২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০১:০২:১৮ পূর্বাহ্ন
অর্বাচীন সরকারের অধীনে মানুষ বাস করছে: গয়েশ্বর
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৩-২০২৪
অর্বাচীন সরকারের অধীনে মানুষ বাস করছে: গয়েশ্বর

দেশের মানুষ একটি অর্বাচীন সরকারের অধীনে বসবাস করছে। তারা মানুষকে বলে দিচ্ছে- ইফতারে মানুষ ফল খাবে নাকি খেজুর খাবে। এটা অনেক দুঃখ-যন্ত্রণা ও বেদনার।


সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এসব কথা বলেন।


তিনি বলেন, আপনারা অনেকে অনেক কথা বলতে চান; কিন্তু সবসময় সব কথা না বলা ভালো। সত্য কথা বলারও সময় আছে। সত্য কথা বলতে গেলে কখনো কখনো বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এই মুহূর্তে সব সত্য কথা বলার সময় আসেনি, সেই পরিবেশও তৈরি হয়নি। কারণ আমরা একটা লড়াইয়ের ময়দানে আছি। কারণ আমাদের এখানে ভালো, মন্দ খোঁজার থেকে লড়াইয়ের মাঠে সমাগমটা বড় করাই বড় কথা। যদিও ঐক্যবদ্ধ, প্রতিশ্রুতিশীল গুটি কয়েক লোক এক হলে যা জয়লাভ করা যায়, তা কমিটমেন্ট নাই এমন হাজার মানুষ দিয়েও কোনো যুদ্ধ বা সংগ্রামে লড়াই করে জয়ী হওয়া যায় না। ইফতারে মানুষ বরই খাবে না খেজুর খাবে, সেই কথা ঠিক করে দেওয়া একটা অর্বাচীন সরকারের অধীনে দেশের মানুষ বাস করছে। এর চেয়ে পীড়াদায়ক, যন্ত্রণাদায়ক, অপমানজনক আর কিছু একটি রাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য হয় না।


তিনি আরও বলেন, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের জীবন খুব ছোট না। খুব অল্প সময়ে তিনি সবার উপরে উঠতে পেরেছিলেন। বাকি সময় তিনি নানাবিধ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে চাপা পড়েছিলেন। তিনি তার অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক জ্ঞান প্রকাশ করার জন্য যথেষ্ট বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। তার অনেক ধৈর্য ও সাহস ছিল। আমরা কেমন আছি সেটা সবাই জানে। যারা ক্ষমতায় আছে তারা কেমন আছে, তা কেউ জানে না কিন্তু তারা জানে। তারা ভালো নেই। আর ভালো নেই বলেই মাঝে মাঝে আবোল-তাবোল কথা বলে। তাতে আমাদের কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। বরং এটাকে যদি অনুধাবন করতে পারি, তাহলে আমাদের মধ্যে ঐক্য বাড়বে, পথচলাটা সঠিক হবে।


তিনি আরও বলেন, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন অনেক জয় করেছেন। দলের অভ্যন্তরের সব ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলায় জীবনের শেষ প্রান্তে দেখিয়ে গিয়েছেন, তিনি ছোট নন। তিনি অনেক বড়, অনেক গুণী, অনেক জ্ঞানী, অনেক সাহসী। তাই তিনি ছেড়ে দিতে পারছেন।


অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আন্দোলনকে সংগঠিত করে নিজেকে বাঁচিয়ে জেলের বাহিরে থাকা যে কষ্ট জেলের ভিতর থাকার কষ্টের চেয়ে কোনো অংশে কম না। জেলে থাকলে রাতে তো একটু ঘুম হয়; কিন্তু যারা বাহিরে থাকে তাদের রাতের ঘুম হয় না। একটু শব্দ করলেই মনে হয় তারা এলো। আন্দোলনটা এখনো শেষ হয়নি। একটি স্বাভাবিক বাংলাদেশ তৈরি করতে একটি গুণগত পরিবর্তন দরকার। একটি সুষ্ঠু বাংলাদেশ তৈরি করার জন্য যে ব্যবস্থা দরকার সেটা এখনো হয়নি।


তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা গৌরবের বিষয় না। স্বল্প সময় ক্ষমতায় থেকে কিভাবে গৌরবের বিষয় হতে হয় তা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া দেখিয়ে দিয়েছেন। যারা ক্ষমতায় আছেন তার প্রতিনিয়ত বুঝতে পারছেন ক্ষমতা কত কষ্টের। কত আতঙ্কের। বিদায় হলে কি পরিস্থিতি হবে। যারা এখন ফুলের মালা নিচ্ছেন তাদের বলি ফুলের মালা কখনো কখনো ফাঁসির দড়িও হতে পারে। এটি যদি রাজনীতিবিদরা বিশেষ করে যারা ক্ষমতায় আছেন স্মরণে রাখেন তাহলে ভালো হয়।


তিনি বলেন, বর্তমান যে বাংলাদেশ এই বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। যে দেশের জন্য ৩০ লাখ মানুষ আত্মহুতি দিয়েছিলেন। লাখ লাখ মা বোনের সম্ভ্রমহানি হয়েছে। সেই দেশে একটি মানুষ তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে না। একজন মানুষ তার আত্মীয়স্বজন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে স্বাধীনভাবে ইফতার করতে পারে না। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। সেই বাংলাদেশ এই বাংলাদেশ না।


বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমি খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের স্মৃতিচারণকে গুরুত্ব দেই না। গুরুত্ব দেই খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মতো ওই সময় যারা ছিলেন তাদের প্রাপ্তিটা কী? এটা নিয়ে দুঃখ থাকতে পারে তার চেয়ে বড় দুঃখ হচ্ছে আমরা কতটা তাকে ধারণ করেছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বাংলাদেশ টেলিভিশনে গিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী চোর তার ছেলে চোর তাদের দায়িত্ব আমরা নেব কেন। বর্তমানে তারাও বিএনপির ভালো ভালো পদে আছে। সেখানে আমার ক্ষোভ, কে কি করল সেটা বিষয় না। প্রয়োজন হলে আমরা আরও করব।


যুবদলের সাবেক সভাপতি বলেন, আমরা কাকে কেন্দ্র করে রাজনীতি করছি? বেগম খালেদা জিয়া হচ্ছেন বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী দলের বর্তমানের সূর্য। এই সূর্য থেকে আলো ধার করে নিয়ে চন্দ্র তারা নক্ষত্র আমরা যারা আছি তারা চলি। আমরা ব্যক্তিগতভাবে কেউ কিছু না। খোন্দকার দেলোয়ার সেই সময়ে নক্ষত্র, হরতাল অবরোধের মধ্যে একজন নেতাকে সাথে করে নিয়ে হাজার হাজার পুলিশের মাঝখান দিয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌলার মতো হেঁটে বিএনপির পার্টি অফিসে গিয়েছেন। ওরকম নেতা এর পরে আর পায় নাই। আমরা ধারণও করতে পারি নাই। এই ধারণ করার বিষয়টা বেশি করে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।


কবি আবদুল হাই শিকদারের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় আরও বক্তৃতা করেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য জয়নুল আবেদিন ফারুক, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলী সদস্য জয়নুল আবেদিন ফারুক, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডাক্তার মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।


শেয়ার করুন