০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:৪৮:১৪ অপরাহ্ন
আসন বণ্টনে সমঝোতা, আপত্তি স্বতন্ত্রে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-১২-২০২৩
আসন বণ্টনে সমঝোতা, আপত্তি স্বতন্ত্রে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসন ভাগাভাগি নিয়ে শরিকদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সমঝোতা হয়ে গেছে; শেষ পর্যায়ের সমঝোতা চলছে জাতীয় পার্টির সঙ্গে। কিন্তু শরিক দলের প্রার্থীদের জন্য ছেড়ে দেওয়া প্রায় সব আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা এসব স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে আপত্তি তুলেছেন শরিক দলের প্রার্থীরা।


শরিকদের ছেড়ে দেওয়া আসন থেকে নৌকার প্রার্থী সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় তুষ্ট নন শরিকরা।


আসন সমঝোতা শেষপর্যায়ে গেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে আপত্তি রয়েছে জাতীয় পার্টিরও। অর্থাৎ চৌদ্দ দলের শরিক ও জাতীয় পার্টির নেতারা আসন সমঝোতার পাশাপাশি জয়ের নিশ্চয়তাও চান। এ বিষয়টি নিয়েই জাপার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়নি। এসব বিষয়ে দুপক্ষই আজ রবিবার সকালের মধ্যেই ফয়সালায় যেতে চায়।


বিভিন্ন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটের মাঠে রাখার বিষয়ে অনড়। অন্যদিকে জাপাও জয়ের নিশ্চয়তা না পেলে তাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত জানাতে চায় না। এদিকে চৌদ্দ দলের আসন বঞ্চিদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে।


আসন সমঝোতা নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়েছেন ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। বিজয় দিবস উপলক্ষে জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির উদ্যোগে শুক্রবার বিকালে এক আলোচনাসভায় তিনি বলেন, ‘এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন এবং তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা রাজনৈতিক ঐক্যেরই ফল। বিপদে ঐক্য, বিপদ কেটে গেছে মনে করে আত্মপ্রসাদে ভুগে ঐক্যকে অবহেলা করা আত্মঘাতী।’


বর্তমানে সংসদে আছেন- এমন নেতাদের মধ্যে জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারকে ফেনী-১, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীকে চট্টগ্রাম-২ ও বিকল্পধারার মাহী বি চৌধুরীকে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে ছাড় দেওয়া হয়নি।


বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন জানান, শেষ সময়ে আসন বণ্টন হওয়ায় দলের প্রার্থীরা স্বাভাবিকভাবে মাঠ ছাড়বে না। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তো মাঠে আছেনই। ফলে ভোটের পরিবেশ চ্যালেঞ্জিংই রয়ে গেল।


জাপার সঙ্গে পঞ্চম দফায় বৈঠকে বসে আওয়ামী লীগ। বৈঠকে দুদলের নেতারা সমঝোতার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছান। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, কোনো জোট-মহাজোটের সুযোগ নেই, এসবে আস্থা ও বিশ্বাস নেই। তিনি বলেন, ‘সব আসনেই নির্বাচন করব। নির্বাচন করতে এসেছি, ভোট থেকে চলে যাওয়ার জন্য আসিনি। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ফাইট করব, একটা সিটও প্রত্যাহার করব না। কোনো (প্রার্থীর প্রার্থিতা) প্রত্যাহারের সুযোগ নেই।’


তবে জাতীয় পার্টির একজন কো-চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসন সমঝোতা হয়ে গেছে। ২৬ আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছে জাপা ও আওয়ামী লীগ। এখন বৈঠক হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরানো এবং জয়ের নিশ্চয়তা পাওয়া নিয়ে।’


শেষ সময়ে জোটের শরিকদের বোঝাপড়ায় টানাপড়েন থাকায় শেষ পর্যন্ত ভোটের রাজনীতি কোনদিকে গড়াবে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আমাদের সময়কে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে না। কারণ এই দলটির নেতৃত্বে আছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সুতরাং অপেক্ষা করুন- অপেক্ষার ফল ভালো হয়।’


এদিকে জাসদ সভাপতি ইনুর কুষ্টিয়া-২ আসনে আগে থেকেই প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। তবে সেখানে ক্ষমতাসীন দলের নেতা স্বতন্ত্র হিসেবে লড়াইয়ে আছেন, যাকে ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী কেবল ইনুর আসনে নয়, শরিকদের ছেড়ে দেওয়া প্রায় প্রতিটি আসনেই আছে।


শেয়ার করুন