০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০২:২৭:৪১ অপরাহ্ন
পর্যটক টানতে কুয়াকাটায় হচ্ছে বিমানবন্দর
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০২-২০২৪
পর্যটক টানতে কুয়াকাটায় হচ্ছে বিমানবন্দর

দেশের পর্যটন খাতকে আরও শক্তিশালী করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের পর এবার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটাকে আরও আকর্ষণীয় করার পাশাপাশি ভ্রমণ সহজ করতে সেখানে বিমানবন্দর তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষ (বেবিচক)। যথাসম্ভব দ্রুততম সময়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কোন জায়গায় বিমানবন্দরটি গড়ে তোলা হবে তা যাচাই-বাছাইয়ের কাজও শুরু হয়েছে। আগামী বছরের শেষের দিকে বিমানবন্দর নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করতে তোড়জোড় চলছে। এই বিমানবন্দর নির্মাণে প্রাথমিকভাবে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বাজেট ধরা হয়েছে। প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অনুমোদনের পর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতেও (একনেক) পাস হবে বলে আশা করছে বেবিচক।


একাধিক এভিয়েশন বিশ্লেষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, কুয়াকাটায় বিমানবন্দর হলে পর্যটন খাত আরও শক্তিশালী হবে। পর্যটকরা সহজেই কুয়াকাটা ভ্রমণ করতে পারবেন। কক্সবাজার বিমানবন্দরের আধুনিকায়নের ফলে সেখানকার পর্যটন খাত সমৃদ্ধ হয়েছে। একইভাবে কুয়াকাটাও লাভবান হবে। পদ্মা সেতু চালুর পর বরিশাল বিমানবন্দরের ব্যবহার নেই বললেই চলে। কিন্তু কুয়াকাটায় বিমানবন্দর হলে তেমনটি হওয়ার আশঙ্কা নেই। এ ছাড়া পর্যটন খাতের পাশাপাশি পায়রা বন্দরের কর্মকাণ্ড আরও গতিশীল হবে। সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা যুগোপযোগী। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই বিমানবন্দরের কাজ শুরু করা দরকার বলে মনে করছেন এই এভিয়েশন বিশ্লেষকরা।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির ফলে পর্যটন নগরীগুলোতে পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে। কক্সবাজারের মতো কুয়াকাটাকেও আমরা পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাচ্ছি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ওই সব অঞ্চলে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। ১৯৯৮ সালে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণার পর কুয়াকাটায় বাড়ছে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বেড়ে গেছে হোটেল-মোটেলের সংখ্যাও।’


তিনি আরও বলেন, ‘সব দিক বিবেচনা করে কুয়াকাটায় একটি বিমানবন্দর নির্মাণের চিন্তাভাবনা করছে সরকার। অর্থ সংস্থান করতে পারলে এখানে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিমানবন্দর নির্মাণ করব। কুয়াকাটার কোন স্থানে বিমানবন্দরটি করা যাবে তা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। এ জন্য আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি।’


বেবিচকের ঊর্ধ্বতন দুজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কুয়াকাটায় বিমানবন্দরটি করতে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বেবিচক। ইতিমধ্যে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ করতে সরকারও বেশ আন্তরিক। বিমানবন্দরটি নির্মাণে প্রাথমিকভাবে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বাজেটের সারসংক্ষেপ তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিলে সেটি একনেকে পাস হবে।


ওই দুই কর্মকর্তা আরও বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের শেষের দিকে বিমানবন্দরটির নির্মাণকাজ শুরু করা যাবে। একই সঙ্গে বাগেরহাটের খানজাহান আলী বিমানবন্দরটিও চালু করতে কাজ চলছে। পাশাপাশি বরিশাল বিমানবন্দরে নিয়মিত ফ্লাইট চালু রাখতে এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে কথা চলছে। কী উপায়ে তাদের (এয়ারলাইনস) ক্ষতি কমানো যায়, সে বিষয়ে সরকারও কাজ করছে।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুয়াকাটায় দ্রুত বিমানবন্দর নির্মাণের তাগাদা দিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে কুয়াকাটা পরিদর্শন করে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বেবিচকের ৫ সদস্যের একটি দল। কুয়াকাটায় বেবিচকের বিমানবন্দরসদৃশ একটি পরিত্যক্ত জায়গা রয়েছে। তবে সেখানে কোনো ধরনের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা ও বিমান ওঠানামার জন্য রানওয়ে নেই। পরিদর্শন শেষে কমিটি প্রতিবেদন তৈরির কাজ করছে; যা আগামী সপ্তাহে মন্ত্রণালয় ও বেবিচক চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে কুয়াকাটায় ১৭০টির বেশি আবাসিক হোটেল-মোটেল আছে। যেগুলোর ধারণক্ষমতা ২০ হাজার জনের বেশি। এসব হোটেল-মোটেলের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ উন্নত সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন প্রথম শ্রেণির। আর এই প্রথম শ্রেণির হোটেলগুলোতে আসা বেশিরভাগ পর্যটকের প্রথম চাহিদা বিমানবন্দর ও উন্নত সুযোগ-সুবিধা। দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার বিস্তৃত কুয়াকাটা সৈকতের গর্জন, উথাল-পাতাল ঢেউ ও সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত আকৃষ্ট করে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের। দেশ-বিদেশে পরিচিতি থাকলেও আন্তর্জাতিক মানের কোনো বিমানবন্দর না থাকায় খুব বেশিসংখ্যক পর্যটক টানতে পারছে না কুয়াকাটা। একই সঙ্গে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের সুযোগ হারাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পায়রাবন্দর ও কুয়াকাটা সৈকতে যাতায়াতের সুবিধা উন্নত করতে বিমানবন্দর নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের স্থান নির্ধারণের জন্য তথ্য চেয়ে ইতিমধ্যে বেবিচককে চিঠি দিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘পায়রাবন্দর নগরী ও কুয়াকাটা উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ পর্যটনভিত্তিক সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প এলাকায় বিমানবন্দরের স্থান চিহ্নিতকরণের জন্য নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গত বছরের ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভার সিদ্ধান্তের আলোকে এ তথ্য চাওয়া হয়েছে।


বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পায়রাবন্দরে লোকজনের আসা-যাওয়া অনেক বেড়েছে। সেখানে সড়কপথের যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হলেও আকাশপথে যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। বিমানবন্দর হলে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। কুয়াকাটাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ বহু আগে শুরু হলেও মূলত ১৯৯৮ সাল থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। যানজটসহ নানা সমস্যার কারণে পর্যটকরা কুয়াকাটায় যেতে অনীহা দেখান। কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর পর পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। সেখানে বিমানবন্দর হলে এই সংখ্যা যে আরও বেড়ে যাবে তা নির্দ্বিধায় বলতে পারি।’


তিনি আরও বলেন, ‘কুয়াকাটা সৈকতের কোল ঘেঁষে রয়েছে সুন্দরবনের পূর্বাংশ ফাতরার বন, লেম্বুর বন, নারকেলবাগান, ঝাউবাগান এবং গঙ্গামতী ও কাউয়ার চরের সংরক্ষিত বনাঞ্চল। পর্যটকরা কুয়াকাটা ভ্রমণে এলে এসব পর্যটন স্পট ঘুরে দেখেন। কিন্তু আকাশপথে যাতায়াতের সুযোগ না থাকায় দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটক এখানে আসতে চান না। এ কারণে কুয়াকাটা ও পায়রাবন্দরকে পরিচিত করতে বিমানবন্দরের বিকল্প নেই। বিমানবন্দর হলে খুব সহজেই বিদেশিরা আসবেন। সময় বাঁচিয়ে ভ্রমণের স্বাদ পেতে আসা পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। কক্সবাজারের মতোই এ অঞ্চলেরও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে।’


শেয়ার করুন