রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ও আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী। গত বছর রাজাবাড়ী কলেজের প্রিন্সিপাল সেলিম রেজাকে হকস্টিক দিয়ে পিটিয়ে একদফা খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন ফারুক। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সারা বছর আলোচিত এই এমপি প্রতিবারই পার পেয়ে গেছেন। দেখা গেছে, একটার রেশ কাটতে না কাটতেই ঘটিয়েছেন আরেকটা বিতর্কিত ঘটনা।
এবার এক আওয়ামী লীগ নেতার মোবাইল ফোন আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলেছেন ফারুক। এ ঘটনা দেখে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন নেতাকর্মীরা। ঘটনার পরপরই ওই আওয়ামী লীগ নেতাসহ অধিকাংশ নেতাকর্মী সভাস্থল ত্যাগ করেন।
দলীয় নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে সোমবার বিকালে নিজের মালিকানাধীন নগরীর থিম ওমর প্লাজায় নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠক ডাকেন সংসদ সদস্য ফারুক চৌধুরী।
এ সময় ফারুক চৌধুরী ঘোষণা দেন সভায় কোনো মোবাইল ফোন সচল থাকবে না। সবাইকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে টেবিলে জমা রাখতে নির্দেশ দেন। এরপর নেতাকর্মীদের একে একে আসন্ন ভোটের পরিস্থিতি সম্পর্কে মতামত জানতে চাওয়া হয়।
সভায় নেতাকর্মীরা তাদের বক্তব্যে বলেন, চিত্রনায়িকা মাহি প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। মাহি প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় নৌকাকে জেতাতে তাদের অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে। এরই মধ্যে আবার যদি গোলাম রাব্বানী প্রার্থিতা ফিরে পান তাহলে সহজে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া কঠিন হবে। এজন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঠে ঐক্যবদ্ধভাবে দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হবে। নেতাকর্মীদের কাছ থেকে এমন বক্তব্য শোনার পর বিগড়ে যায় ফারুক চৌধুরীর মেজাজ। একপর্যায়ে কয়েকজন নেতাকর্মীকে তিনি ভর্ৎসনা করেন ও ধমকানি দেন।
নেতাকর্মীরা জানান, শেষপর্যায়ে ফারুক চৌধুরী বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাজমুল হকের ফোনে একটি কল বেজে উঠে।
কলটা ধরে নাজমুল হক বলেন, মামা আমি এমপি সাহেবের সঙ্গে একটা মিটিংয়ে আছি। সভা শেষে কথা বলব। এ কথা বলেই নাজমুল ফোনটা কেটে দেন। এটা দেখেই ভীষণভাবে ক্ষেপে ওঠেন ফারুক চৌধুরী।
তিনি দ্রুত নাজমুল হকের কাছে গিয়ে তার হাত থেকে মোবাইল ফোনটা কেড়ে নিয়ে একজন নেতাকে বলেন, তুই ফোনটা ভেঙে ফেল। ওই নেতা মোবাইল ফোন ভাঙতে ইতস্তত করলে নিজেই ফোনটা হাতে নিয়ে আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলেন ফারুক। ভাঙা ফোনটার টুকরোগুলো কুড়িয়ে টেবিলের উপর জমা করতে বলেন কয়েকজনকে। ভাঙা ফোনটা পরে নাজমুলের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়।
ফারুক চৌধুরীর এমন কাণ্ড দেখে হতবাক হন উপস্থিত নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে ভেঙে চুরমার হওয়া মোবাইল ফোনটা নিয়ে নাজমুল সভাস্থল ত্যাগ করেন। তার দেখাদেখি উপস্থিত অনেক নেতাকর্মী এমপির সভা ছেড়ে বেরিয়ে চলে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুল হক বলেন, এ ঘটনায় আমি খুব অপমানিত বোধ করছি। ঘটনার সময় গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র অয়েজুদ্দিন বিশ্বাস মামা আমাকে ফোন করেছিলেন। এ কারণে আমি ফোনটা রিসিভ করেছিলাম। আমি ফোনটা ধরে শুধু বলেছি, মামা আমি পরে আপনাকে ফোন করছি। এরই মধ্যে এমপি সাহেব ফোনটা নিয়ে ভেঙে দিলেন। আমি আর কী বলতে পারি।
এদিকে নাজমুলের মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলার কিছুক্ষণ পর ফারুক চৌধুরী নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, নাজমুলের ফোনটা তো ভেঙে ফেললাম রাগ করে। তোমরা কে আছো নাজমুলকে একটা নতুন ফোন কিনে দিতে পারবা হাত তুলো। এ সময় গোদাগাড়ী পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন হাত তুলে বলেন আমি কিনে দেব। এরপর তারা নাজমুলকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।
ঘটনার সময় উপস্থিত গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, একটি বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। এমপির এমন আচরণে আমরা খুবই মর্মাহত ও বিব্রত। নাজমুল একজন নিরীহ মানুষ। স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এলাকায় ঘটনাটি জানাজানি হয়েছে। সবার মুখে মুখে এমপির এমন কাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। আসন্ন নির্বাচনে এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছি।
অন্যদিকে রাজশাহী-১ আসনে বিএনএমের প্রার্থী শামসুজ্জোহা বাবু বলেন, যারা মিটিংয়ে ছিলেন তাদের কাছ থেকে ঘটনাটি আমি শুনেছি। এটা গোদাগাড়ীতে সবাই জেনেছেন। একজন এমপির কাছ থেকে এমন আচরণ কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।
ঘটনার বিষয়ে জানতে ওমর ফারুক চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়। তবে বরাবরের মতো তিনি ফোন ধরেননি। ফলে তার মতামত পাওয়া সম্ভব হয়নি।