২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৪:৩৬:৪৮ অপরাহ্ন
স্বাধীনতার পর প্রথম মন্ত্রী পেলেন পুঠিয়া-দুর্গাপুরবাসী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৩-২০২৪
স্বাধীনতার পর প্রথম মন্ত্রী পেলেন পুঠিয়া-দুর্গাপুরবাসী

আনন্দের বন্যা বইছে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে। আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণসহ চলছে আনন্দ উল্লাস। রাজশাহী ছয়টি আসনের মধ্যে বিগত সময়ে দুই একটি আসনে প্রতিমন্ত্রী পেলেও স্বাধীনতার পর থেকে রাজশাহী-৫ আসনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তাদের দলীয় নেতারা এই আসনে নেতৃত্ব দিলেও মন্ত্রীসভার সদস্য হতে পারেননি কেউ।


তবে সেই ইতিহাস পাল্টে এবার এই প্রথম কোনো মন্ত্রী পেলেন পুঠিয়া-দুর্গাপুরবাসী। রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসন থেকে তৃতীয়বার নির্বাচিত আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। তিনি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর দয়িত্ব পেয়েছেন। এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় শপথ গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার নির্বাচনী এলাকা পুঠিয়া ও দুর্গাপুরে আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণসহ করেছেন আনন্দ উল্লাস।


বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ফোন পেয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবার বিষয়টি নিশ্চিত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ওয়ালে একটি পোস্ট করেছিলেন আব্দুল ওয়াদুদ দারা । পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, পরিশ্রম সফল হয়েছে ইনশাআল্লাহ’।


শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে শপথ নেন তিনি। শপথ শেষে মন্ত্রী পরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রী মনোনীত করা হয় আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে।


রাজশাহী-৫ আসনটি পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। ৩৯০ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটারের এই সংসদীয় আসনটি জাতীয় সংসদের ৫৬ নম্বর আসন। দুইটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন রয়েছে এই আসনে। রাজনীতির মারপ্যাঁচে সবসময় সবচেয়ে জটিল সমীকরণ চলে এই আসনে।


ইতিহাস বলছে, রাজশাহী-৫ আসনটি এক সময় বিএনপির ঘাঁটি বলা হলেও স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা শাহ মোহাম্মদ জাফরুল্লাহ। এরপর ৫ম জাতীয় সংসদের ফলাফলে বিএনপি সরকার গঠন করলেও এ আসন থেকে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি প্রয়াত তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।


এ পর্যন্ত সব মিলে ছয় বার এখান থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। ১৯৭৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সাত্তার মন্ডল। ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে পরবর্তী ৭ম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে প্রার্থী মনোনয়নে চমক আনে বিএনপি। দলের মনোনয়ন পান ৩১ বছর বয়সের যুবদল নেতা এবং পরবর্তীতে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা। ৮ম সংসদেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার বিশেষ সর্ম্পক থাকায় টানা ১০ বছর সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। নাদিম মোস্তফার কারণেই আসনটি বিএনপির শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয় বলেই অভিমত বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাদের। তবে মামলা জনিত কারণে তিনি ৯ম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। এছাড়াও এখানে ১৯৮৬ সালের ৩য় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রয়াত মুহাম্মদ আয়েন উদ্দীন। আর জাতীয় পার্টির অধ্যাপক আবুল হোসেন ৪র্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে মন্ত্রীত্বের স্বাদ পাননি কেউ।


দুর্গাপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরিফ বলেন, ‘এই আসন থেকে তৃতীয় বার নির্বাচিত জনপ্রিয় জননেতা আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াদুদ দারা মহোদয়কে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করায় স্মার্ট বাংলাদেশের রুপকার দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রতি দুর্গাপুরের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। এবং আশা করছি আগামিতে এ আসনটিতে ব্যাপক উন্নয়নের ঘটবে’।


উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ফিরোজ বলেন, ‘স্বাধীনতার পর রাজশাহী-৫ আসে কোনো মন্ত্রী আমরা পাইনি। আব্দুল ওয়াদুদ দারা ভাই ভাই মন্ত্রী হয়েছেন। আমরা খুব আনন্দিত। নেতাকর্মীরা আনন্দ উল্লাস করছেন। সাধারণ মানুষও অনেক খুশি। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। দারা ভাই সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছেন। আশা করছি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে তিনি নিজ এলাকাসহ সারাদেশের উন্নয়নে অবদান রাখবেন’।


শেয়ার করুন