রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী তিন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাওয়ায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা কমে গেছে। প্রার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় এরই মধ্যে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে কার কার মধ্যে মুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হতে পারে। এখন পর্যন্ত মাঠের যে চিত্র তাতে এবারের নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর সাথে মুল লড়াই হতে পারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম প্রার্থী শামসুজ্জাহা বাবুর।
এই আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী রয়েছেন তিনবারের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। আর বিএনএম এর প্রার্থী শামসুজ্জোহা বাবু। রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রবীণ নেতা ওমর ফারুকের সাথে একেবারেই নবীন শামসুজ্জোহা বাবু। ওমর ফারুক চৌধুরী নির্বাচনী অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, অন্যদিকে প্রথমবারের মত ভোটের মাঠে অংশ নিচ্ছেন নবীন রাজনৈতিক দলের এই নবীন নেতা। তবে, বেশ কিছু কারণে শামসুজ্জোহা বাবু এবারের নির্বাচনে চমক দেখাতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে মনোনয়ন বাতিলের পর আপিলেও টিকতে পারেননি রাজশাহী- ১ আসনের আওয়ামীলীগের তিন বিদ্রোহী প্রার্থী। এর মধ্যে সবশেষ মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আয়েশা আখতার জাহান ডালিয়ার। তিনি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সহধর্মীনি। শুক্রবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনে আপিল শুনানি শেষে আয়েশা আখতার জাহান ডালিয়ার প্রার্থীতা বাতিলের আদেশ বহাল রাখা হয়। এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর যাচাই বাছাই শেষে ভোটারদের নমুনা স্বাক্ষর ও তথ্যের গড়মিল থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটানিং কর্মকর্তা। এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত দুই নেতা আখতারুজ্জামান আখতার ও গোলাম রাব্বানী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন কমিশনে মনোনয় জমা দিলেও গত ৩ ডিসেম্বর জেলা রিটানিং অফিসারের কার্যালয় থেকে প্রার্থীতা বাতিল হয় তাদেরও। পরে গোলাম রাব্বানী প্রার্থীতা ফেরত পান।
পরে ইসিতে আপিল আবেদন করলে গত ১৩ ডিসেম্বর শুনানিতে তাদের দুজনেরেই প্রার্থীতা বাতিল করে দেন। এই দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীই হাইকের্টে গেছেন। গত ৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মহিরও প্রার্থীতা বতিল করে রাজশাহী জেলা রিটানিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। পরে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে আপিল আবেদন করলে গত ১১ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন মাহির প্রার্থীতা বৈধ ঘোষাণা করা হয়। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে, গোদাগাড়ী-তানোরের রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের বিরোধ ওমর ফারুক চৌধুরীর সাথে গোলাম রাব্বানী ও আক্তারুজ্জামানের। তানোরে রাব্বানীর নিজস্ব বলয় রয়েছে। অন্যদিকে গোদাগাড়ীতে রয়েছে আক্তারুজ্জামানের নিজস্ব লোকবল। তারা বছরের পর বছর ধরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ফারুক চৌধুরীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে চলছেন।
এবারের নির্বাচনে এই দুই প্রার্থীর যেকোন একজন মাঠে প্রার্থী হিসেবে থাকলে ওমর ফারুক চৌধুরীর বিপক্ষে নিজস্ব অবস্থান দেখাতে পারতেন। এ আসনে ডালিয়ার নিজস্ব তেমন ভোটব্যাংক না থাকলেও এমপি বিরোধী জনমতকে তিনি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছিলেন। তাদের তিনজনেরই মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাওয়ায় আলোচনায় উঠে এসেছেন বিএনএম এর প্রার্থী শামসুজ্জোহা বাবু। এবারের নির্বাচনে এখানকার প্রার্থীদের মধ্যে সব থেকে কম বয়সি প্রার্থী শামসুজ্জোহা বাবু। এত কম বয়সে একটা দলের মনোনয়ন পেয়েই তিনি চমক দেখিয়েছেন। বিএনএম প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গোদাগাড়ী তানোরে ব্যাপক রাজনৈতিক অবস্থান তৈরী করার চেষ্টা করেন তিনি। প্রথমদিকে মনুষের তেমন সাড়া না পেলেও দিন যত যাচ্ছে বাবু তার অবস্থান শক্ত করছেন। এরই মধ্যে বাবু বিএনএমএর গোদাগাড়ী উপজেলা সভাপতি ছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, দলীয় মনোনয়ন জমা দেয়ার পর থেকে বাবু ইউনিয়নে, ইউনিয়নে গিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরছেন। তিনি বলছেন, দিন বদলের অঙ্গিকার নিয়ে রাজনীতি শুর করেছেন।
যারা দীর্ঘদিনের অসঙ্গতি থেকে মুক্তি চান, নতুন পথের খোঁজ করছেন তাদের প্রার্থী হয়ে মাঠে থাকতে চান। তার এই কথায় অনেকেই আস্থা রাখতে চাচ্ছেন। পনেরো বছর ধরে সংসদ সদস্য থাকা ওমর ফারুককে যারা অপছন্দ করছেন তারা বাবুকে আশ^স্ত করছেন। পাশে থাকতে চাইছেন। বিশেষ করে বাবু নিজে তরুণ ভোটার হওয়ায় তরুণদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ তার সাথে যোগ দিয়েছেন। বাবু স্থানীয় একটি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং দীর্ঘদিন ধরে একটি ক্লিনিক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত থাকায় সাধারণ মানুষের সাথে তার যে যোগাযোগ সেটিকে কাজে লাগাতে চাচ্ছেন। এদিকে, সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানাগেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী, আক্তারুজ্জামান ও ডালিয়া ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় না থাকলে তাদের অনুসারিরা ফারুক চৌধুরীর পক্ষে থাকার সম্ভাবনা একবারেই কম।
এক্ষেত্রে তারা বিএনএম প্রার্থী বাবুর প্রতি সমর্থন জানানোর সম্ভাবনাই বেশি। এসব বিশ্লেষন করে এবং গত কয়েকদিনের মাঠের চিত্র দেখে স্থানীয়রা বলছেন, রাজশাহী-১ আসনে বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে এবারে বাবু চমক দেখাতে পারেন। এই আসনের আরেক প্রার্থী রয়েছেন ঢাকাই সিনামার নায়িকা মাহিয়া মাহি। তিনি ইসিতে আবেদনের পর তার মনোনয়ন ফিরে পেয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি মাঠে নেমেছেন।
এলাকার মানুষের কাছে একেবারেই নতুন হওয়ায় স্থানীয়রা তাকে কতটা কাছে টানবে এটা দেখার জন্য আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। এসব প্রার্থী ছাড়াও এই আসনে ভোটের মাঠে রয়েছেন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী শামসুদ্দিন মন্ডল, এনপিপির নুরুন্নেসা, তৃণমূল বিএনপির জামাল খান দুদু, বিএনএফের আল-সাআদ ও মুক্তিজোটের বশির আহমেদ।