২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১২:৪০:৪৩ পূর্বাহ্ন
আসন ধরে রাখতে চায় আ.লীগ ভোট নিয়ে ভাবছে না বিএনপি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-১১-২০২৩
আসন ধরে রাখতে চায় আ.লীগ ভোট নিয়ে ভাবছে না বিএনপি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ফরিদপুরের চার আসনেই প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সব আসনই এবার দখলে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য চলছে নানা কৌশলে ভোট প্রার্থনা ও সরকারের উন্নয়নের প্রচার।


অন্যদিকে ভোট নিয়ে তেমন ভাবনা নেই বিএনপির। তারা সরকার পতনের আন্দোলনের দিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। তবে প্রার্থীরা ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন। দলীয় হাইকমান্ড থেকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত এলে ভোটের মাঠে নামবেন তারা।


জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেন, যে কোনো সময়ের চেয়ে ফরিদপুর জেলায় আওয়ামী লীগ অনেক বেশি শক্তিশালী। জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের কারণেই ভোটাররা আওয়ামী লীগকে বেছে নেবে বলে আমার বিশ্বাস। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।


জেলা বিএনপির সদস্য সচিব একেএম কিবরিয়া স্বপন বলেন, বিএনপি বর্তমানে নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না। বিএনপির প্রধান ভাবনা আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি অবশ্যই অংশ নেবে। চারটি আসনেই আমাদের প্রার্থীরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন বলে আশা করি।


(সরেজমিন তথ্যসহ প্রতিবেদন প্রস্তুতে সহায়তা করেছেন আব্দুল মান্নান-ভাঙ্গা প্রতিনিধি)


ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী-মধুখালী-আলফাডাঙ্গা): এ আসনটি মূলত আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। বিগত দিনের নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। এ আসনে বর্তমান এমপি মনজুরুল ইসলাম ফের নৌকার মনোনয়ন চাইছেন।


এছাড়া নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন দুইবারের সাবেক এমপি কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কাজী সিরাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি আব্দুর রহমান, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন, হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের চেয়ারম্যান দিলিপ রায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য সৈয়দ শামীম রেজা, মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক।


এর বাইরে ঢাকা রেঞ্জের পুলিশের সাবেক ডিআইজি আসাদুজ্জামান মিয়া নৌকার মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ধানের শীষের মনোনয়ন চাইবেন সাবেক এমপি বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর ও কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাবেক এমপি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম।


ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা): এ আসনের বর্তমান এমপি প্রয়াত সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর কনিষ্ঠপুত্র শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন।


তিনি ছাড়াও নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মেজর (অব.) আতমা হালিম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান চৌধুরী জুয়েল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক এবং বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়া।


দলীয় হাইকমান্ড থেকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হলে ধানের শীষের মনোনয়ন চাইতে পারেন বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমানের কন্যা, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল।


ফরিদপুর-৩ (সদর): এ আসনটি সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে। স্বাধীনতাপরবর্তী বেশিরভাগ সময় এ আসন বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে আসে। বর্তমানে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নানা নাটকীয়তা চলছে।


বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন রয়েছেন বিদেশে। দীর্ঘ ৩ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি রাজনীতি থেকে দূরে রয়েছেন। ফরিদপুরেও আসছেন না। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা কম। এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। নৌকায় ভোট দিতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন তিনি। এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও হামিম গ্রুপের কর্ণধার একে আজাদও নৌকার মনোনয়ন পেতে নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সভা, সমাবেশ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন তিনি।


একে আজাদ বলেন, যোগ্যতার মাপকাঠিতে আমি যদি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারি তাহলে দলের হয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে পারব। তবে জননেত্রী শেখ হাসিনা নৌকা যাকে দেবেন তার হয়ে কাজ করব। অন্যদিকে এ আসনে মহিলা দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ ধানের শীষের প্রার্থী হতে পারেন। তিনি বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে। এছাড়া ধানের শীষের প্রার্থী হতে পারেন মাহবুবুল হাসান পিংকু ও জুলফিকার হোসেন জুয়েল।


ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন): এ আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। জাফর-নিক্সন দ্বন্দ্বের কারণে তাদের বাগযুদ্ধ নিয়ে প্রায়ই আলোচনায় থাকে আসনটি। বিগত দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহ হেরে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র মুজিবর রহমান নিক্সন চৌধুরীর কাছে।


তৎকালে আওয়ামী লীগ কিংবা অঙ্গ সংগঠনের কোনো পদে না থেকেও দু-দুবার বিজয়ী হয়ে এ আসনে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন নিক্সন চৌধুরী। বর্তমানে তিনি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। এবার তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নের জন্য প্রচার চালাচ্ছেন।


তিনি বলেন, আমি দুইবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে এমপি হয়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। বড় বড় প্রকল্প করেছি। রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ নির্মাণ করেছি। কাজী জাফরুল্লাহ ৪০ বছরেও এত উন্নয়ন করতে পারেননি। এ কারণে এলাকার জনগণ তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গেই আছেন। জাফরউল্লাহর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই। আশা করছি জননেত্রী শেখ হাসিনা এবার আমাকে নৌকা দেবেন। আর যদি নৌকা না পাই, আগামী নির্বাচনে যে মার্কায় ভোট করব জনগণ আমাকে জয়যুক্ত করবেন বলে বিশ্বাস করি।


এ আসনে এবারও নৌকার মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি কাজী জাফরউল্লাহ। তিনি বলেন, সম্প্রতি আমি দলের নির্বাচন কমিটির কো-চেয়ারম্যান হয়েছি। তবে সংসদ নির্বাচন করতে আমার কোনো বাধা নেই। কারণ দলের প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনাও নির্বাচনে অংশ নেন। এতে আইনগত বাধা নেই। আমি মনে করি দলীয় মনোনয়ন আমিই পাব। নির্বাচনের বিষয়ে সিগন্যাল পেলে এ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পেতে চান ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম।


এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করতে চান দলটির কেন্দ্রীয় সদস্য ও ঢাকা মহানগর সহসভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন।


শেয়ার করুন