২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:৪৫:৫২ অপরাহ্ন
শহরের চেয়ে গ্রামে ভোট বেশি পড়েছে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০১-২০২৪
শহরের চেয়ে গ্রামে ভোট বেশি পড়েছে

৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত ২৯৮টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব আসনে মোট ভোটার ছিল ১১ কোটি ৮৯ লাখ ৮৯ হাজার ২৪১ জন। তাদের মধ্যে ৪ কোটি ৯৯ লাখ ৬৫ হাজার ৪৬৭ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ভোটাধিকার প্রয়োগের গড় হার ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে- শহরের তুলনায় গ্রামে ভোট পড়েছে বেশি।


উদাহরণস্বরূপ, বরিশাল-৫নং (সদর) আসনে ভোট পড়েছে ২৯ দশমিক ২ শতাংশ। একই জেলার ১নং (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে ভোট পড়েছে ৬০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সাতক্ষীরা ২নং (সদরে) আসনে ভোট পড়েছে ৩২ দশমিক ৬১ শতাংশ। একই জেলার ৩ নম্বর আসনে ভোট পড়েছে ৪৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ। কুমিল্লা-৬ নং (সদর) আসনে ভোট পড়েছে ৩৯ শতাংশ। একই জেলার ১১নং আসনে ভোট পড়েছে ৫৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। কিশোরগঞ্জ-১নং (সদর) আসনে ভোট পড়েছে ৩১ দশমিক ৪১ শতাংশ। একই জেলার ৪নং আসনে ভোট পড়েছে ৫৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। সিলেট ১নং (সদর) আসনে ভোট পড়েছে ১৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। একই জেলার ৪নং আসনে ভোট পড়েছে ৪৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। রাজশাহী ২নং (সদর) আসনে ভোট পড়েছে ২৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। একই জেলার ৪নং আসনে ভোট পড়েছে ৫৫ শতাংশ। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় নজির হচ্ছে- ঢাকার ২০টি আসনে ভোট পড়েছে ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গোপালগঞ্জের ৩টি আসনে ভোট পড়েছে গড়ে ৭৭ দশমিক ৩ শতাংশ।


এর কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোটের দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। এর সঙ্গে আগের দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্র ও শনিবার) যোগ হওয়ায় টানা তিন দিনের ছুটিতে অনেকেই গ্রামের উদ্দেশে শহর ছেড়েছিলেন। এ কারণে শহরে ভোট কম পড়েছে। দ্বিতীয়ত, শহরে বসবাসকারীদের একটি বিরাট অংশই ভাড়াটিয়া। তাদের মধ্যে যারা বাসা বদল করে অন্য এলাকায় চলে যান, তারা পুরনো ঠিকানার ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।


উপরন্তু, বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ভোট বর্জনের কর্মসূচি ছিল শহরকেন্দ্রিক। এটিও শহরে কম ভোট পড়ার পরোক্ষ কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


প্রসঙ্গত, নওগাঁ-২ আসনে একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে আগেই ভোট স্থগিত করা হয়। ময়মনসিংহ-৩ আসনে একটি কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল হওয়ায় পুরো আসনের ফলই স্থগিত করা হয়েছে।


বিভাগীয় শহরের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম জেলার ১৬ আসনে ভোট পড়েছে ৩৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। রংপুর জেলার ৬টি আসনে গড়ে ভোট পড়েছে ৩৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। খুলনা জেলার ৬টি আসনে ৪৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। বরিশাল জেলার ৬ আসনে ৪১ দশমিক ১০ শতাংশ। ময়মনসিংহ জেলায় ১১ আসনের মধ্যে ১০ আসনে গড়ে ভোট পড়েছে ৩৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এছাড়া সিলেট জেলার ৬ আসনে ভোট পড়েছে ২৯ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং রাজশাহী জেলায় ৬ আসনে ভোট পড়েছে ৩৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। এছাড়া পার্বত্য এলাকার ২১টি ভোটকেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি।


ভোটের দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ১৮ দশমিক ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে। অর্থাৎ প্রথম চার ঘণ্টায় ভোট পড়ে ২ কোটি ২০ লাখ ১৩ হাজার ৯টি। সেদিনই বেলা সাড়ে ৩টায় ইসি সচিব জানান, বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। হিসাব অনুযায়ী, তখন ভোট পড়ে ৩ কোটি ২৩ লাখ ৫ হাজার ৫৭৮টি। ভোটানুষ্ঠান শেষে ইসি জানায়, মোট ভোট পড়েছে ৪১ দশমিক ৮০ শতাংশ। ভোটের হিসাবে ৪ কোটি ৯৯ লাখ ৬৫ হাজার ৪৬৭টি। দেখা যায়, শেষ ঘণ্টায় ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। অর্থাৎ ১ কোটি ৭৬ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮৮ জন ভোটার শেষ ঘণ্টায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।


শেষ ঘণ্টায় ভোটের এ উচ্চহারের বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, বিকাল ৩টা নয়, সেটা ছিল ২টা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য। ইসি সচিব তিনটার রেজাল্ট জানিয়েছেন, এমন দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ৯৮ সংসদীয় আসনের একজন, দুইজন, তিনজন, চারজন এভাবে সবার ভোট যোগ করে এক্সেলে ফেলে দিয়ে পার্সেন্টেজটা নিজেরাই দেখে নিন।


তিনি আরও বলেন, যখন আমি ২টার সময়ে বলি তখন কোনোভাবেই এটা পুরোপুরি সঠিক হওয়ার কথা নয়। যখন চারটার সময়ে বলি এটা কোনোভাবেই সঠিক হওয়ার কথা নয়। সব চলে আসার পর যখন রাত ১০টায় বলি, তখন সঠিকটা বলা যাবে।


জানা গেছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ১ হাজার ৯৬৯ প্রার্থীর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, প্রদত্ত যে পরিমাণ ভোট পড়েছে, তার আট ভাগের এক ভাগ ভোটের চেয়ে কম ভোট পেলে সেই প্রার্থী জামানত হারান।


শেয়ার করুন