দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। ভূমিধস বিজয়ের পর আওয়ামী লীগের নতুন সরকার এরই মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ছোঁয়া লেগেছে।
একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গঠন করা হয়েছে টেকনিক্যাল কমিটি।
সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে টাস্কফোর্সের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় গঠন করা হয় ১৫টি উপ-কমিটি। এসব উপ-কমিটির সদস্য সংখ্যা ২০ জন।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আখতার সময়ের আলোকে জানান, এককভাবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। এর জন্য সব মন্ত্রণালয় ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা প্রয়োজন। যেমন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপ-কমিটিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে হাইওয়ের অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শককে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, মেট্রোরেলে যে পাস ব্যবহার করা হচ্ছে সেটিকে আরও সহজলভ্য করা হবে। পাশাপাশি এমআরটিতে ব্যবহার করা কার্ডটি যেন আরও বহুবিধ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় সেটি খতিয়ে দেখা হবে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সেতু বিভাগ একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। যাতে অভিন্ন একটি সফটওয়্যার দিয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং সেতু বিভাগের আওতায় থাকা সেতুগুলোর টোল আদায় করা যায়।
এমআরটি লাইনের ১৬টি স্টেশনের সঙ্গে স্টেশন সংলগ্ন এলাকার সংযোগ স্থাপনের জন্য ফিডার সার্ভিস চালুর চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে। এর জন্য সম্ভাব্য রুট হতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রো স্টেশন থেকে ফুলবাড়িয়া, বকশি বাজার, পলাশী, আজিমপুর, নীলক্ষেত। আবার মতিঝিল থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ফিডার সার্ভিস চালু করা হতে পারে। যা কিউআর কোড দিয়ে পরিচালনা করা হবে। এ ছাড়াও উত্তরা সেন্টার স্টেশনের সঙ্গে এয়ারপোর্ট টার্মিনাল-৩-এর ফিডার সার্ভিস চালুর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। যাতে বিমানের যাত্রীরা উত্তরা সেন্টার মেট্রো স্টেশনে চেক ইন করে সরাসরি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে ইমিগ্রেশনে পৌঁছতে পারে। সব ফিডার সার্ভিস ও ই-বাইক সার্ভিস ব্যবহারের ক্ষেত্রে র্যাপিড পাস ব্যবহারের সুবিধা রাখা হবে। এতে যাত্রী সাধারণ একই টিকেটে বিভিন্ন পরিবহন সেবা নিতে পারবেন।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা সময়ের আলোকে জানান, স্মাট পরিবহন বিনির্মাণে সড়ক ডিভাইডার নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সরলীকরণ করা হবে। ফ্লাইওভার থেকে শুরু করে আন্ডারপাস, ওভারপাস নির্মাণ, ট্রাফিক সাইন ও সিগন্যাল পুনঃস্থাপন করা হবে। এসবের সঙ্গে গাড়ি চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
জানা গেছে, আগামীতে রাজধানী থেকে সব ধরনের ফিটনেসহীন গাড়ি অপসারণ করা হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে ফিটনেস সনদসহ অন্যান্য সনদ প্রদান বাধ্যতামূলক করা হবে। পরিবহনের জন্য সুনির্দিষ্ট স্থানে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা রাখা হবে। সড়কে যানজট এড়াতে স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেম চালু করা হবে। এটি হতে পারে স্যাটেলাইট সিগন্যালের মাধ্যমে কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
রাজধানীর ফুটপাথ নিয়েও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। যানবাহনের ধরন অনুযায়ী আলাদা লেন চালু করা হবে। ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি শিগগির কার্যকর করা হবে। আগামীতে গাড়ির চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত ও শিক্ষিত চালক বেছে নেওয়া হবে।
পাসপোর্ট করার জন্য পুলিশ ভেরিফেকিশন থেকে শুরু করে পাসপোর্ট তৈরি সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত অনলাইনের ব্যবহার আরও জোরদার করা হবে। যেন কাউকে কোনো অফিসে অকারণ ধরনা দিতে না হয়। এতে গ্রাহকরা হয়রানি থেকে যেমন মুক্তি পাবেন, তেমনি সময়ক্ষেপণ হবে না।
আপাতত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে জনসেবা থেকে শুরু করে ইউলিটি সার্ভিসের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে হাঁটবে বলে জানা গেছে।