দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে অংশ নিতে চাইলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে আজ শনিবারের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানাতে হবে। এ ছাড়া কার প্রত্যয়নে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে, তা জানাতে ইসি নিবন্ধিত ৪৪টি দলকে চিঠি দিয়েছে। দলের সভাপতি বা মহাসচিব বা সমমর্যাদার নেতার কাছে গতকাল শুক্রবার এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির সইয়ের নমুনা ইসি সচিবালয় ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাতে হয়।
এটি পাঠানোর জন্য কোনো দিন ঠিক করে দেওয়া হয়নি। তবে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনের আগে দেওয়াই নিয়ম। কারণ, মনোনয়নপত্র বাছাইকালে এই স্বাক্ষরের সঠিকতা যাচাই করে দেখতে হয়।
এদিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) জানিয়েছে, তারা এবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে। জাসদের দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন জানান, গতকাল তাঁরা ইসিকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন।
ইসি সূত্রে জানা যায়, কোনো আসনে একই দলের একাধিক প্রার্থী প্রাথমিকভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে দলীয় সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির সই করা প্রত্যয়নপত্র মনোনয়নপত্রের সঙ্গে থাকতে হয়। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার আগে দল চূড়ান্ত মনোনীত একজনকে প্রত্যয়ন দেবে। বাকিদের মনোনয়নপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। আর জোটভুক্ত দলগুলোর অভিন্ন প্রতীক ব্যবহারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আসনে দুই দলের সম্মতিপত্র রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দিতে হবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগেই।
ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ায় ইসির অনুমতি ছাড়া কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি না করতে আজ মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দেওয়া হবে।
পর্যায়ক্রমে অন্যান্য মন্ত্রণালয়, সংস্থায়ও চিঠি পাঠানো হবে। জানা যায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দেওয়া চিঠিতে সাধারণত উল্লেখ করা হয়, নির্বাচনের কাজে সহায়তা দেওয়া সব নির্বাহী বিভাগের কর্তব্য। কোনো কর্মকর্তা দায়িত্ব পাওয়ার পর অব্যাহতি না দেওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ইসির অধীনে প্রেষণে আছেন বলে গণ্য হবেন। নির্বাচনের সময়সূচি জারি হওয়ার পর থেকে ফল ঘোষণার পর ১৫ দিন পর্যন্ত ইসির অনুমতি ছাড়া কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অন্যত্র বদলি করা যায় না। এ ছাড়া নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের অব্যাহতি না দেওয়া পর্যন্ত যাতে অন্যত্র বদলি বা ছুটি দেওয়া না হয় অথবা নির্বাচনী দায়িত্ব ব্যাহত হতে পারে—এমন কোনো কাজে নিয়োজিত না করা হয়, তা নিশ্চিত করতে সব মন্ত্রণালয়-বিভাগ, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে পরিপত্রের মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।
জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে ৪৩ দেশ ও সংস্থাকে ভোট পর্যবেক্ষণে আমন্ত্রণ জানানো হবে। কমিশন ইতিমধ্যে এ-সংক্রান্ত নথি অনুমোদন দিয়েছে। চলতি সপ্তাহের যেকোনো দিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এসব দেশ ও সংস্থাকে চিঠি দেওয়া হবে। দেশগুলোর মধ্যে আছে রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, উজবেকিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, চীন, জাপান। সংস্থাগুলোর মধ্যে আছে ওয়ার্ল্ড ইলেকশন বডি, ফেমবোসা, সার্ক, অ্যাসোসিয়েশন অব আফ্রিকান ইলেকশন অথরিটি।
ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানান, ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশি কোনো পর্যবেক্ষণ সংস্থা বা গণমাধ্যমকর্মী নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ, যুক্তরাষ্ট্রের এনডিআই, আফ্রিকান ইলেক্টোরাল অ্যালায়েন্স থেকে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল এবং অস্ট্রেলিয়ার এক নাগরিক ইতিমধ্যে আবেদন করেছেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার চালানো যাবে। ভোট হবে ৭ জানুয়ারি।
