দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ৩০০ আসনে ৬ লাখ নেতাকর্মী দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেওয়া ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ ক্যাম্পেইন’-এর আওতায় তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে। বিশ্ববাসীকে ‘ভোটারবিহীন’ নির্বাচন দেখাতে বিএনপি যে পরিকল্পনা করছে, তা ভেস্তে দিতে নতুন এই উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
সারাদেশে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা এ দায়িত্ব পেয়েছেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ২০০ ভোটারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে সারা দেশের ১২ কোটি ভোটারের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে। একই সঙ্গে তারা বিভিন্ন অপপ্রচারের জবাব, সরকারের ১৫ বছরের উন্নয়নের চিত্র এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বার্তা প্রত্যেক ভোটারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছেন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ’ কর্মশালায় মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। পরে ২০০ মাস্টার ট্রেইনারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই ২০০ মাস্টার ট্রেইনার সারা দেশে ৬ লাখ নেতাকর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এদের বলা হচ্ছে ভোট প্রার্থনাকর্মী বা প্রচারকর্মী। একটি আসনে যত ভোটার আছেন, তা ২০০ দিয়ে ভাগ করে মোট প্রচারকর্মী ঠিক করে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তার মানে, কোনো আসনে ৪ লাখ ভোটার থাকলে ক্যাম্পেইনার হবেন ২ হাজার। প্রত্যেক ভোটারের ঘরে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণের এই উদ্যোগকে বলা হচ্ছে ‘অফলাইন ক্যাম্পেইন’। সবার ওপরে রয়েছেন ‘মাস্টার ট্রেইনার’।
অন্যদিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৬ লাখ নেতাকর্মী সরাসরি ভোটারের মুখোমুখি হয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য তার ভাবনা কী, তা তুলে ধরছেন। তারা ভোটারদের নানা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন। পাশাপাশি বিরোধী দলের অপপ্রচারের ও পালটা বক্তব্য তুলে ধরছেন, যা ভোটারকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে বলে এই কার্যক্রমের উদ্যোক্তারা মনে করেন। এই উদ্যোগ সমন্বয়ের জন্য একজন ফোকাল পয়েন্ট নিযুক্ত করা হয়েছে। কর্মীদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে কাজ করছে কেন্দ্রীয় কল সেন্টার। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বানানো হয়েছে। সব ক্যাম্পেইনার এই অ্যাপ ব্যবহার করছেন। এখানে ভোটারদের সব তথ্য দেওয়া আছে। ভোটারের বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়া থেকে শুরু করে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট সম্পন্ন করা পর্যন্ত ভোটারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখবেন প্রচারকর্মীরা। এছাড়া এই পুরো কর্মযজ্ঞ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে সমন্বয় করছে একটি তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ দল। তাদের বিশ্বাস, এই প্রচারের ফলে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে।
গত সেপ্টেম্বরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে সারা দেশের জন্য ১২টি দল গঠন করা হয়। প্রতিটি দল গড়ে পাঁচ থেকে সাতটি সাংগঠনিক জেলার দায়িত্ব পায়। এসব জেলা থেকে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের থেকে বাছাই করে প্রচারকর্মীর তালিকা তৈরি করা হয়। এরপর তাদের ধারাবাহিকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, যারা এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যুক্ত, তাদের রাখা হয় প্রশিক্ষকদের তালিকায়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পাঁচ জন নেতা ইত্তেফাককে জানান, বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ভোটকেন্দ্রে আসতে ভোটারদের নিরুৎসাহিত করছে বিএনপি। তবে নির্বাচনে ভোটের মাঠ জুড়ে উৎসবের আমেজ ধরে রেখে বিএনপিকে সমুচিত জবাব দিতে চান ক্ষমতাসীনেরা। ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ ক্যাম্পেইন’-এর মাধ্যমে ভোটার উপস্থিতির হার যেমন বাড়বে, তেমনি বিএনপির অপপ্রচারের জবাবও দেওয়া হয়ে যাবে।