ীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। এটি হচ্ছে জনগণের আকাক্সক্ষা, তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না।’


বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির এক সদস্য মনে বলেন, প্রথমত ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘টু-প্লাস-টু’ বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে যেটুকু আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা পুরোপুরি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। আবার বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নীতি না বদলালে বিএনপির উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আর যুক্তরাষ্ট্র যদি ভারতের অবস্থানে একমত হতো, তাহলে বক্তব্যটি আরও শক্তভাবে আসত। আন্তর্জাতিক মিডিয়াসহ কোনো সূত্রই নিশ্চিত করেনি যে, ভারতের ওই বক্তব্যের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সহমত পোষণ করেছে। এ অঞ্চলের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বদল হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি।


যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছে। এমতাবস্থায় ‘টু-প্লাস-টু’ বৈঠকটি হয়েছে।


এ বিষয়ে বিএনপি নেতাদের বিশ্লেষণ হচ্ছে, দিল্লির বৈঠকে বাংলাদেশ বিষয়ে বিশদভাবে আলোচনা করার সুযোগ তারা দেখেন না। কারণ, ওই বৈঠকে ইসরায়েল, ইউক্রেন, চীন, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ বড় অনেক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি দুদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ও গুরুত্ব পাওয়ার কথা। এত কিছুর মাঝে হয়তো ভিন্ন কোনো ঘটনার বিষয়ে বলতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ আসে। সেখানে ভারত কয়েকটি বাক্যে বাংলাদেশ বিষয়ে তাদের অবস্থান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র হয়তো সে বক্তব্য শুধু শুনেছে না হলে তারাও সংক্ষিপ্তভাবে তাদের অবস্থান জানিয়েছে।


বিএনপি নেতারা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ইস্যুতে ভারতের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের দিকে থাকার সম্ভাবনাই বেশি। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কী ভূমিকা রাখে তার ওপর নজর রাখছে বিএনপি। তাদের মতে, বাংলাদেশ ইস্যুতে দৃশ্যমান কথাবার্তা যা-ই হোক চীন ও ভারত একবিন্দুতে থাকবে, এমন কোনো সম্ভাবনাই নেই।


গত শুক্রবার দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর বিএনপির শীর্ষপর্যায়ে ভার্চুয়াল বৈঠকগুলোর সূত্রে জানা যায়, দলটি এ বিষয় নিয়ে অতটা চিন্তিত নয়। দুদেশের যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ বিষয়ে কোনো কথা না থাকলেও সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পক্ষ থেকে কেন নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য দেওয়া হলো- এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে দলের নেতাদের মধ্যে। তারা মনে করেন, নির্বাচন তফসিল ঘোষণার প্রাক্কালে ভারতের এ অবস্থান বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলকে স্বস্তি দেবে। আবার এ বক্তব্যে ভারত এও বোঝাতে চেয়েছে যে, বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের ধারাবাহিকতা না থাকলে বাংলাদেশে তৃতীয় শক্তির উত্থান চায় না প্রতিবেশী দেশটি।


 

শেয়ার করুন