আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটের দিনটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে বিএনপি। এ দিন নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া ঠেকাতে শান্তিপূর্ণ পথে আগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আন্দোলনে সহিংসতা ঠেকাতে মঙ্গলবার থেকে আরও তিন দিন লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। তবে ৬ থেকে ৭ জানুয়ারি টানা দুই দিন হরতাল ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে। গত রবিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
গত ২১ ডিসেম্বর থেকে সোমবার পর্যন্ত ১০ দিন গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি করছে বিএনপি। এখন আবার নতুন করে তিন দিনের একই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। মূলত আন্দোলনে সহিংসতা ঠেকাতে এই পথে হাঁটছে দলটি।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপি বরাবর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পথে হেঁটেছে বলে দাবি করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেন, আগামীতেও সব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ থাকবে। বিএনপি মনে করে, তাদের এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে জনগণ সাড়া দেবে এবং এই সরকারের আয়োজিত আগামী ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের ভোট বর্জন করবে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, বর্জনের ঘোষণা দিলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, না করা নিয়ে বিএনপিকে নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানান গুজব ছিল। তারেক রহমানকে বাদ রেখে দলটির সিনিয়র কোনো কোনো নেতা এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেবে বলেও গুঞ্জন ওঠে। এই অবস্থায় দলীয় নেতা এবং সমমনা দলগুলোকে রাজপথে ধরে রাখা বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।
তবে সেই চ্যালেঞ্জ বিএনপি সফলতার সঙ্গে কাটিয়ে উঠতে পেরেছে বলে জানান দলটির স্থায়ী কমিটির এক নেতা। ওই নেতা বলেন, নানা চাপের মাঝেও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ৩০ নভেম্বর সঠিকভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে তারা সক্ষম হয়েছেন। এবার বিএনপির সামনে আরেকটি চ্যালেঞ্জ ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন।
বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, বিএনপিসহ ৬৩টি নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করে রাজপথে আন্দোলন করছে। ফলে আওয়ামী লীগ বেকায়দায় পড়ে দলীয় নৌকা প্রার্থী ও ডামি (স্বতন্ত্র) প্রার্থী এবং সমমনা দলের প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচন করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে করে বিএনপিসহ বিরোধী দলহীন একতরফা নির্বাচন ভোটারদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আগামী ৭ জানুয়ারির ভোট নিয়ে প্রার্থীদের মাঝেই কোনো আগ্রহ নেই। কে এমপি হবে; তা তো ঢাকা থেকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন ঘোষণা করা বাকি। ফলে সচেতন কোনো মানুষ এবার তো ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবে না।’
বিএনপি সূত্র জানায়, শত চাপের মধ্যেও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া ঠেকানোতে জোর দিচ্ছেন দলটির নেতারা। গত রবিবার ও গতকাল সোমবার সব সাংগঠনিক বিভাগের নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এ ছাড়া গত রবিবার রাতে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংগঠনিক সম্পাদক, অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে পৃথক ভার্চুয়াল বৈঠক করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বৈঠকে ভোট ঠেকাতে হরতাল-অবরোধের মতো টানা কর্মসূচি দেওয়ার পরামর্শ রাখেন কয়েক নেতা। তবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তা আমলে নেননি। দলটির নেতাদের পর্যবেক্ষণ, অন্য পক্ষ হরতাল-অবরোধে নাশকতা-সহিংসতা সৃষ্টি করে; সরকার দায় চাপায় বিএনপির ওপর।
আন্দোলন নিয়ে মূল্যায়ন করতে গিয়ে এসব বৈঠকে বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন, চলমান আন্দোলন পঞ্চাশ ভাগ ইতোমধ্যে সফল হয়েছে। আর পঁচিশ ভাগ আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে সফল করতে হবে। বাকি পঁচিশ ভাগ রাজনৈতিক ডামাডোলে সফল হয়ে যাবে।
এসব বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা আরও জানান, দলের শীর্ষ নেতার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দেশের ৯৫ শতাংশ জনগণ পরিবর্তন চায়। এসব মানুষকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে হবে। এতে করে আন্দোলনের ফসল ঘরে আনা যাবে।
নির্বাচনকে ঘিরে চলমান আন্দোলনে সমমনা দল ও জোটের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও পাশে পাচ্ছে বিএনপি। ইসলামী আন্দোলন, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ নির্বাচন বর্জন করা সব রাজনৈতিক দলও পৃথক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।