২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০২:০৪:০২ অপরাহ্ন
বিবিএসের তথ্য বলছে স্বস্তি ফিরছে খাদ্যপণ্যে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০২-২০২৪
বিবিএসের তথ্য বলছে স্বস্তি ফিরছে খাদ্যপণ্যে

নতুন সরকারের প্রথম মাসেই খাদ্য খাতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সংস্থাটি বলছে, মাছ, মাংস, চাল, ডাল, ডিম, দুধ ও সবজিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে। তবে সরজমিন সবজির বাজার দাম কমার চিত্র দেখা গেলেও মাংস ও ডিমের বাজার ভিন্ন বরং গরুর মাংস কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে। আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর মূল্যস্ফীতি কমিয়ে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেয়ার ওপর জোর দিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে পণ্য পরিবহনে সিন্ডিকেট ভাঙার কড়া নির্দেশনা রয়েছে। সেই সঙ্গে সড়কে পণ্যবাহী যানবাহনে চাঁদাবাজির বিষয়ে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে খাদ্য খাতে।

বিবিএসের জানুয়ারি মাসের ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মাসভিত্তিক খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি কমে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ হয়েছে, গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে তা ছিল ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। সিপিআই প্রতিবেদনে বলা হয়, মাছ, মাংস, চাল, ডাল, ডিম, দুধ ও সবজিতেও মূল্যস্ফীতি কমেছে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে সবজিতে মূল্যস্ফীতি কমার চিত্র দেখা যায়। শীতের ভরা মৌসুমে চড়া থাকা সবজির দাম জানুয়ারি মাসে এসে সামান্য কমেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লাউ, শিম, মুলা, শালগম প্রতি কেজি ও এবং ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার মধ্যে। গত সপ্তাহেও তা ১০-২০ টাকা বেশি দামে কিনতে হয়েছে। এর মধ্যে প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি আকারভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া আলুর কেজি ৪০ টাকা, বেগুন ৬০-৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, টমেটো, গাজর ও শসার কেজি ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা কেজি দরে কিনছে ভোক্তরা। শান্তিনগর বাজারের সবজি বিক্রেতা আবুল কাশেম ভোরের কাগজকে বলেন, গত মাসের শেষ থেকে সবজির দাম একটু একটু করে কমেছে। গত কয়েক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি কমেছে আলুর দাম। এছাড়া প্রায় সব সবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

বিবিএস মাংস ও ডিমে কিছুটা দাম কমার তথ্য দিলেও বাজারের চিত্র ভিন্ন। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকা পর্যন্ত নামলেও ভোটের পর তা ৭০০ টাকায় কিনতে হয় ক্রেতাদের। আর এই সপ্তাহে কিনতে হচ্ছে ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায়। এ বিষয়ে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মুর্তজা বলেন, বাজারে গরুর সরবরাহ কম। রোজা ও কোরবানি সামনে রেখে খামারিরা গরু বিক্রি কমিয়েছেন। তাই দাম বাড়ছে।

এদিকে ডিমের সঙ্গে ব্রয়লার মুরগির দামও চড়া। পাইকারিতে প্রতি হালি বাদামি ডিম ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও খুচরা দোকানে প্রতি হালি ডিমের দাম ৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা দরে।

শতক পেরিয়ে যাওয়া পেঁয়াজের দাম এখনো কমেনি। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। আদা ও রসুনের দামও চড়া, বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা দরে। প্রতি কেজি চিনি ১৫০ টাকা, ছোলা ১২০ টাকা এবং মসুর ডাল ১২০-১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বিবিএসের প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, জানুয়ারিতে খাদ্য ছাড়া অন্য কোনো খাতে মূল্যস্ফীতি কমেনি। অন্য প্রায় সব খাতে আগের দুই মাসে (নভেম্বর-ডিসেম্বর) মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও জানুয়ারিতে তা ফের বেড়েছে। জানুয়ারিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে। নভেম্বরে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ, জানুয়ারিতে তা বেড়ে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশে উঠেছে।

বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, এবার গ্রামের চেয়ে শহর এলাকায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। জানুয়ারিতে শহর এলাকায় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশে। ডিসেম্বরে তা ছিল ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭০ শতাংশে, যা ডিসেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। জানুয়ারিতে শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ হয়েছে। গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৪১ শতাংশে নেমেছে, যা ডিসেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ।


শেয়ার করুন