০১ মে ২০২৪, বুধবার, ০৭:১৪:২৭ পূর্বাহ্ন
প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ॥ কাল ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৭-২০২৩
প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ॥ কাল ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে

ঐক্যবদ্ধভাবে সর্বাত্মক ভোটযুদ্ধে নামার প্রস্তুতি এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সম্ভাব্য আন্দোলন মোকাবিলার রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে অসাম্প্রদায়িক আদর্শিক নির্বাচনী জোট ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বৈঠকে শরিক দলগুলোর মধ্যে সৃষ্ট মান-অভিমান মিটিয়ে সারাদেশেই ১৪ দলকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করার ঘোষণা আসতে পারে। প্রায় ১৬ মাস পর আগামীকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।


জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠেয় গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতারা ছাড়াও আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত থাকবেন। ইতোমধ্যে জোট নেতাদের আমন্ত্রণও জানিয়ে তাদের যথাসময়ে করোনা টেস্ট করতেও বলা হয়েছে। বৈঠকে রাজনৈতিক, সামাজিক, আগামী নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি রাজনীতির মাঠে বিরোধীদের সম্ভাব্য আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবিলায় ১৪ দলীয় জোটের ভূমিকা কী হবেÑ সে বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে কর্মকৌশল চূড়ান্তসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হবে।


আগামীকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন জনকণ্ঠকে বলেন, জোটের শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের বৈঠকে আগামী নির্বাচন, বিরোধী দলের আন্দোলনসহ সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর বিষয়গুলোও আলোচনায় উঠে আসতে পারে।


১৪ দলীয় জোটের আরেক অন্যতম শরিক জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হবে। সেখানে আগামী নির্বাচন, জোটগতভাবে অংশগ্রহণ, নির্বাচনে জোটের ভূমিকা, বিএনপিসহ সাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদী অপশক্তির অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারা রুখতে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করা হবে। এ ছাড়া জনগণের সমস্যা নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, দলবাজির প্রসঙ্গগুলো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হতে পারে।


জোটের শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনা শরিকদের নিয়ে সর্বশেষ বৈঠক করেছিলেন গত বছরের ১৫ মার্চ। সেই বৈঠকও হয়েছিল ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার প্রায় তিন বছর পর। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা স্পষ্টই ঘোষণা দিয়েছেন যে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৪ দলীয় জোটকে নিয়েই অংশগ্রহণ করবে আওয়ামী লীগ।


তবে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও শরিক দলগুলোকে অবমূল্যায়ন, আওয়ামী লীগের একলা চলো নীতিতে কিছুদিন ধরেই ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে কিছুটা মান-অভিমান, অসন্তোষের বিষয়টি সামনে চলে আসে। অভিমান থেকেই জোট থেকে বেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ জাসদ। অন্যান্য শরিক দলের সিনিয়র নেতারা প্রায় প্রকাশ্য তাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে শরিকদের মান ভাঙানোর পাশাপাশি নির্বাচনী মাঠে ঐক্যবদ্ধভাবে নামার তাগিদ থেকেই স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেই শরিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন।


১৪ দলীয় জোটের নেতারা বলেন, জোটের মধ্যে বিভিন্ন সময় টানাপোড়েন থাকলেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তা এখন আর নেই। জোটবদ্ধ জাতীয় নির্বাচনের পথেই এগোচ্ছেন তারা। জোটবদ্ধ মেরুকরণ তৈরি করে সে অনুযায়ী তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকায় জোটবদ্ধ নির্বাচনের বিষয়েও জানান দিচ্ছেন তারা। আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সর্বাত্মক ভোটযুদ্ধে নামার কৌশল চূড়ান্ত করা হতে পারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে।


রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগ যেভাবে নিজেদের দলীয় কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে জোটকেও সক্রিয় করতে হবে। বিএনপি, জামায়াত এবং হেফাজতের যে ষড়যন্ত্র, তা রূখতে হলে ১৪ দলীয় জোটকে সক্রিয় করার কোনো বিকল্প নেই। জোটের মধ্যে অসন্তোষ থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। এখন জোটের কার্যক্রম বাড়াতে হবে এবং রাজনীতিতে যেসব সমালোচনা হচ্ছে, এর জবাব দিতে কর্মসূচি দিতে হবে।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোটের শরিকদের নিয়ে এমন এক সময় বৈঠক করতে যাচ্ছেন, যখন বিএনপি ও তাদের সমমনারা সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশী-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র চলছে, সরকারকে চাপে ফেলতে নানা চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগ রাজপথে থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে ভালোভাবেই মোকাবিলা করলেও তা আরও জোরালো করতে এবং সারাদেশে একটা নির্বাচনী ঢেউ তুলতেই আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের নিয়ে রাজপথে সরব হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে।


আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ঢাকা সফর করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করেছেন। নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে কি না, সে ব্যাপারে পরিস্থিতি যাচাইয়ের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দল ১৬ দিনের সফরে এখন ঢাকায় রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে জোটগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


জোটের দুজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের মার্চে জোটের শরিকদের নিয়ে সর্বশেষ যে বৈঠক করেছিলেন, সেই বৈঠকে আগের তিনটি নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও জোটগতভাবে করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে শরিকদের অবহেলা, অবমূল্যায়নসহ নানা অভিযোগে জোটের শরিকদের মধ্যে মান-অভিমান ও ক্ষোভ রয়েছে অনেক দিন ধরে। এ ছাড়া আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আসন ভাগাভাগির বিষয়টিও রয়েছে। এসব কারণে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠক এসব বিষয়ে একটি পরিষ্কার সিদ্ধান্ত আসবে বলেই তারা মনে করছেন।


২০০৮ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ২৩ দফার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ১৪ দলীয় জোট। ওই সময় থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জোটগতভাবে আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচনে অংশ নেয় জোটের শরিকরা। নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সরকারে শরিকদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। তবে সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সরকারের মন্ত্রিসভায় শরিক দলের কাউকে রাখা হয়নি। এরপর থেকেই নানা কারণে জোট শরিকদের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে। জোটের বৈঠক, দলের (শরিক দলসমূহ) বিবৃতি-বক্তৃতা এমনকি জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যেও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।


জানা গেছে, আগামীকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে জোটের শরিক দলের দুজন করে শীর্ষ নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দলগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়করা বৈঠকে অংশ নেবেন। এ ছাড়া দলীয় প্রধান সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের কয়েক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকেও বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।


শেয়ার করুন