২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:১১:৩৩ অপরাহ্ন
আদালতের আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সিআইডির প্রতিবেদন
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০১-২০২৪
আদালতের আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সিআইডির প্রতিবেদন

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন ৭৬ বার সময় নিয়েও আদালতে জমা দিতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অথচ একই তদন্তের চূড়ান্ত ফরেনসিক ও হালনাগাদ অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে তুলে দিয়েছে সংস্থাটি।


মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইমের অতিরিক্ত এসপি আবদুল্লাহ ইয়াসিন আজকের পত্রিকাকে ফরেনসিক ওই প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।


রিজার্ভ চুরির এই মামলার বাদী বাংলাদেশ ব্যাংক। কাউকে সুনির্দিষ্ট আসামি না করে দায়ের হওয়া মামলাটির অভিযোগপত্র এখনো হয়নি। তার আগেই মামলার পক্ষভুক্ত প্রতিষ্ঠানের হাতে ৬৩৮ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত ফরেনসিক প্রতিবেদন এবং হালনাগাদ অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন তুলে দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও সিআইডি জানিয়েছে, আদালতের অনুমতি নিয়েই এসব প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়েছে তারা। ফিলিপাইন ও যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে চলা মামলার স্বার্থে এই তথ্যগুলো দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োজিত আইনি প্রতিষ্ঠান ‘কোজেন ওকনর’কে সরবরাহ করার কথা রয়েছে।


আদালতে অভিযোগপত্র না জমা দেওয়ার পেছনে একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ ইয়াসিন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমি কয়েক মাস আগে এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। আদালতের অনুমতি নিয়ে সব কাগজ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়েছি। আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার মতো প্রস্তুতি এখনো সম্পন্ন করতে পারিনি। এ জন্য আরও সময় লাগবে।’


২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা সুইফট পেমেন্ট পদ্ধতিতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে এই বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়। পরে বিভিন্ন সময় ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়। কিন্তু এখনো ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার ৩৯ দিন পর ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক (হিসাব ও বাজেট) জোবায়ের বিন হুদা। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি।


তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তত ১৩ জনের গাফিলতি, অবহেলা ও দায় ছিল। রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির তথ্য এক দিন পর জানতে পারলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা ২৪ দিন গোপন রাখে। ৩৩তম দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি তৎকালীন অর্থমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়।


যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গাফিলতি ও অবহেলার অভিযোগ রয়েছে, সেখানে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার আগেই কীভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক হাতে পেল? বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হককে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা আসলে আমাদের জানার কথা না। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ফাইন্যান্সিয়াল একটি ইউনিট কাজ করে, তারাই ভালো বলতে পারবে।’


সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, গত বছরের আগস্টে সিআইডিকে চিঠি দিয়ে এ ঘটনায় পুলিশের চূড়ান্ত ফরেনসিক এবং হালনাগাদ অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন চায় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইউ)। সেখানে বলা হয়, ফিলিপাইনের আদালতে চলমান মামলার স্বার্থে সেই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে চলমান মামলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োজিত আইনি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করা হবে। চিঠিটি পেয়ে সিআইডি আদালতের অনুমতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলো সরবরাহ করে।


কিন্তু যে মামলার জন্য আলামত জব্দ ও প্রতিবেদন তৈরি করা হলো, তা সেই মামলায় ব্যবহারের আগে অন্য প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ঠিক কি না, জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘দেশের স্বার্থে আদালতে অনুমতি নিয়ে পাঠালে আইনের কোনো ব্যত্যয় হওয়ার কথা না। তবে যদি চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হয়, তাহলে দেশের আদালতেও তা জমা হওয়া দরকার।’


উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলা চলছে প্রায় আট বছর ধরে। এখনো আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়নি সিআইডি। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখও পিছিয়েছে ৭৬ বার। সর্বশেষ গত ৩১ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও সেদিন তা আদালতে জমা পড়েনি। এই অবস্থায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নতুন তারিখ আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি ধার্য করেছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী।


শেয়ার করুন