চট্টগ্রামে নির্মীয়মাণ বে টার্মিনাল প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা দূর হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে চার গুণ বড় এই প্রকল্পে দীর্ঘদিন ধরে এই জটিলতা ছিল। এখন বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ৫০০.৭০ একর খাসজমি প্রতীকী মূল্য তিন কোটি তিন টাকায় বরাদ্দ দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
গত ১২ মে ওই অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ভূমি বন্দোবস্তি খাতে পরিশোধ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
১৩ মে সকালে চালানসহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় প্রকল্প বে টার্মিনাল। এখন বে টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম পূর্ণ গতিতে এগিয়ে নিতে আর কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
অথচ ব্যবসায়ীরা এক দশক ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন, বে টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বন্দরের সেবা বর্তমানের তুলনায় অনেক বাড়বে।
সেখানে ২৪ ঘণ্টা বড় জাহাজ ভেড়ানো যাবে। কনটেইনার ও পণ্য খালাস করে শহরে না ঢুকেই দেশের নানা স্থানে নেওয়া যাবে। বন্দর ব্যবহারের খরচ কমবে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ২০১৫ সালে বে টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এরপর ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটি আটকে ছিল ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায়। এর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় সংশোধনের পর প্রকল্পটির মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত বছরের ১৪ নভেম্বর প্রকল্পটির চূড়ান্ত মাস্টারপ্ল্যানের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কোনো সুরাহা হয়নি।
এদিকে অগ্রাধিকারভিত্তিক এই প্রকল্পের জন্য সাত বছর আগে ৬৭ একর ভূমি বরাদ্দ পেয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর।
কিন্তু প্রকল্পের প্রয়োজন ছিল আরো ৫০০ একর জমি। ওই জমি বরাদ্দ পেতে কেটে যায় আট বছর। অবশেষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বে টার্মিনালের জন্য ৫০০.৭০ একর খাসজমি বরাদ্দ দেওয়ার সুপারিশ করে। এই জমির মূল্য এক হাজার ২৪১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে গত ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মাত্র তিন কোটি তিন টাকার প্রতীকী মূল্যে এই জমি বরাদ্দের অনুমোদন দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ২ মে বন্দর কর্তৃপক্ষকে এই টাকা পরিশোধ করার জন্য চিঠি দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। চিঠিতে চট্টগ্রাম নগরীর কাট্টলী, আগ্রাবাদ ও পতেঙ্গা সার্কেলের অধীনে বরাদ্দকৃত ভূমির বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়। চিঠি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষকে এই টাকা পরিশোধ করতে হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) মোহাম্মদ শিহাব উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের আলোচিত ও সবচেয়ে বড় বে টার্মিনালের জন্য সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত ৫০০.৭০ একর ভূমির মূল্য বাবদ সরকারের বন্দোবস্তি খাতে তিন কোটি তিন টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। তিনটি পৃথক মৌজায় এই ভূমি রয়েছে। এর মধ্যে নগরীর দক্ষিণ কাট্টলী মৌজায় ৬২.২২ একর, উত্তর হালিশহর মৌজায় ৩৩৯.২৬ একর এবং হালিশহর মৌজায় ৯৯.২১ একর খাসজমি রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে এই টাকা পরিশোধ করে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে বে টার্মিনালের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত হিসেবে ৫০০.৭০ একর খাসজমি পাওয়া গেছে। গত ১২ মে খাসজমির জন্য প্রতীকী মূল্য তিন কোটি তিন টাকা ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। গত ১৩ মে চালানসহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। খুব শিগগির জেলা প্রশাসন আমাদের জায়গা বুঝিয়ে দেবে। এর পরপরই পুরোদমে শুরু হবে বে টার্মিনালের নির্মাণকাজ।’
পরিকল্পনা অনুযায়ী, বে টার্মিনাল প্রকল্পে যে চারটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে এর মধ্যে বহুমুখী টার্মিনাল নির্মাণের জন্য আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার জন্য সমঝোতা স্মারক সই করেছে। এ ছাড়া একই প্রকল্পে সিঙ্গাপুরের পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল একটি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড একটি টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা করবে। এ জন্য প্রতিষ্ঠান দুটি ১৫০ কোটি ডলার করে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে ইস্ট কোস্ট গ্রুপ। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে গ্যাস ও তেল খালাসের টার্মিনালে ৩৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চায় গ্রুপটি। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত বে টার্মিনাল প্রকল্পে টার্মিনাল ও সুযোগ-সুবিধা নির্মাণে ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে।