২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০৪:০২:০১ পূর্বাহ্ন
অবৈধ অস্ত্র উদ্বারে আজ শুরু বিশেষ অভিযান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-১২-২০২৩
অবৈধ অস্ত্র উদ্বারে আজ শুরু বিশেষ অভিযান

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ শনিবার থেকে সারাদেশে শুরু হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের বিশেষ অভিযান। চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অস্ত্র বিক্রেতা ও নির্বাচনে সহিংসতা চালাতে পারে এমন সব রাজনৈতিক দলের ক্যাডারদের তালিকা ধরে চলবে এ অভিযান। ২৩ দিনের টানা এ অভিযানে অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চল। সীমান্ত হয়ে অবৈধ অস্ত্রের প্রবেশ রোধে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে; গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র পাচারের রুটগুলোতে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা তিন সহস্রাধিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে।


পুলিশ-সূত্র বলছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সবসময়ই অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বেড়ে যায়। এ সময় অস্ত্রের চাহিদা ও দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে যায় পাচারও; সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান চক্রগুলো অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি প্রচুর অবৈধ অস্ত্র পাচার করে থাকে। দেশে প্রবেশের পর নানা কৌশলে সেসব অস্ত্র ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন জেলা, মহানগর, শহর, উপশহর এমনকি প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জেও।


সূত্রমতে, বাংলাদেশ-ভারত ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের অন্তত ৩০টি পয়েন্ট হয়ে পিস্তল, রিভলবারসহ বিভিন্ন অস্ত্র চোরাচালান হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি চোরাচালান হয়ে থাকে ১৭টি পয়েন্ট বা রুট দিয়ে। রুটগুলো হলো- চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, একই এলাকার সোনামসজিদ, আজমতপুর, বিলভাতিয়া, রহনপুর, ঝিনইদহের মহেশপুরের জুলুলী, সাতক্ষীরার কলারোয়ার তলুইগাছা, যশোরের বেনাপোল, চৌগাছা, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, সাতক্ষীরার শাঁকারা, মেহেরপুর, কুমিল্লা, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া এবং কুষ্টিয়ার সীমান্ত এলাকা।


নির্বাচনকে ঘিরে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-অপারেশন্স) আনোয়ার হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ নিয়মিত অভিযান করে থাকে। নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসীসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে যারা, তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান জোরদার করা হয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করতে বলা হয়েছে। এছাড়া তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


পুলিশের একাধিক জেলার এসপি আমাদের সময়কে জানিয়েছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে মৌখিকভাবে সব জেলার পুলিশ সুপার ও অন্যান্য ইউনিটকে অস্ত্র উদ্ধারে জোর দিতে বলা হয়েছিল। নির্বাচনে অস্ত্রবাজি রুখতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান মাসখানেক আগে থেকেই জোরদার করা হয়েছে। এ সময় চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের তালিকা তৈরি করা হয়। সে তালিকা ধরে অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার ও


অস্ত্র উদ্ধার চলমান ছিল। এখন নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ৯ ডিসেম্বর (আজ) থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালাবে পুলিশ।


পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রের তথ্য, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রথম ৮ মাসে ২ হাজার ৭৮৫টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। এছাড়া সীমান্তঘেষা ভারতের মণিপুর রাজ্যে সম্প্রতি লুট হওয়া কয়েক হাজার অস্ত্র সেখানকার সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঢুকতে পারে। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে অবৈধ বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র প্রবেশ ও ব্যবহারের শঙ্কা রয়েছে। এ শঙ্কা থেকেই নির্বাচন কমিশন অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে।


গত ৩ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে জারি করা এক পরিপত্রে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করতে এবং নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূলে রাখতে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাস্তানদের তালিকা করে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাসহ সব ধরনের বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার পরিচালনা জোরদার করতে বলা হয়।


বিজিবির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমান্ত বেশি সেনসেটিভ হয়। আমরা বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছি যেন অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক আমাদের দেশে না আসতে পারে; যেটা আমাদের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে। আমরা সাফল্য পাচ্ছি, আগের তুলনায় বেশি অস্ত্র উদ্ধার করতে পারছি। চট্টগ্রাম বিভাগের সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক চোরাচালানের ব্যাপারে তারা সবসময় সতর্ক থাকেন। বিজিবিসহ অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করেন। নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ থেকে যাতে কোনো অস্ত্র না আসতে পারে সে বিষয়ে নজরদারি ছাড়াও প্রবেশ করা অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।


শেয়ার করুন