২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১২:৪৯:১২ অপরাহ্ন
পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ বাড়ছে, রফতানিতে আশার সঞ্চার
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০১-২০২৪
পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ বাড়ছে, রফতানিতে আশার সঞ্চার

দীর্ঘদিন ধরে তৈরি পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ কমে গেলেও গত তিন মাস ধরে তা বাড়তে শুরু করেছে। এতে রফতানিকারকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রচলিত বাজারের ওপর অতি নির্ভরতাও কাটতে শুরু করেছে। রফতানিতে নতুন বাজারের হিস্যাও বাড়ছে। এতে তৈরি পোশাকশিল্পে লেগেছে নতুন এক রূপান্তরের ঢেউ। দেশের অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা রফতানিকারকদের।


তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এই তিন মাসে ক্রয়াদেশ বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ।


 


এই খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় মুদ্রাস্ফীতি কমেছে। এ কারণে পোশাক রফতানির অর্ডার বাড়ছে। তারা বলছেন, আগামী মাসগুলোতে আরও বেশি অর্ডার পাবেন। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে।


 


বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশনের (ইউডি) সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে গত তিন মাসে রফতানি আদেশ এসেছে ৬,৭৭১টি।‌ গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৬,৩৫২টি।


এই প্রবণতা বলছে, পোশাক রফতানির অর্ডারের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় মুদ্রাস্ফীতি কমেছে। এছাড়া নতুন বাজারের দিকে এগিয়ে চলছি। সার্বিকভাবে চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের প্রতিযোগীদের তুলনায় অর্ডার পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা ভালো অবস্থানে আছি। আগামী দিনে অর্ডার আরও বাড়তে পারে। তিনি অবশ্য লোহিত সাগরে চলমান সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।


 


একাধিক উদ্যোক্তা বলেছেন, বাংলাদেশ বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইইউর বাজার থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্ডার পাচ্ছে। কারণ, এই দেশগুলোর ব্র্যান্ডগুলো ২০২৩ সালের শেষে ছুটির মৌসুমে তাদের বেশিরভাগ স্টক বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছিল।


এদিকে ইইউর তথ্য অনুসারে, ইউরোজোনের বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার গত বছরের নভেম্বরে ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ, যা অক্টোবরে ২ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমেছে। কিন্তু চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চলমান মধ্যপ্রাচ্য সংকটের ফলে ডিসেম্বরে এই হার বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশে। যদিও এক বছর আগে এই হার ছিল ১০ দশমিক ১ শতাংশ।


প্রসঙ্গত, তৈরি পোশাক রফতানিতে পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণের জন্য এক দশকের বেশি সময় ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে এই খাতের উদ্যোক্তারা। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে বেশ কিছু কারখানা এখন ভ্যালু অ্যাডেড বা বেশি দামের বৈচিত্র্যময় তৈরি পোশাক রফতানি করছে। এদিকে নতুন বাজারের দিকেও ঝুঁকে সফলতা পেয়েছেন অনেকে। তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০৯ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির ৫৮ দশমিক ৯০ শতাংশের গন্তব্য ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউ জোটে তখন যুক্তরাজ্যও ছিল। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ২৮ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং কানাডায় ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ পোশাক রফতানি হতো। অর্থাৎ, রফতানি হওয়া তৈরি পোশাকের সাড়ে ৯২ শতাংশের গন্তব্য ছিল প্রচলিত বাজারগুলো। সে সময় নতুন বাজারের হিস্যা ছিল মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ।


দেড় দশকের ব্যবধানে তৈরি পোশাক রফতানিতে নতুন বাজারের হিস্যা বেড়ে ১৮ দশমিক ৭২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তাতে প্রচলিত বাজারগুলোর ওপর অতি নির্ভরতা কমে আসছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বাজার হিস্যা ২৮ দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশে নেমেছে। একইভাবে কানাডার হিস্যা ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ থেকে কমে গত বছর ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ হয়েছে। যদিও ইইউর হিস্যা খুব একটা কমেনি, বেড়েছে যুক্তরাজ্যের হিস্যা।


রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মতে, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও বাংলাদেশের পোশাক খাত তার রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৭২ শতাংশ ধরে রাখতে পেরেছে এবং চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে ২৩ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।


শেয়ার করুন