২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৫:১২:১৫ পূর্বাহ্ন
রাজশাহী-১ আসনে নৌকাকে তিনদিক থেকে ঘিরে ধরেছে আ.লীগেরই তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-১২-২০২৩
রাজশাহী-১ আসনে নৌকাকে তিনদিক থেকে ঘিরে ধরেছে আ.লীগেরই তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনটি অন্যান্য আসনের চেয়ে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে। রাজশাহীর সংসদীয় ৬টি আসনের মধ্যে এই আসনটিতে যেমন প্রার্থী সংখ্যা যেমন বেশি, তেমন রয়েছে আলোচনা-সমালোচনাও। এ আসনে ১১ জন প্রার্থীদের মধ্যে বড় চমক একজন চলচিত্র নায়িকা ভোটে অংশ নিয়েছেন। যার কারণে এ আসনের দিকে নজর সবার। অনেক আগে থেকেই এ আসনটির মাঠ গরম করে রেখেছেন প্রার্থীরা।


বিশেষ করে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে তিনজনকে ভোটে অংশ নিতে আদালত পর্যন্ত দৌঁড়াতে হয়েছে। আবার কেউ অনেক দেরিতে প্রার্থীতা ফেরত পেয়েছেন। তারপরও সব প্রার্থী আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন জয়ের মালা গলায় পরায় আশায়। তবে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের শক্তিশালি স্বতন্ত্র চার প্রার্থীর মধ্যে একজন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এখনো মাঠে আছেন শক্তিশালি তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী। বলা যায়, এ আসনে নৌকার প্রার্থীকে তিনদিক থেকে ঘিরে ধরেছে এসব স্বতন্ত্র তিন প্রার্থী। তবে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর চেয়ে এখনো নৌকার পালে বাতাস বেশি বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।


রাজশাহী-১ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী (নৌকা), মাহিয়া মাহি (ট্রাক) ও গোলাম রাব্বানী (কাঁচি), বিএনএম’র শামসুজ্জোহা বাবু (নোঙর), বিএনএফের আল-সাআদ (টেলিভিশন), তৃণমূল বিএনপির জামাল খান দুদু (সোনালী আঁশ), এনপিপির নুরুন্নেসা (আম), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের বশির আহমেদ (ছড়ি), জাতীয়পার্টির শামসুদ্দীন (লাঙ্গল), আয়েশা আক্তার ডালিয়া (বেলুন), আখতারুজ্জামান আক্তার (ঈগল) প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।


গত ১৫ বছর ধরে এ আসনে রাজত্ব করেছেন বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরি। এই আসন থেকে তিনি শিল্পপ্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৫ বছরে ওমর ফারুক চৌধুরির বিরুদ্ধে শিক্ষক পেটানোসহ বিভিন্ন অভিযোগে তিনি দ্বাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাবেন না এমনটাও ধারণা করেছিলেন অনেকেই। যার কারণে এই আসনে নৌকা প্রত্যাশির সংখ্যা বেশি ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুনরায় নৌকা উঠেছে ওমর ফারুক চৌধুরির হাতেই। তিনি নৌকা পেলেও আওয়ামী লীগেরই শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী, মাহিয়া মাহি, আয়েশা আক্তার ডালিয়ার মত শক্ত প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসনটি উদ্ধার করতে হবে ফারুক চৌধুরিকে। বলা যায়, ফারুক চৌধুরির বিপরিতে তিনজন প্রার্থী অনঢ় অবস্থান নিয়েছেন।


জানা গেছে, গত ১৫ বছর ওমর ফারুক চৌধুরি এই আসনে রাজত্ব করলেও আওয়ামী লীগকে এক কাতারে আনতে পারেন নি। যার কারণে এই আসনে আওয়ামী লীগের মধ্যে সেভেনস্টার তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে ফারুক চৌধুরি মুষ্টিমেয় কিছু নেতাকর্মীদের মূল্যয়ন করার কারণে তানোর-গোদাগাড়ীতে বিগত দিনে তার বিরোধীতাকারীদের সংখ্যাই বেশি ছিল। বর্তমানও বিরোধীতাকারীর সংখ্যা একেবারে কম নয় বলেও মনে করছেন নেতাকর্মীরা। এ কারণে এবার ফারুক চৌধুরীকে জয়ী হতে হলে কাঠখড়ি পোড়াতে হবে, এমনটা বলছেন নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা।


এ আসনে আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন গোলাম রাব্বানী। এ আসনে গোলাম রাব্বানীর নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন থেকে এ আসনটি বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও পারেননি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও তিনি নৌকা প্রত্যাশি ছিলেন। কিন্তু নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ভোট করছেন তিনি। গোলাম রাব্বানী একজন হেবিওয়েট প্রার্থী বলেও মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। বর্তমান তার সাথে যোগ হয়েছে অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আক্তরুজ্জামান। আক্তার নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানীকে সমর্থন দিয়েছেন। এতে গোলাম রাব্বানীর হাত আরো শক্তিশালি হয়েছে।


আওয়ামী লীগেরই অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহি। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে তানোর গোদাগাড়ীতে আসা-যাওয়া করেছেন। মাহি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার আবেদনকারী ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নৌকা পাননি। নৌকা না পেলেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এবার মাহিকে নিয়েই মূলত এই আসনে আলোচনা-সমালোচনা বেশি হচ্ছে। মাহিকে সাধারণ মানুষ সিনেমার পর্দায় দেখেছেন। কিন্তু এবার সামনে থেকে প্রিয় নায়িকাকে দেখার আশায় লোকজন তার গণসংযোগে হাজির হচ্ছেন। মাহিকে যারা ভোট দেবেন তারা তো বটেই, যারা ভোট দিবেন না তারাও তাকে দেখার জন্য উপস্থিত হচ্ছেন গণসংযোগে।


সেই জায়গা থেকে মাহি অল্প সময়ের মধ্যে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। এখন মাঠ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে, ফারুক চৌধুরির বড় শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বি বলতে মাহি, গোলাম রাব্বানী ও ডালিয়া। ফারুক চৌধুরিকে জয়ী হতে হলে এই তিন প্রার্থীকে পেছনে ফেলে জয়ী হতে হবে। যদিও ভোটাররা বলছেন, ফারুক চৌধুরি পুনরায় এ আসনে নির্বাচিত হবেন। কারণ তিনি এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যাও বেশি। তিনি নির্বাচনী মাঠে নেমে নিজের ভুলত্রুটি স্বীকার করে ভোটারদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। যার কারণে ফারুক চৌধুরির উপর যারা ক্ষিপ্ত ছিলেন তারাও তার সাথে কাজ করছেন।


শেয়ার করুন