২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:৩২:৫৫ অপরাহ্ন
যমুনার ওপর পূর্ণগতিতে ট্রেন ছুটবে ডিসেম্বরে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৫-২০২৪
যমুনার ওপর পূর্ণগতিতে ট্রেন ছুটবে ডিসেম্বরে

ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের কিছু অংশে ট্রেন চলাচলের এখন একটিই পথ—যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু। কিন্তু সেতুর সক্ষমতা কমে যাওয়ায় এর ওপর ট্রেনের গতি থাকে মাত্র ২০ কিলোমিটার। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার সেতু পার হতেই লেগে যায় ২৫ মিনিটের মতো। সেতুর ওপর একটি লাইন হওয়ায় দুই পারের স্টেশনে সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সব মিলিয়ে মাত্র ৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে লেগে যায় এক ঘণ্টার বেশি।


তবে আগামী ডিসেম্বর থেকে এই অবস্থা থাকবে না বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ, বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর পাশেই দাঁড়িয়ে গেছে দেশের সবচেয়ে বড় রেলপথ সেতু বঙ্গবন্ধু সেতু। দুই লাইনের ডুয়েলগেজ সেতু হওয়ায় এই পথে আর সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। ট্রেনও ছুটতে পারবে সর্বোচ্চ গতিতে। এরই মধ্যে সেতুর ৮৪ শতাংশ কাজ শেষ। বাকি ১৬ শতাংশ কাজ শেষে ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুটি উদ্বোধনের পরিকল্পনা করেছে কর্তৃপক্ষ।


রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল সূত্র বলেছে, রেল যে সময়সূচির জটিলতায় পড়েছে, তার অন্যতম কারণ বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুতে সিগন্যাল জটিলতা ও ট্রেনের কম গতি। উত্তরবঙ্গের প্রধান তিন রুটের শেষ গন্তব্য পঞ্চগড়, বুড়িমারী, কুড়িগ্রাম রুটে ঢাকা থেকে ট্রেনের স্বাভাবিক সময়সূচিতেই পৌঁছাতে ১০ ঘণ্টার বেশি লেগে যায়। ঈদ কিংবা সূচি বিপর্যয় হলে যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। বঙ্গবন্ধু রেলসেতু উদ্বোধন হলে এ রুটে গড়ে সময় বাঁচবে এক ঘণ্টা। ক্রসিংয়েও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করা লাগবে না। ফলে ভোগান্তির হাত থেকে বেঁচে যাবেন রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলা এবং খুলনা বিভাগের ১০ জেলার যাত্রীরা।


রেলের তথ্যমতে, বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার এই রেলসেতুতে ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন ছুটতে পারবে। তবে শুরুতে (উদ্বোধনের এক বছর) ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে। সেতু পার হতে সাড়ে তিন থেকে চার মিনিট লাগবে।


এ ব্যাপারে প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, রেলসেতুর প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হচ্ছে। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।


রেল কর্তৃপক্ষ বলেছে, বর্তমানে ৪৮টি ট্রেন বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু ব্যবহার করলেও বঙ্গবন্ধু রেলসেতু উদ্বোধন হলে প্রায় দ্বিগুণ ট্রেন চলাচল করবে। অর্থাৎ ৮৮টি ট্রেন চলবে এ পথে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় চলবে পণ্যবাহী ট্রেন। ফলে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকায় পণ্য পরিবহন সহজ হবে।


রেলপথ মন্ত্রণালয় বলেছে, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময় সে দেশের সরকার এ প্রকল্পে অর্থায়নে সম্মত হয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া প্রকল্পে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নসহ বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নির্মাণব্যয় ধরা হয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) এ সেতু নির্মাণে ৭ হাজার ৭২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। ২০১৭ সালের মার্চে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন শেষ হয়। এরপর প্রথম দফা ডিপিপি সংশোধনের পর সেতুর নির্মাণব্যয় ৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা হয়। ২০২৪ সালের আগস্টে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়।


সেতুর প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান গত রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, সেতুতে ৫০ শতাংশ রেললাইন বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন ড্রেনের কাজ ও কালভার্টগুলোর কাজ শেষ। এখন ট্র্যাক লাইন বসানো, সিগন্যালিংসহ অন্যান্য কাজ চলছে। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানিগুলো কাজ করছে। দুই পাশের স্টেশন বিল্ডিংয়ের কাজ, প্ল্যাটফর্ম স্থাপনের কাজও চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যে সব কাজ শেষ করে অপারেশনে আসতে পারবে সেতু। তবে যাত্রী চলাচল শুরু হতে জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।


শেয়ার করুন