২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে পারিবারিক শিক্ষা ব্যয় আগের বছরের তুলনায় প্রাথমিক স্তরে বার্ষিক ২৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরে ৫১ শতাংশ বেড়েছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
গণসাক্ষরতা অভিযান পরিচালিত ‘বাংলাদেশে বিদ্যালয় শিক্ষা মহামারী উত্তর টেকসই পুনরুত্থান’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এডুকেশন ওয়াচ-২০২৩ শিরোনামে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন ও জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, গবেষণা দলের প্রধান ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ বক্তব্য দেন।
প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক ও গবেষক দলের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। আরও বক্তব্য দেন গবেষণার পর্যালোচক আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী, গবেষক দলের সদস্য সৈয়দ শাহাদাত হোসাইন, মো. আহসান হাবিব।
গবেষণার তথ্য বলছে, সামগ্রিকভাবে ২০২১ সালে সর্বস্তরে প্রায় ৪৪ মিলিয়ন শিক্ষার্থীর (কওমি মাদ্রাসা ব্যতীত) মধ্যে ৪২ শতাংশ সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ৩৮ শতাংশ সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং ২০ শতাংশ প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিশুদের শিক্ষার জন্য পারিবারিক ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
মুদ্রাস্ফীতির ক্রমবর্ধমান ধারা, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক ফি, প্রাইভেট টিউটর, পরিবহন, শিক্ষা উপকরণ ও স্টেশনারিসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট পারিবারিক খরচ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
২০২২ সালের জানুয়ারি-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিশুর শিক্ষার জন্য বার্ষিক পারিবারিক গড় ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৮৮২ টাকা, যেখানে গ্রাম ও শহরে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। একই সময়ে মাধ্যমিক স্তরের একজন শিক্ষার্থীর জন্য পরিবারের ব্যয় ছিল ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। উভয় স্তরেই প্রধানত ব্যয় হয়েছে প্রাইভেট টিউটরের বেতন ও গাইডবই বা নোটবই বাবদ।
২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে পারিবারিক শিক্ষা ব্যয় আগের বছরের (২০২২) তুলনায় প্রাথমিক স্তরে বার্ষিক ২৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরে ৫১ শতাংশ বেড়েছে।
প্রাথমিক স্তরে প্রায় ৪১ শতাংশ অভিভাবক এবং মাধ্যমিক স্তরে ১৭ শতাংশ অভিভাবক বলেছেন, প্রতি সন্তানের জন্য তাদের মাসিক ব্যয়ের সামর্থ্য ছিল ২ হাজার টাকার মধ্যে, যা ২০২২ ও ২০২৩ সালের গড় ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম।
শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিক্ষার্থীরা উপার্জনের মাধ্যমে তাদের পরিবারে আর্থিক অবদান রাখে, যা তাদের ঝরে পড়ার কারণ হিসেবে দারিদ্র্যকেই নির্দেশ করে। ঝরেপড়ার কারণসমূহ দূর করতে এবং স্কুলে কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে স্কুলের লেখাপড়ার মান গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে এবং তা পরিবারের জন্য সাশ্রয়ী হতে হবে।
সুপারিশে বলা হয়, পারিবারিক সহায়তা এবং শিক্ষা ব্যয়ের বোঝা কমানো প্রাইভেট টিউটরিং, কোচিং, বাণিজ্যিক গাইডবই এবং বিভিন্ন স্কুল ফি-র ক্রমবর্ধমান খরচ পরিবারগুলোর ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করেছে, যা বৈষম্য এবং শিক্ষাবঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা এবং পরিবারের ওপর অর্থনৈতিক বোঝা কমানোর লক্ষ্যে শিক্ষায় ন্যায়সঙ্গত সুযোগের জন্য পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
এই পদক্ষেপগুলো হলো:
মনিটরিং ও গাইডেন্স: শ্রেণিকক্ষের কার্যক্রমের মনিটরিং, প্রাইভেট টিউটরিং এবং গাইডবই নির্ভরতা কার্যকরভাবে হ্রাস করা। অভিভাবক ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের মুখস্থভিত্তিক শিখন থেকে নিবৃত্ত করে প্রকৃত জ্ঞান আরোহণের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করা।
পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীর জন্য বাড়তি সহায়তা: যারা পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ছে তাদের জন্য অতিরিক্ত পাঠ এবং চাহিদাভিত্তিক সহায়তা দিয়ে সফল হতে সাহায্য করা।
ফি নিয়ন্ত্রণ: স্কুলকর্তৃক আরোপিত আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক ফি নিয়ন্ত্রণ এবং দূর করার জন্য বিধান কার্যকর করা, যা পরিবারের ওপর আর্থিক বোঝা কমাতে এবং শিক্ষায় আরও বেশি সুযোগ তৈরি করতে সাহায্য করে।
স্কুল মিল কর্মসূচির সম্প্রসারণ: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল মিল কর্মসূচি প্রবর্তন ও সম্প্রসারণ করা এবং সরকারি বাজেটের সহায়তায় মাধ্যমিক স্তরে ভর্তুকিযুক্ত পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা। এই উদ্যোগের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মোকাবিলা এবং তাদের শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সুস্থতা বাড়ানো।