২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০১:০১:৪৩ পূর্বাহ্ন
সূত্রপাত হতে পারে ইলেকট্রিক কেটলি থেকে
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৩-২০২৪
সূত্রপাত হতে পারে ইলেকট্রিক কেটলি থেকে

রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনের সূত্রপাত গ্যাস সিলিন্ডার থেকে ঘটেনি। ইলেকট্রিক কেটলি বা অন্য কিছু থেকে ঘটতে পারে। এমনকি আগুন লাগার পরও কোনো গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে পুলিশ ১১টি গ্যাস সিলিন্ডার সংগ্রহ করেছে। ভবনটির নিচতলার চুমুক ‘চায়ের দোকানে’ প্রথম আগুন লাগে। সেখান থেকে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছে।


বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক হোসেন যুগান্তরকে জানান, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কোনো আলামত পরিদর্শক দল পায়নি। গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ হলে সিলিন্ডারের ধ্বংসাবশেষ চতুর্দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত। অন্যরকম একটা পরিবেশ থাকত। কিন্তু এ রকম কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। অক্ষত ১১টি গ্যাস সিলিন্ডার উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি ছোট এবং পাঁচটি বড়। এগুলো রমনা থানায় রাখা হয়েছে।


বিস্ফোরক পরিদর্শক আরও বলেন, আমরা ইলেকট্রিক কেটলির ধ্বংসাবশেষ পেয়েছি। পোড়া তারও পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা ঘটনাটি উদঘাটন করবে। আমরা কেবল সিলিন্ডারের বিষয়টি দেখছি। আদালতের মাধ্যমে উদ্ধার আলামত বিস্ফোরক পরিদপ্তরে পাঠানো হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। এ ঘটনায় আলামত পরীক্ষার জন্য তাদের বলা হয়নি। তবে আগুনে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটায় আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনাস্থলে কোনো বিস্ফোরকদ্রব্যের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।


এদিকে এ ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার ব্যক্তিদের দুদিনের পুলিশি রিমান্ড শেষে আদালতে পাঠানো হয়। রিমান্ডে চা চুমুকের মালিক আনোয়ারুল হক ও শফিকুর রহমান রিমন জানান, ইলেকট্রিক কেটলি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। কেটলিতে হঠাৎ আগুন ধরে গেলে তারা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তবে কিছুতেই আগুন নিভছিল না। এক পর্যায়ে কেটলির আশপাশে থাকা বিভিন্ন জিনিসপত্রে আগুন ধরে যায় এবং পুরো দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।


মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনছার মিলটন বলেন, উদ্ধার আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রক্রিয়া চলছে। তদন্তের স্বার্থে যা যা করা দরকার, সবই করা হচ্ছে। যাদের অবহেলায় ঘটনাটি ঘটেছে, তাদের শাস্তি যাতে নিশ্চিত হয় সেভাবেই তদন্ত চলছে।


ইলেকট্রনিকস সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইসাব) পক্ষ থেকেও ঘটনার পরপর ভবনটি পরিদর্শন করা হয়। তখন তারা কিছু আলামত সংগ্রহ করেন ও খতিয়ে দেখেন। জানতে চাইলে ইসাব’র সাধারণ সম্পাদক জাকির উদ্দিন আহমেদ বলেন, পরিদর্শনে কোনো গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আলামত পাওয়া যায়নি। যেসব গ্যাস সিলিন্ডার ওই ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে ছিল, সেগুলো আগুন লাগার পরও অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। ভবনে নিুমানের একটি আগুন নির্বাপক ছিল। সেটি বিস্ফোরিত হয়েছে। স্যুয়ারেজ লাইনেও বিস্ফোরণ ঘটেছে।


অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তবে তদন্তে কী পাওয়া গেছে-সে বিষয়ে কমিটির কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তারা জানান, তদন্ত শেষ হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।


আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রিন কোজি কটেজে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে বেইলি রোডের ভবনটিতে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। ভবনটির সামনে ফিতা দিয়ে রাখা হয়েছে। সংস্থা অথবা সংশ্লিষ্টরা দপ্তরের সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ওখানকার ফুটপাত ধরে হেঁটে আসা লোকজন ভবনটি বরাবর এসেই তাকিয়ে থাকছেন পোড়া ভবনের দিকে। উৎসুক জনতা মোবাইল ফোনে ছবি ও ভিডিও ধারণ করছেন।


ফায়ার সার্ভিস জানায়, অগ্নিনির্বাপণের পর তারা ভবনটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন। ভবনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।


উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাতে গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জন মারা যান। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিটের কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় এখনো ছয়জন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বেশ কয়েকজন চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছেন।

শেয়ার করুন