২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১১:৪৯:৩২ অপরাহ্ন
‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল’
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০২-২০২৪
‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে অবদান, সেই আন্দোলনের যে ইতিহাস, সেখান থেকেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামটা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল।


মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অমর একুশে পদক বিতরণী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।


শেখ হাসিনা বলেন, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে বাঙালিরা রক্ত দিয়েছে, রক্তের অক্ষরে ভাষার অধিকারের কথা লিখে গিয়েছে। পাকিস্তানি শাসকরা যখন আমাদের মায়ের ভাষার অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল, সংখ্যাগরিষ্ঠতায় আমরাই ছিলাম বেশি।


আর যে ভাষাটা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল, উর্দু, সেটা কারও মাতৃভাষা নয়, পুরো পাকিস্তানের ৭ ভাগ লোকও এটা ব্যবহার করত কি না, সেটাই প্রশ্ন। অথচ আমরা বাঙালিরা ছিলাম প্রায় ৫৫ ভাগ।


আমাদের ভাষা কেড়ে নিয়ে দ্বিজাতীয় একটা ভাষা যখন চাপিয়ে দিতে চায়, তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র।


তিনি উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তমদ্দুন মজলিশসহ আরও কয়েকটি সংগঠন নিয়ে বাংলা ভাষাকে রক্ষার জন্য সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলেন এবং আন্দোলন শুরু করেন। সেই আন্দোলনের পথ ধরেই আমরা আমাদের স্বাধিকার আদায় করেছি স্বাধীনতা পেয়েছি।


তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে দুঃখের কথা হলো ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে অবদান, সেই আন্দোলনের যে ইতিহাস, সেখান থেকেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামটা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল।


ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে সারা বাংলাদেশ সফর করে মানুষকে যখন সংগঠিত করছিলেন তখনই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ দেশের প্রতিটি সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান রয়ে গেছে।


শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলে গেছেন, ১৯৫২ সালের আন্দোলন কেবল ভাষা আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, এ আন্দোলন ছিল সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন।


কাজেই জাতির পিতা কিন্তু বলে গেলেন আমাদের সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হচ্ছে ৫২র মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলন।


‘তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। পঁচাত্তরের পরে বিজয়ী জাতি হিসেবে সেই মর্যাদাটা বাঙালি হারিয়ে ফেলেছিল। আবার বাঙালি বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করতে পারে, সেই মর্যাদা আমরা ফিরিয়ে এনেছি।


এই মর্যাদা সমুন্নত রেখে আমাদের আগামী দিনে এগিয়ে যেতে হবে। কারও কাছে হাত পেতে নয়, ভিক্ষা করে নয়। আত্ম মর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলব। কারণ একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথানত না করা। মাথানত করে আমরা চলব না, মাথা উঁচু করে চলব।’


সরকারপ্রধান বলেন, আমরা সমাজের উন্নয়নের জন্য কাজ করি। এখানে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য যারা কাজ করেছেন তাদের আমরা সম্মান করার চেষ্টা করেছি। আজ যারা পুরস্কার পেয়েছেন তাদের পুরস্কৃত করতে পেরে আমরা ধন্য হয়েছি।


তিনি বলেন, কিছুক্ষণ আগে আপনারা দেখেছেন, যিনি দারিদ্র্যের কারণে নিজে পড়ালেখা করতে পারেননি, এটা তার ভেতরে একটা যন্ত্রণা ছিল। কিন্তু তিনি থেমে যাননি। সাধারণ কাজ করে, দই বিক্রি করে, একটি ছোট দোকান দিয়ে জীবন-জীবিকা সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন।


সঙ্গে অন্যের মাঝে জ্ঞানের সুযোগ করার জন্য তিনি একটি পাঠাগার তৈরি করন, পাঠাগার তৈরি করে সাধারণ মানুষের পড়াশোনার সুযোগ করে দেন, তিনি একটি স্কুল তৈরি করে দেন। আমি তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তাকে পুরস্কার দিতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।


বিভিন্ন এলাকায় যারা সমাজের মানুষের জন্য করে যাচ্ছেন তাদের খুঁজে বের করার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।


দই বিক্রেতা জিয়াউল হকের প্রতিষ্ঠিত পাঠাগার ও স্কুল সরকারি করার আশ্বাস দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি যে পাঠাগারটা করেছেন, তিনি আমাকে কিছুক্ষণ আগে বলেছেন তার একটা স্থায়ী ভূমি দরকার, পাঠাগারের জন্য একটা বিল্ডিং দরকার, আমি করে দেব।


পাশাপাশি উনি যে স্কুলটা করেছেন, উনি যদি চান সরকারিকরণ করতে, আমি খোঁজখবর নেব এবং যথাযথভাবে এটা করে দেব।


তিনি বলেন, কেন করে দেব, যে মানুষটা সারাজীবন ত্যাগ করেছেন মানুষের জন্য, তাদের জন্য করা আমার দায়িত্ব। আমি শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বলছি না। আমি জাতির পিতার কন্যা হিসেবে বলছি।


আমি প্রধানমন্ত্রী না হলেও যদি জানতাম তাহলে আমাদের মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড থেকে সহযোগিতা দিতাম। যারা জনগণের সেবা করে তাদের সেবা করতে পারাটা নিজেকে ধন্য মনে করা।

শেয়ার করুন