খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অবিরাম চেষ্টা সত্ত্বেও খুচরা বাজারে চালের দাম কমছেই না। লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়লেও কমছে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে। এক লাফে যেখানে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২ টাকা, সেখানে ১৭ দিনের চেষ্টায় কমেছে ৫০ পয়সা। আবার সরু চালের দাম যেখানে বেড়েছে কেজিতে ৬ টাকা, সেখানে কমেছে ১ থেকে ২ টাকা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, চাল ব্যবসায়ীরা তো বেশি দামে চাল কিনে কম দামে বিক্রি করবে না। আগের বেশি দামে কেনা চাল বিক্রি শেষ হলে নতুন করে আর বাড়বে না। বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এদিকে খাদ্যসচিব বলেন, লাখ লাখ খুচরা বিক্রেতাকে নিয়ন্ত্রণে আনার সুযোগ আমার হাতে নেই।
তাছাড়া লাখ লাখ খুচরা বিক্রিতাকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো লোকবল, ম্যাকানিজম ও সামর্থ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নেই। খুচরা বিক্রিতাদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কাজও করছে না মন্ত্রণালয়টি। কিন্তু ভোক্তার পকেট প্রতিনিয়ত ফাকা হচ্ছে। কারণ, প্রতিদিনই চাল ক্রয় করতে হয়। রাজধানীর বনশ্রী বাজারের খুচরা বিক্রেতা সেলিম জানান, চালের দাম খুব কমছে তা তো না। আগের চেয়ে মোটা চাল কেজিতে পঞ্চাশ পয়সা কমেছে। আর সরু চাল ১ থেকে ২ টাকা। আবার অনেক জাতের চালের দাম আগের মতোই আছে। তিনি আরও জানান, সরু চাল মিনিকেট প্রতি কেজি ৭২-৭৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, ১৫ দিন আগে যা বিক্রি হয়েছিল ৭৪-৭৫ টাকা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছর দেশে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে চালের কোনো ধরনের ঘাটতিও নেই। তাহলে ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ল কেন। তারা আরও বলেন, মন্ত্রী তো নির্বাচনের সময়ও মন্ত্রী ছিলেন। তিনি তো পদত্যাগও করেননি। মন্ত্রণালয়ের সচিবও বিগত দুই বছর খাদ্য মন্ত্রণালয়েই আছেন। তাদের তো জানা থাকার কথা কাদের কারসাজিতে চালের বাজার অস্থির হয়েছে। এর পেছনে কারা কাজ করেছেন, তা তাদের জানা থাকার কথা। কই, তারা তো কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশ করছেন না। একই প্রশ্ন সাধারণ মানুষেরও।
বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার জন্য খাদ্যমন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে জানা যায়, তিনি আজ (মঙ্গলবার) সচিবালয়ে আসবেন না। যোগাযোগ করা হলে খাদ্যসচিব মো. ইসমাইল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, কেউ কারসাজি করেছে বলে জানা নেই। কোনো সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব নেই বলেও জানান। তবে চালের দাম না কমার জন্য তিনি লাখ লাখ খুচরা বিক্রেতাকে দায়ী করেন। তিনি আরও বলেন, চালের দাম মিলগেট ও পাইকারি পর্যায়ে অনেক কমেছে। খুচরা পর্যায়ে এখনো বেশি। কারণ, তারা তো বেশি দামে চাল কিনেছেন। সুতরাং, তারা তো লোকসান দিয়ে চাল বিক্রি করবেন না। তাদের আগের কেনা চাল বিক্রি হলে নতুন করে আর বাড়তি দামে চাল বিক্রি করতে পারবেন না।
খাদ্যসচিব আরও বলেন, চালের দাম মিলগেট ও পাইকারি পর্যায়ে বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা ব্যবধান। এটাও থাকবে না। আরও কমে আসবে। কয়টা দিন যেতে দিনে। আর লাখ লাখ খুচরা বিক্রেতাকে নিয়ন্ত্রণ কিংবা বাগে আনার কোনো সামর্থ্য আমার নেই। যে কারণে আমি নিয়মিত বাজার তদারকি, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। তাহলে সমাধান কী জানতে চাইলে সচিব জানান, খুচরা বিক্রিতারাই ঝামেলা করছেন এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে আনাই বড় চ্যালেঞ্জ। দেখা যাক কী হয়। মোবাইল কোর্টের অভিযানে যেসব অবৈধ মজুত ধরা পড়ছে, সেগুলো কী করা হয় জানতে চাইলে সচিব বলেন, সর্বোচ্চ পাঁচদিন সময় দিয়ে সরকারি রেটে বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়। তাছাড়া অবৈধ মজুতের দায়ে লাইসেন্স বাতিল, জরিমানা আরোপ এবং ক্ষেত্রবিশেষে অন্যান্য শাস্তিও প্রয়োগ করা হয়।
এদিকে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজার ও এজিবি কলোনি বাজারে অভিযান পরিচালনা করে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তদরকি টিম। অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তারা জানান, এখন খুচরা বিক্রেতারাও নিয়মিত ক্রয়-বিক্রয়ের রেকর্ড সংরক্ষণ করছেন। শতভাগ নিয়মে আনা সম্ভব না। তবে তারা বাড়তি দামে চাল বিক্রি করছেন না এবং করলেও তারা সফল হবেন না। কারণ, এখন মিলগেট, আড়ত, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতার ক্রয়ের রসিদ যাচাই করা হচ্ছে।