রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বিদায়ী শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশীপের টাকায় ভাগ বসাচ্ছে ছাত্রলীগ। বিদায় সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার নামে প্রায় এক হাজারের বেশি বিদায়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোর করে মাথাপিঁছু এক হাজার টাকা করে আদায় করছে পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগ। এভাবে প্রায় ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
পলিটেকনিক কর্তৃপক্ষ বলেছে, এই বিদায় সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। এর আগে কখনও বিদায়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়নি। ছাত্রলীগও টাকা তোলা কিংবা অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্বে থাকেনি। এবার ছাত্রলীগের এ ধরনের কার্যক্রম দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকেরাই। আর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাধারণ এক শিক্ষার্থী বলেছেন, এই টাকায় কোন অনুষ্ঠান হবে না। পলিটেকনিক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেবেন।
পলিটেকনিক সূত্রে জানা গেছে, আটটি বিভাগের অষ্টম পর্বের বিদায়ী শিক্ষার্থীদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং (ইন্টার্নশীপ) ভাতা ও জামানতের টাকা দেওয়া শুরু হয়েছে সোমবার থেকে। এরমধ্যে সোমবার সকালে সিভিল, দুপুরে পাওয়ার এবং বিকালে কম্পিউটার বিভাগের বিদায়ী শিক্ষার্থীদের টাকা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রোমেডিক্যাল এবং বুধবার মেকানিক্যাল, ইলেক্ট্রনিক্স ও মেকাট্রোনিক্স বিভাগের টাকা দেওয়ার কথা। এই আট বিভাগের প্রায় এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর সবাই ইন্টার্নশীপের ১৩ হাজার ও জামানত রাখা ৪০০ টাকা করে ফেরত পাচ্ছেন। তবে তারা শেষ পর্যন্ত ১২ হাজার ২৫০ টাকা পাচ্ছেন।
দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সম্মেলন কক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের টাকা দেওয়া হচ্ছে। ১৩ হাজার ৪০০ টাকার ভেতর থেকে কোর্স সমাপনী সার্টিফিকেট বাবদ ৫০ টাকা কেটে নিচ্ছেন কর্মচারীরা। আর সম্মেলন কক্ষের ভেতরে বসেই মসজিদের উন্নয়নের জন্য ১০০ টাকা করে নিচ্ছেন মুয়াজ্জিন আবদুল আলীম। সম্মেলন কক্ষের পাশেই চেয়ার-টেবিল পেতে বসে আছেন ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মী। সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের তারা নাম নিবন্ধন করতে বাধ্য করছেন বিদায় সংবর্ধনা নেওয়ার জন্য। ফরম পূরণ করে আদায় করা হচ্ছে মাথাপিঁছু এক হাজার টাকা। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পাঁচজন করে শিক্ষার্থীকে ভেতরে ঢোকাচ্ছেন। তারা টাকা নিয়ে বের হওয়ার পর ফরম পূরণ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ফরম পূরণ করিয়ে কিসের টাকা নেওয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্ন করতেই টাকা আদায়কারী এক ছাত্রলীগকর্মী বললেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’ এরপর তিনি নিয়ে গেলেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জীহান ও সাধারণ সম্পাদক রানা হোসেনের কাছে। জীহান বললেন, ‘বিদায়ী শিক্ষার্থীরা আমাদের ধরেছে যেন বিদায় অনুষ্ঠানটা করে দিই। প্রত্যেকটা বিভাগের ক্যাপ্টেন আমাদের টাকা আদায় করার দায়িত্ব দিয়েছে। সে কারণে আমরা টাকা তুলছি। ২০ জানুয়ারি বা তার পরে অনুষ্ঠান হবে।’
তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল ভিন্ন তথ্য। তারা জানান, বিদায় সংবর্ধনা আয়োজনের কথা তারা বলেননি। হঠাৎ ছাত্রলীগকে এভাবে টাকা নিতে দেখছেন তারা। পাওয়ার বিভাগের ক্যাপ্টেন নূর ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো আগে কিছু জানতাম না। আজই দেখছি সংগঠনের (ছাত্রলীগ) ছেলেরা এভাবে টাকা আদায় করছে। কারা দায়িত্ব দিয়েছে জানি না।’
কথা বলার জন্য এ সময় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মুহম্মদ আব্দুর রশীদ মল্লিককে কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। উপাধ্যক্ষ মো. রশিদুল আমীন বলেন, ‘আগে কখনও বিদায়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়নি। এবার টাকা তোলা হচ্ছে দেখলাম। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্য পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের নিবন্ধন ফরম (টাকা নেওয়ার রশিদ) ছাত্রলীগকে দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে উপাধ্যক্ষ বলেন, ‘এই ফরম আমরা দিইনি। কারা ছাপিয়েছে সেটাও জানি না। এ বিষয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বললেই ভাল হয়।’