২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৬:১৭:১৪ অপরাহ্ন
পাসপোর্টের প্যাঁচে প্রবাসীদের এনআইডি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০১-২০২৪
পাসপোর্টের প্যাঁচে প্রবাসীদের এনআইডি

সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও ইতালিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে। এরই মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই কার্যক্রম উদ্বোধনও করা হয়েছে। বাকি তিন দেশেও কার্যক্রম উদ্বোধনের অপেক্ষায়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) নতুন করে ওমান, কাতার, কুয়েত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে এই কার্যক্রম হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। যেসব প্রবাসী বাংলাদেশির পাসপোর্ট নেই, তাঁরা এনআইডির জন্য আবেদন করছেন না। আবার অনেকে পাসপোর্টে ঘষামাজা করে বয়স কমিয়ে বায়োমেট্রিক দিচ্ছেন, যা দেশে মাঠপর্যায়ে যাচাইয়ে ধরা পড়ছে। ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


প্রবাসী বাংলাদেশিদের এনআইডি কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (নিবন্ধন ও প্রবাসী) মো. আব্দুল মমিন সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের চারটি দেশে নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। তার মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। বাকি তিনটি দেশে উদ্বোধন করার জন্য টিম পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।’


ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আইন অনুযায়ী প্রবাসী বলতে বোঝায় যাঁদের বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট আছে। যাঁদের পাসপোর্ট নেই, তাঁরা আবেদন করতে পারছেন না। এটি একটি চ্যালেঞ্জ। কারণ, তাঁরা সেখানে বৈধ কোনো ডকুমেন্ট (কাগজপত্র)


দিতে পারছেন না। ফলে ইসিও তাঁদের এনআইডি দিতে পারছে না। বিশেষ করে ইতালিতে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশির এরপর কাছে পাসপোর্ট নেই। পাসপোর্ট ফেলে দিয়ে বয়স কম দেখিয়ে সেখানে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন। সে কারণে ইসি ওই প্রবাসীদের এনআইডি দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনি মারপ্যাঁচে পড়েছে।


ইসির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, কিছু পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন বা যাচাইকালে দেখা গেছে, অনেকে বয়স কমিয়ে প্রবাসে বায়োমেট্রিক দিচ্ছেন। বাংলাদেশে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন করার সময় জালিয়াতি ধরা পড়ছে। ফলে তাঁদের আবেদন বাতিল হয়ে যাচ্ছে। পাসপোর্ট ঘষামাজা করে বায়োমেট্রিক দেওয়ার বিষয়টিও ইসির নজরে এসেছে। সম্প্রতি তদন্ত করতে গিয়ে নরসিংদীতে একটি এবং মাদারীপুরে দুটি ঘটনা পেয়েছে ইসি।


সম্প্রতি সৌদি আরব, ইতালি ও যুক্তরাজ্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম উদ্বোধন বিষয়ে জারি করা এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সৌদি আরবে গত ১৫ অক্টোবর, ইতালিতে ২০ অক্টোবর এবং যুক্তরাজ্যে ১ নভেম্বর ইসি থেকে তিনটি কারিগরি দল যায়। এসব কারিগরি দলের কার্যক্রম তদারকের জন্য ইসি থেকে ২৩ অক্টোবর সৌদি আরব এবং ২৭ অক্টোবর ইতালিতে আরও দুটি প্রশাসনিক দল যায়। বর্তমানে সৌদি আরবে ৩৮ জন, ইতালিতে ৭১৩ জন এবং যুক্তরাজ্যে ২২৬ জন প্রবাসী পরীক্ষামূলকভাবে বায়োমেট্রিক দিয়েছেন। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী কারিগরি ও প্রশাসনিক দলের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর উদ্বোধন করে কার্যকরভাবে প্রবাসে নিবন্ধন কার্যক্রম চালানো হবে।


জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৩ জুলাই উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৯৪৭ জন প্রবাসী বাংলাদেশি বায়োমেট্রিক দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২ হাজার ৮০৫ জনকে স্মার্টকার্ড দেওয়া হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেছিলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান।


ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে ১৯ মে থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এই কার্যক্রম শুরু হয়। দেশটির দুবাই ও আবুধাবি শহরে দুই ভাগে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।


ইসির এক কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশের ভোটার হওয়া কিংবা এনআইডি পাওয়ার সুযোগ না পায় সেটি বিবেচনায় রেখে প্রবাসে নিবন্ধনের পর আবেদনগুলো দেশে আবার যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যাচাই শেষে অনুমোদন হলে আবেদনকারীদের প্রবাসেই স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে। আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা নিয়ে রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) প্রবাহ বিবেচনায় বাংলাদেশি শ্রমিক অধ্যুষিত অন্য দেশগুলোতেও পর্যায়ক্রমে এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম চালু করা হবে।


জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সাবেক পরিচালক (অপারেশনস) মো. ইউনুচ আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রবাসে ভোটার হতে এবং এনআইডি পেতে অনেক প্রপার (যথাযথ) ডকুমেন্ট দিতে হয়; যেমন মা-বাবার এনআইডি নম্বর, পাসপোর্টের কপি, জন্মসনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে তার সার্টিফিকেটের কপি, নাগরিক সনদ ইত্যাদি। এগুলো পরিপূর্ণ থাকলে সেই আবেদন নিষ্পত্তি হতে দেরি হওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে পাসপোর্ট ছাড়া অন্য ডকুমেন্ট কম থাকে। কেউ হয়তো জন্মসনদ বানিয়ে দেয়, অনেকের ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায় না, অনেকে বাংলাদেশে যাদের কন্টাক্ট নম্বর দেন, তাঁরাও যোগাযোগ করতে আসেন না। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যাদের ঠিকানা দিয়ে রেখেছে, তাদের কেউ চেনে না। এসব তদন্ত প্রতিবেদন তো নেগেটিভ আসে। অনেকে সময়মতো কাগজপত্র দিতে পারছেন না। এসব কারণে এই কাজে জটিলতা তৈরি হয়।’


মো. ইউনুচ আলী মনে করেন, এই কাজে প্রবাসীদের সচেতন করার জন্য প্রচার বাড়ানো দরকার। তিনি বলেন, ‘ওখানে যদি কমিউনিটি বেজড কিছু থাকে, তবে তা কাজে লাগিয়ে সবাইকে ডেকে ভোটার হওয়ার জন্য কী কী প্রয়োজন, সে সম্পর্কে ব্রিফ দিলে এই কাজে গতি আসবে।’


শেয়ার করুন