০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:২৯:২৮ অপরাহ্ন
রাজশাহী-১ আসনে দুই নারীসহ ৫ হেভিওয়েট প্রার্থী
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-১২-২০২৩
রাজশাহী-১ আসনে দুই নারীসহ ৫ হেভিওয়েট প্রার্থী

রাজশাহী- (তানোর গোদাগাড়ী আসনের সংসদ নির্বাচনে এবার সর্বোচ্চ প্রার্থী সংখ্যা রয়েছে ১১ জন। তাঁদের মধ্যে ৫জনই হলেন হেভিওয়েট প্রার্থী। আর বাকি ৬ জন হলেন রাজনীতিতে প্রায় নতুন মুখ। সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন ৫ জনের মধ্যেই লড়াই হবে। বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি টানা ১৫ বছর ধরে এখানে এমপি থাকলেও তাঁর নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দলের মধ্যেই তিনি অনেকটা কোণঠাসা হয়ে আছেন। ফলে স্বতন্ত্র চারজন প্রার্থীর সঙ্গে তাঁকে লড়াই করতে হচ্ছে। তাঁরা চারজন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে পাননি। ফলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত তাঁরা।


যাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে ধরা হচ্ছে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মন্ডুমালা পৌর সভার সাবেক মেয়র গোলাম রাব্বানীকে। এর পরে রয়েছেন চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সাবেক স্ত্রী আয়েশা আক্তার ডালিয়া এবং দেউপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান আক্তার। কাকডাকা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ছুটে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। এছাড়াও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী শামসুজ্জোহাও বেশ জোরে-সরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ৫ জনের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলেও মনে করছেন অনেকেই। এতে করে এ আসনে ভোটের জয়-পরাজয় হবে খুব অল্প ব্যবধানে। এমনকি ৭০-৮০ হাজার ভোট পেলেও জয় নিশ্চিত হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকেই।


রাজশাহীর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে মতে, রাজশাহী- ১(তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে মোট ১১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল। পরবর্তিতে উচ্চ আদালত থেকে তাঁরা চারজনেরই মনোনয়নপত্র বৈধ বলে রায় দেওয়া হয়। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিপক্ষের ভোটগুলো চার ভাগে ভাগাভাগি হয়ে যাবে। তার পরেও এখানে নৌকার জয় পাওয়া নিয়ে অনিশ্চিয়তায় রয়েছে। দীর্ঘ সময়ে ওমর ফারুক চৌধুরী যেমন জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন, তেমনি নিজস্ব কিছু কর্মী বাহিনীও তৈরি করেছেন।


এ অবস্থায় ফারুক চৌধুরীকে ঠেকাতে স্বতন্ত্র চার প্রার্থীর মধ্যে সমঝোতার কথা ভাবছেন দলেরই কেউ কেউ। তবে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি কারও সঙ্গেই সমঝোতা করবেন না বলে সাংবাদিকদের স্রেফ জানিয়ে দিয়েছেন। আলাপ-আলোচনায় বসলে অন্য তিন প্রার্থী চিন্তা-ভাবনা করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।


এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীবিরোধী হিসেবে পরিচিত তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মণ্ডুমালা পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম রাব্বানীও ভোটের মাঠে শক্ত প্রতিন্দ্বদ্বী। রাব্বানী আশা করছেন, বর্তমান এমপিকে ঠেকাতে তাঁদের চারজনের মধ্যে একটা সমঝোতা হবে। তিনি বলেন, ‘সবাই হয়তো প্রার্থী থাকবেন না। আগামী বৃহস্পতিবার একটা কিছু হতে পারে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারলে যে ভোট পড়বে, তার ৭০ ভাগই আমি একাই পাব।’


চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকে ভোটের মাঠে ছুটে বেড়াচ্ছেন। হাটে, ঘাটে, মাঠে থেকে শুরু করে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি পর্যন্ত যাচ্ছেন তিনি। সবখানে তিনি নৌকার প্রার্থী ফারুক চৌধুরীর বিভিন্ন বিতির্কিত কর্মকাণ্ড ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে জোরে-সরে কথা বলছেন। ফলে যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই ভালো সাড়া পাচ্ছেন ঢাকাই সিনেমার এ চিত্রনায়িকা। এই কয়েক দিনের প্রচারেই ভোটের মাঠে তিনি অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন।


জানতে চাইলে মাহিয়া মাহি বলেন, ‘আমি যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই ভালো সাড়া পাচ্ছি। ইনশা আল্লাহ আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’


এ আসনে নির্বাচন করতে দীর্ঘ সময় ধরেই ভোটারদের কাছাকাছি থেকেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সাবেক স্ত্রী আয়েশা আক্তার জাহান ডালিয়া। গোদাগাড়ী উপজেলায় তাঁর বাবার বাড়ি। দুই উপজেলায় তাঁর নিজস্ব কর্মী-সমর্থকও আছে। প্রচার-প্রচারণা শুরুর এক সপ্তাহ পর ভোটের মাঠে এসে তিনি ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন।


ভোটের মাঠে স্বতন্ত্রদের মধ্যে সমঝোতার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি এখনো কোনো প্রস্তাব পাইনি। আমরা সবাই তো প্রতীক পেয়েছি। যে যার মতো ভোটের কাজ করছি। আমিও তো এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে আছি। মানুষ আমাকে ভালোবাসে। দেখা যাক, সামনে কী হয়।’


এ আসনের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান আক্তারও নিজের মতো করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনিও বর্তমান এমপি ফারুকের বিরোধী। তাঁকেও আসনটির শক্ত প্রদ্বিন্দ্বিী হিসেবে মনে করা হচ্ছে। গোদাগাড়ীর দেউপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত বছর অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়েছিলেন। দলীয় প্রার্থীর কাছে হেরেছিলেন মাত্র ৩২ ভোটে।


আখতারুজ্জামান বলেন, ‘দেখতে হবে প্রস্তাবটা কোন জায়গা থেকে আসছে। আমি যাদের নেতা মানি, সেই জায়গা থেকে যদি বসার প্রস্তাব আসে, তাহলে তো বসতে আপত্তি নেই। বসার পরে কী সিদ্ধান্ত হবে সেটা পরের কথা। এখন ভোটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’


রাজশাহী-১ জাতীয় সংসদের ৫২ তম আসন। এ আসনের তানোর উপজেলায় পুরুষ ভোটার ৯০ হাজার ১৪৩ জন, আর নারী ভোটার ৯০ হাজার ৮৭০ জন। গোদাগাড়ী উপজেলায় পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৪ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ৪৮ হাজার ২৭০ জন।


শেয়ার করুন