২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৯:০৫:১০ পূর্বাহ্ন
আওয়ামী লীগের শাসনমালে এই প্রথম মন্ত্রীত্বহীন রাজশাহী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০১-২০২৪
আওয়ামী লীগের শাসনমালে এই প্রথম মন্ত্রীত্বহীন রাজশাহী

আওয়ামী লীগের শাসনমালে এই প্রথম মন্ত্রীত্বহীন বিভাগীয় জেলা রাজশাহী। এর আগে যতবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে, ততবরাই বিভাগীয় জেলা রাজশাহীতে একজন হলেও মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।


তবে গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে নতুন মন্ত্রীসভা গঠন হলে রাজশাহী জেলায় একজনের ঠাঁয় হয়নি সেই তালিকায়। আর নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। এমনকি মন্ত্রীত্ব না পাওয়ায় রাজশাহীর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও তৈরী হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিশেষ করে সদ্য সাবেক হওয়া পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম মন্ত্রীসভা থেকে ছিটকে পড়ায় রাজশাহী আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মীদের ভিতরে ভিতরে উল্লাস করতেও দেখা যায়। আবার বাঘা-চারঘাটের কিছু কিছু নেতাকর্মীকে হতাশ হতেও দেখা গেছে।


তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন এবার আওয়ামী লীগের মন্ত্রীসভায় রাজশাহীর কোনো নেতার ঠাঁই না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো পুরনোদের নিয়ে নানা বিতর্ক। যে দুজন পুরনো সংসদ সদস্য এবারও নির্বাচিত হয়েছেন তাঁদের নিয়ে ছিল নানা বিতর্ক। তাঁরা হলেন, রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধূরী ও রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের এমপি শাহরিয়ার আলম। এই দুই এমপি গত নির্বাচনে জয় পাওয়া নিয়েও ছিলেন তাঁরা শঙ্কিত। অপেক্ষাকৃত দুর্বল স্বতন্ত্রপ্রার্থীদের কাছে কোনো মতে জয়ী হন তাঁরা। এর মধ্যে শাহরিয়ার আলম গত দুটি সংসদে পর পর দুইবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে দুই দুইবার প্রতিমন্ত্রী হলেও রাজশাহীর উন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি তাঁর। এমনকি নিজ এলাকার নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ তৈরীতেও বড় ভূমিকা ছিল শাহরিয়ারের।


গত প্রায় দুই বছর ধরে বাঘা-চারঘাটে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেই সংঘর্ষ, হামলা-পাল্টা হামলা ও একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা-মকদম্মাও হয়েছে বেশ। দলীয় কোন্দলের শিকার হয়ে জেল খাটতে হয়েছে বাঘার আড়ানী পৌর মেয়র মুক্তার আলী ও পাকুড়িয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মেরাজ উদ্দিনকেও। মামলার আসামি হয়েছেন বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলীসহ অন্তত হাজার খানেক নেতাকর্মী। গত সংসদ নির্বাচনের পরেও বাঘা-চারঘাটে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অন্তত ৪০ জন নেতাকর্মীকে পিটিয়ে, কুপিয়ে জখম করেছে শাহরিয়ার আলমের কর্মী-সমর্থকরা। অথচ আহতরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।


আবার একদিকে তিনি যখন নিজ আসনে এমপি হওয়ার দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন, অপরদিকে তাঁর স্ত্রী আয়েশা আক্তার ডালিয়া রাজশাহী-১ আসনে এমপি হওয়ার দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন। নিজ ঘর সামাল দিতে না পারায় স্ত্রী ডালিয়া স্বামীর ওপর রাগ করে রাজশাহী-১ আসন থেকে গত নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন-এমন খবর এখনো বাতাসে ভেসে বেড়ায়। মূলত এসব কারণই এবার শাহরিয়ারকে মন্ত্রীসভা থেকে ছিটকে ফেলেছে বলে মনে করছেন রাজশাহীর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


এদিকে, রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধূরী ২০১৪-২০২৮ সালের সংসদের শেষের দিকে দুই বছর শিল্প প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে গত সংসদে তাঁকে আর কোনো মন্ত্রণালয়ে বসানো হয়নি। মন্ত্রীত্ব না পেলেও গত ৫ বছরে এই সংসদ সদস্য ছিলেন রাজশাহীজুড়ে বিতর্কের কেন্দ্র-বিন্দুতে। স্কুল-কলেজে নিয়োগ, হাট বাজার ইজারা, সরকারি প্রকল্পের বরাদ্দ, শিক্ষককে মারপিটসহ নানা ইস্যুতে এই সংসদ সদস্য ছিলেন আলোচনায়। যার ফলে গত সংসদ নির্বাচনে হেভিওয়েট চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে নৌকা নিয়ে কোনো মতে এমপি নির্বাচিত হন ওমর ফারুক চৌধূরী। ফলে এবার সংসদে মন্ত্রীসভায় তাঁকেও বিবেচনা করা হয়নি বলে মনে করছেন অনেকেই।


অন্যদিকে, রাজশাহীর অপর চারটি আসনের মধ্যে তিনটিতেই নতুন মুখ। আর একটিতে এবার তৃতীয় বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারা। তিনিও নানা বিতর্কের কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পাওয়া থেকে ছিটকে পড়েছিলেন। ফলে ওই নির্বাচনে নৌকা নিয়ে পাশ করেছিলেন চিকিৎসক মুনসুর রহমান। এবার আবারও দারাকে নৌকা দেওয়া হলেও মাত্র ৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে অপেক্ষাকৃত দুর্বল স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবাইদুরের কাছে পাশ করেন। ফলে এবার এমপি হলেও মন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে কোনোভাবেই দারার নাম তালিকায় উঠেনি বলেও জানান দলের একাধিক সূত্র।


আর অপর তিনজনের মধ্যে রাজশাহী-২ (সদর) আসনে এবার নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশা, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) নতুন মুখ জেলা নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ ও রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা হলেন শফিকুর রহমান বাদশা।


সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি আহমেদ শফিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উত্তরাঞ্চল বরাবরই নানা দিক থেকে বঞ্চিত হয়। এবারও সেটি হয়েছে মন্ত্রীসভায়। কামারুজ্জামানের পরে রাজশাহীতে আর সেভাবে কোনো নেতা হয়তো গড়ে উঠেনি। তার পরেও যে দুই-একজন রাজশাহীর উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। আবার যারা এমপি-মন্ত্রী হয়েছিলেন তাঁদের সেই গ্রহণযোগ্যতাটুকুও ধরে রাখতে পারেননি। সে কারণে হয়তো এবার মন্ত্রীত্ব পাইনি রাজশাহী।’


তিনি আরও বলেন, ‘প্রয়োজনে টেকনোক্রেট মন্ত্রী হিসেবে রাজশাহীর আওয়ামী লীগের কাউকে কাউকে এবার দায়িত্ব দিলেও রাজশাহীর উন্নয়নে কাজে আসবে।’


শেয়ার করুন