০২ জানুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৬:৫৩:৩৭ অপরাহ্ন
রামেক হাসপাতালে লিফট স্থাপনে জালিয়াতি: ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্তির দাবি
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-১২-২০২৪
রামেক হাসপাতালে লিফট স্থাপনে জালিয়াতি: ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্তির দাবি

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে দরজা ও লিফট স্থাপনে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশনকে অবিলম্বে কালো তালিকাভুক্ত করার দাবি উঠেছে। এ দাবিতে সোমবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছে সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ।


রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) উম্মে কুলসুম সম্পা স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।


স্মারকলিপির অনুলিপি ডাকযোগে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গণপূর্তের রাজশাহী জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এবং রাজশাহীর গণপূর্ত বিভাগ-১ ও গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলীকেও অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।


স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশন রামেক হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিট নির্মাণের কাজ পায়। ১০ কোটি ৯৫ লাখ ৯০ হাজার টাকার এই কাজের মধ্যে স্মার্ট দরজা লাগানোর কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদার সৈয়দ জাকির হোসেন কাঠের দরজা লাগান। হাসপাতাল থেকে আপত্তি জানালে দরজা তিনটি পরবর্তীতে পাল্টে কাচের করে দেওয়া হয়েছে।


একইভাবে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী বেড কাম প্যাসেঞ্জার লিফট লাগানোর কথা ছিল। ঠিকাদার বেড লিফট না লাগিয়ে প্যাসেঞ্জার লিফট লাগিয়ে দেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আপত্তির পর সেটা ঠিক করে দেওয়া হলেও স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী লিফট সরবরাহ করা হয়নি। তদন্তে উঠে এসেছে, চাওয়া হয়েছিল এ গ্রেডের লিফট। সরবরাহ করা হয়েছে সি গ্রেডের লিফট। এই দুই লিফটের দামের পার্থক্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা। আবার চাওয়া হয়েছিল ফায়ার প্রটেকটেড লিফট, কিন্তু হাসপাতালে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে সাধারণ লিফট।


এই জালিয়াতি ধরা পড়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও গণপূর্তের নির্দেশে ঠিকাদার তার লিফট খুলে নিয়ে যান। ঠিকাদারকে স্পেশিফিকেশন অনুযায়ী লিফট লাগাতে বলা হয়। এরপর ঠিকাদার লিফট আমদানী করতে একটি এলসি খুলেছেন। সেই এলসির মেয়াদ পার হয়ে গেছে গত ৮ ডিসেম্বর। কিন্তু ঠিকাদার এখনও লিফট এনে লাগাননি। এর ফলে পাঁচতলার আইসিইউর মূমুর্ষ রোগী ও তাদের স্বজনদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিন।


স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘ঠিকাদার অনিয়ম করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা অতিরিক্ত লাভ করতে গিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বেকায়দায় ফেলেছেন। এতে হাজার হাজার রোগী দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তদন্তে জালিয়াতি প্রমাণিত হলেও এই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, যা আমাদের অবাক করেছে। আমাদের আরও অবাক করেছে যে এমন ভয়াবহ জালিয়াতি ধরা পড়ার পরেও এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-১ থেকে আরেকটি কাজ পেয়েছেন। সম্প্রতি তাকে সরকারি কর্ম কমিশনের রাজশাহী কার্যালয়ে ৬০ লাখ টাকার এসি এবং আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম সরবরাহের কাজ দেওয়া হয়েছে।’


স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘জালিয়াতি ধরা পড়ার পর সংশ্লিষ্ট বিভাগ অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে এই ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত তো করেইনি, বরং তাকে আবার নতুন কাজ দেওয়া হয়েছে। আমাদের আশঙ্কা, অসাধু এই ঠিকাদার আবারও অনিয়ম করে সংশ্লিষ্টদের বেকায়দায় ফেলবেন। গচ্চা যাবে সরকারি অর্থ।’


স্মারকলিপিতে ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশনকে দ্রুততম সময়ে স্পেশিফিকেশন অনুযায়ী রামেক হাসপাতালে লিফট লাগাতে বাধ্য করা এবং অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে দ্রুত কালো তালিকাভুক্ত করার দাবি জানানো হয়। তা না হলে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলেও স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে।


স্মারকলিপি দেওয়ার সময় রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মো. লিয়াকত আলী, সাধারণ সম্পাদক মো. জামাত খান, উপদেষ্টা আকবারুল হাসান মিল্লাত, রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মাহমুদ হাসান, নারীনেত্রী সেলিনা বেগম, রাজশাহী ওয়েবের সভাপতি আঞ্জুমান আরা পারভীন লিপি, সমাজসেবক গোলাম নবী রনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


শেয়ার করুন