২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৫:১১:৩২ অপরাহ্ন
চুনোপুঁটিও মিলছে না দুদকের জালে
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-১১-২০২৩
চুনোপুঁটিও মিলছে না দুদকের জালে

দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ব্যুরো ভেঙে ১৯ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর যাত্রা শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিষ্ঠার পর এতটা সময় কেটে গেলেও এই সংস্থা থেকে আশানুরূপ সুফল মেলেনি বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা। আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ, পূর্ণ ক্ষমতা না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে পুরোপুরি জনগণের আস্থার প্রতিষ্ঠান হতে পারেনি দুদক।


যদিও দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেনের দাবি, দুদকের ওপর কোনো চাপ থাকে না। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে আইন ও বিধি অনুযায়ী আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে কমিশন। কোনো প্রভাশালীর চাপের মুখে অনুসন্ধান থেমে থাকে না। 

দুদক প্রতিষ্ঠার পর এক-এগারোর সময় যেভাবে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি অনুসন্ধানে নেমে আশার আলো দেখিয়েছিল; সাম্প্রতিক সময়ে সেখান থেকে অনেকটাই সরে এসেছে। বরং বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমে তাদের ছাড় দেওয়া হয়। চলতি বছরও দুই এমপির অনুসন্ধান পরিসমাপ্তি ঘোষণা করে দুদক। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনারও সৃষ্টি হয়।


এ ছাড়া অনুসন্ধানে ধীরগতি ও বিচার দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকায় মামলার আসামিরা বছরের পর বছর ধরে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

দুদকের পরিসংখ্যান বলছে, দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের হওয়া ৬ হাজার ২৬৪টি মামলার বিচার দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁলে আছে বিভিন্ন আদালতে। এর মধ্যে বিচারিক আদালতে ৩ হাজার ৩২৬টি এবং হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে ২ হাজার ৯৩৮টি মামলা বিচারাধীন। আবার উচ্চ আদালতের নির্দেশে ৪১৬ মামলার বিচার বছরের পর বছর ধরে স্থগিত হয়ে আছে।


মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, দুদক যে উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল, তা পুরোপুরি পূরণ হয়নি। রাষ্ট্রের টাকা লুট করা বড় বড় দুর্নীতিবাজেরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। অনুসন্ধান ও তদন্তে দীর্ঘ সময় লাগাচ্ছে। এগুলোর অন্যতম কারণ নির্বাহী চাপ; যেটাকে আমলাতান্ত্রিক চাপও বলা যায়।


ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদক কিছু চুনোপুঁটিকে ধরে বার্তা দিচ্ছিল। এটা যেমন আশা জাগায়, অন্যদিকে রুই-কাতলাদের না ধরার নজিরও আছে। এখান থেকে বের হয়ে জন-আস্থায় আসতে চাইলে দুদককে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে।


গত পাঁচ বছরে ১ হাজার ৬৮০টি মামলা করেছে দুদক। এর মধ্যে গত বছর (২০২২) ৪০৬টি, ২০২১ সালে ৩৪৭টি, ২০২০ সালে ৩৪৮টি, ২০১৯ সালে ৩৬৩টি এবং ২০১৮ সালে ২১৬টি মামলা। চলতি বছর পরিপূর্ণ কোনো হিসাব দুদকের কাছে না থাকলেও সংস্থাটির প্রকাশনা ‘দুদক বার্তা’ থেকে জানা যায়, গত ৯ মাসে ১৮৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। গত পাঁচ বছরে নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ২৯১টি মামলা। এর মধ্যে গত বছর ৩৪৬টি মামলা আদালতে নিষ্পত্তি হয়েছে। এ সময় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে ১ হাজার ২১৫টি।


দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, দুর্নীতি নির্মূল দুদকের একার পক্ষে সম্ভব না। এর জন্য জনমত গঠনসহ সবার এগিয়ে আসা দরকার।


শেয়ার করুন