২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:২২:০২ অপরাহ্ন
যোগাযোগে বিপ্লবের বছর
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-১২-২০২৩
যোগাযোগে বিপ্লবের বছর

মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু টানেল, পদ্মা সেতুতে রেল ও দেড়শ’ সেতু 

যোগাযোগ বিপ্লবের বছর ছিল ২০২৩ সাল। যোগাযোগ অবকাঠামোর বেশিরভাগ মেগা প্রকল্প এ বছর বাস্তবায়িত হয়েছে। মেট্রোরেল, নদীর তলদেশে টানেল, ১৪ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ ও পদ্মা রেল সংযোগসহ বর্তমান সরকারের বেশিরভাগ মেগা প্রকল্প চলতি বছরেই শেষ হয়েছে। এর ফলে বদলে গেছে দেশের সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ। এ ছাড়া সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনের জন্য চলতি বছরে একসঙ্গে দেড়শ সেতু চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত উড়াল-পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ শুরু এবং বাস চলাচলের পৃথক লেন বিআরটি’র নির্মাণ কাজও শেষ পর্যায়ে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সড়ক যোগাযোগে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। 

তাই দুই ঘণ্টার পথ এখন মাত্র ৩০ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিলে আসা যাচ্ছে মেট্রোরেল সার্ভিসে। যা গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া গত ২৮ অক্টোবর চালু করা হয় আরেক মেগা প্রকল্প চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশের টানেল। যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে

বাংলাদেশেই প্রথম। গত ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ। এই রেলপথের ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে হাতি চলাচলের বিশেষ পথ। এর আগেই গত ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে মাওয়ার পদ্মাসেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত চালু করা হয় পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের একটি অংশ। পাশাপাশি সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত উড়াল-পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে গত ৪ নভেম্বর। যা শেষ হবে ২০৩০ সালে। রাজধানীর পূর্বাচলে নির্মাণ করা হয়েছে ১৪ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে। গত ১৪ নভেম্বর এটিও আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া গাজীপুর-বিমানবন্দর সড়কে বাস চলাচলের পৃথক লেন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)’র কাজও শেষ পর্যায়ে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে দেশের সড়ক ও রেলপথের চিত্র বদলে গেছে অনেকটাই। যা বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় মাইলফলক বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী জানান, ‘সারাদেশের সড়ক ও মহাসড়কের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনের জন্য এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গত ৪ নভেম্বর এমআরটি লাইন ৬’র আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ ও ২৮ অক্টোবর সেতু বিভাগের কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া সারাদেশের সড়ক ও মহাসড়কের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনের জন্য গত ১৯ অক্টোবর ১৪০ সেতু ও ১৪টি ওভারপাস উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে দেশের যোগাযোগ অবকাঠামোর বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে বলে জানান তিনি। 

মেট্রোরেল ॥ রাজধানীর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল সার্ভিস গত ৪ নভেম্বর চালু হয়েছে। এই অংশটুকু চালুর ফলে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলে আসতে সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। প্রথমদিকে শুধু আগারগাঁও-ফার্মগেট-মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল করছে মেট্রোরেল। এই লাইনে মোট সাতটি স্টেশন পর্যায়ক্রমে চালু হবে। দেশের প্রথম মেট্রোরেল রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ম্যাস র‌্যাপিড ট্র্যানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ম্যাস ট্র্যানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।


উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত গত বছর ২৮ ডিসেম্বর  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত অংশটি ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকা মহানগরী ও পার্শ¦বর্তী এলাকার যানজট নিরসনে এভাবে উড়াল ও পাতালপথের সমন্বয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ছয়টি মেট্রোরেল। ১২৮ দশমিক ৭৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে পুরো রেলপথ। এর মধ্যে ৬৭ দশমিক ৫৬৯ কিলোমিটার হবে উড়াল পথে এবং ৬১ দশমিক ১৭২ কিলোমিটার হবে মাটির নিচ দিয়ে। ২০৩০ সালের মধ্যে ছয়টি মেট্রোরেল নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। 

এর মধ্যে দ্বিতীয় মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-১। ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি নির্মাণ করা হবে দুটি পথে। এর মধ্যে উত্তরা বিমান বন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার হবে মাটির নিচ দিয়ে (পাতাল)। এ ছাড়া গুলশানের নতুন বাজার থেকে পূর্বাচলের পিতলগঞ্জ পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার হবে উড়াল (এলিভেটেড) পথে। গত ২ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরে দেশের প্রথম এই পাতাল মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তৃতীয় মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৫ নর্দার্ন রুট। রাজধানীর সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত উড়াল ও পাতাল পথের সমন্বয়ে এটি হবে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ।


নভেম্বর মাসেই এই মেট্রোরেলের নির্মাণ শুরু  হয়েছে। চতুর্থ মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৫ সাউদার্ন (দক্ষিণ) নির্মাণ হবে গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি রুট। পঞ্চম মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-২ রুট। উড়াল ও পাতাল পথের সমন্বয়ে গাবতলী থেকে কাঁচপুর সেতু হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে এই রেলপথ। ষষ্ঠ মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৪ উড়ালপথে নির্মাণ করা হবে এই মেট্রোরেল। রাজধানীর কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে রেলপথটি।

কর্ণফুলী টানেল ॥ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ১৮ থেকে ৩১ মিটার তলদেশে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’। গত ২৮ অক্টোবর যানবাহন চলাচলের জন্য টানেলটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরের দিন গত ২৯ অক্টোবর থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় এই টানেল। দেশের প্রথম এ সুড়ঙ্গপথ নির্মাণ করেছে চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) লিমিটেড। চীনের অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ বলেন, ‘উদ্বোধনের পরের দিন থেকেই টানেল দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। টানেলে নিরাপত্তায় ১০০টির বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। টানেলে চলাচলকারী গাড়ির গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। পায়ে হেঁটে টানেল পার হওয়া যাবে না। একইভাবে মোটরসাইকেল এবং তিন চাকার যানবাহনও চলাচল করবে না টানেল দিয়ে। নির্ধারিত ওজনের বেশি ভারী যানবাহন এ টানেল দিয়ে চলতে দেওয়া হয় না। এজন্য টানেলের প্রবেশমুখে নির্মাণ করা হয়েছে ওজন স্কেল।’ 

প্রকল্প সূত্র জানায়, চীনের সাংহাই শহরের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এই টানেলটি নির্মাণ করা হয়েছে। টানেলের এক প্রান্তে চট্টগ্রাম শহর। অপর প্রান্তে রয়েছে আনোয়ারা উপজেলা। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য তিন দশমিক ৩২ কিলোমিটার। চার লেন বিশিষ্ট দুটি টিউবের প্রতিটির দৈর্ঘ্য দুই দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। 

মূল টানেলের পশ্চিম ও পূর্বপ্রান্তে পাঁচ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা দিয়েছে চীন সরকার। বাকি টাকা ব্যয় করেছে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দেড়শ সেতু ॥ সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কে নির্বিঘেœ যানবাহন চলাচলের জন্য নির্মাণ হচ্ছে বিভিন্ন যোগাযোগ অবকাঠামো। এর অংশ হিসেবে গত ১৯ অক্টোবর রাজধানীর তেজগাঁও সড়ক ভবনে সারাদেশের ১৪০টি সেতু ও ১৪টি ওভারপাস এবং ভেহিক্যাল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি) উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব সেতু ও ওভারপাস দেশের আটটি বিভাগের ৩৭ জেলায় নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৬টি সেতু, ঢাকা বিভাগে ২৯ সেতু, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৬টি সেতু, রাজশাহী বিভাগে ২২টি সেতু ও আটটি ওভারপাস, খুলনা বিভাগে ১০টি সেতু, বরিশাল বিভাগে আটটি সেতু, রংপুর বিভাগে আটটি সেতু ও ছয়টি ওভারপাস এবং সিলেট বিভাগে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে বলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)’র কর্মকর্তারা জানান।


এ ছাড়া সারাদেশের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে চলতি বছর থেকে। গত ১৯ অক্টোবর এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা এবং দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি হয়েছে তাদের প্রত্যেককে তিন লাখ টাকা সহায়তা প্রদান করা হবে। 

এটি একটি চলমান কার্যক্রম। প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনা তহবিল ফান্ড থেকে এই সহায়তা প্রদান করবে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ। 

বিআরটি-৩ ॥ গাজীপুর থেকে উত্তরা বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে বাস চলাচলের পৃথক লেনসহ নির্মাণ করা হচ্ছে বাস র‌্যাপিড ট্র্যানজিট (বিআরটি) প্রকল্পটি। এ পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের ৯১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। গাজীপুর শিববাড়ি থেকে উত্তরা বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বিআরটি (বাস চলাচলের পৃথক লেন) যুক্ত এই সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। পুরো লাইনে ২৫টি বিআরটি স্টেশন থাকবে এবং এ লাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় চার লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। 

প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট (বিআরটি, গাজীপুর-বিমানবন্দর) অনুমোদন করে সরকার। এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত করিডোরের ৬টি ইন্টারসেকশনে গ্রেড সেপারেশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং এজন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে ছয়টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। এয়ারপোর্ট ইন্টারসেকশনে উত্তর ও দক্ষিণগামী যানবাহনের চলাচল নির্বিঘœ করতে রাস্তার উভয়পাশে দুটি পৃথক ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। এই অংশে বিআরটি স্টেশনটি দুটি ফ্লাইওভারের মধ্যবর্তী স্থানে নির্মিত হবে এবং বিআরটি বাসসমূহের জন্যে ইউ-টার্নের ব্যবস্থা থাকবে। 

পথচারীদের রাস্তা পারাপার নিরাপদ এবং নির্বিঘœ করতে এ প্রকল্পের আওতায় হাজী ক্যাম্প থেকে বিমানবন্দর টার্মিনাল পর্যন্ত ৬২০ মিটার দীর্ঘ একটি প্রশস্ত পথচারী-পারাপার আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে এবং বিআরটি ও এমআরটি লাইন-১ এর স্টেশনসহ মোট সাতটি প্রবেশপথ থাকবে। গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত বিস্তৃত করিডোরে উভয়মুখী বিআরটি বাস চলাচলের জন্য রাস্তার মাঝখানের অংশে দুটি ডেডিকেটেড বিআরটি লেন থাকবে। এই প্রকল্পে বিআরটি করিডোর নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে উভয়পাশের সাধারণ রাস্তার লেন, ধীরগতি যানবাহন চলাচলের পৃথক লেন ও পথচারী চলাচলের ফুটপাতের উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। 

প্রকল্পের আওতায় ছয় লেনের জসিমউদ্দিন ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দুটি লেন বিআরটি এর জন্য নির্ধারিত। জসিমউদ্দিন সড়কের ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে ইউ-টার্ন নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। বিআরটি’র প্রতিটি স্টেশনে প্রবেশ করতে ও বের হতে ফুটওভার ব্রিজ, স্বয়ংক্রিয় চলমান সিঁড়ি, লিফট ও সাধারণ সিঁড়ির ব্যবস্থা থাকবে। উত্তরা হাউস বিল্ডিং থেকে চেরাগ আলী পর্যন্ত চার দশমিক পাঁচ কিলোমিটার অংশটি হবে এলিভেটেড (উড়াল)। এই সড়কের দুটি বিআরটি লেন ও চারটি সাধারণ লেন থাকবে। এই ফ্লাইওভারটির ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এটি নির্মাণ করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে ফ্লাইওভারটি গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

পূর্বাচলে ১৪ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে ॥ রাজধানীর সঙ্গে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সংযোগ করতে পূর্বাচলে নির্মাণ করা হচ্ছে সাড়ে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৪ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে (বিরতিহীন সড়ক)। এটি হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় এক্সপ্রেসওয়ে। রাজধানীর প্রগতি সরণি ও বিমান বন্দর সড়কের সঙ্গে পূর্বের ইস্টার্ন বাইপাসকে সংযুক্ত করবে এই সড়কটি। সাড়ে ১২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে রাজধানীর কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে ১৪ লেন বিশিষ্ট। এর মধ্যে আট লেন সড়ক হবে এক্সপ্রেসওয়ে। বাকি ছয় লেন সড়ক হবে স্থানীয় যানবাহন চলাচলের জন্য সার্ভিস রোড।


এ ছাড়া বালু নদী থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সড়ক হবে ১২ লেনের। এর মধ্যে ছয় লেন সড়ক হবে এক্সপ্রেসওয়ে। বাকি ছয় লেন হবে সার্ভিস রোড। এ পর্যন্ত প্রকল্পের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ‘কুড়িল-পূর্বাচল লিঙ্ক রোডের উভয়পার্শ্বে ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এটি বাস্তবায়ন করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। নির্মাণ কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। গত ১৪ নভেম্বর এই এক্সপ্রেসওয়ের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক এম এম এহসান জামিল জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৩০০ ফুট সড়কটি এক্সপ্রেসওয়ে করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১০০ ফুট খাল খনন, ১৩টি আর্চ ব্রিজ, পাঁচটি এ্যাটগ্রেড ইন্টারসেকশন, বিদ্যমান ছয়টি ব্রিজ প্রশস্ত করা, কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত ১৪ লেন সড়ক উন্নয়ন, বালু নদী থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত ১২ লেন উন্নয়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি এডি-৮ খাল, বোয়ালিয়া খাল ও ডুমনি খাল উন্নয়ন হচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাউন্ডারী ওয়াল, ইউড্রেন নির্মাণ, জিআরপি পাইপ লাইন স্থাপন ও নিকুঞ্জ লেক উন্নয়নের কাজ শেষ হয়েছে।


শেয়ার করুন