২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:০৬:১৫ অপরাহ্ন
উচ্চ আদালতে অনুমোদনের অপেক্ষায় মৃত্যুদণ্ড
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৭-২০২২
উচ্চ আদালতে অনুমোদনের অপেক্ষায় মৃত্যুদণ্ড

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মামলায় বিচারিক আদালতের রায় হয়েছে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর। রায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। কিন্তু রায়ের দুই বছর সাত মাস অতিবাহিত হলেও এখনও উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) শুনানি হয়নি। শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবে ইতোমধ্যে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) প্রস্তুত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শিগগিরই শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বুধবার যুগান্তরকে বলেন, হলি আর্টিজান মামলার পেপারবুক ছাপার কাজ শেষ হয়েছে। এখন যাচাই-বাছাই চলছে, আরও কিছু আনুষঙ্গিক কাজ রয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষ হলেই সিদ্ধান্ত হবে কখন শুনানি হবে। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানি হচ্ছে কিনা-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে নৃশংস হামলা চালায় জঙ্গিরা। তারা অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। ভয়াবহ ওই হামলার ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে পড়ে পুরো দেশ। সেদিন জঙ্গিরা কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে। যাদের মধ্যে ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি, ১ জন ভারতীয় ও ৩ জন বাংলাদেশি। সেই রাতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন।

ওই জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলার বিচার শুরুর এক বছরের মাথায় বিচারিক আদালত ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর রায় দেন। রায়ে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান আট আসামির মধ্যে সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে খালাস দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হল-রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান ওরফে রাফিউল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান সাগর ওরফে সাগর, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ। তারা সবাই কারাগারে রয়েছে। আর খালাস পাওয়া মিজানুরও অন্য মামলায় কারাগারে রয়েছে বলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

এরপর বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলার যাবতীয় নথিপত্র ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছে, যা একটি ক্রমিকে ডেথ রেফারেন্স হিসাবে সংশ্লিষ্ট শাখায় নথিভুক্ত হয়। আইন অনুসারে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকর করতে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। এটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসাবে পরিচিত। বিচারিক আদালতের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জেল আপিল ও আপিল করতে পারে। সাধারণত ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে।

জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা মামলাটি হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। শিগগিরই রাষ্ট্রপক্ষ থেকে শুনানির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, এ মামলাটি নথিভুক্ত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট শাখা পেপারবুক (চার-পাঁচ হাজার পৃষ্ঠার) তৈরি করে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তা ছাপানোর জন্য সরকারি ছাপাখানায় পাঠায়। এর সঙ্গে দণ্ডিত সাত আসামির জেল আপিল ও দুটি নিয়মিত আপিলও রয়েছে। নিয়মানুযায়ী পেপারবুক তৈরির পর বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নজরে আনা হয়ে থাকে। এরপর তিনি হাইকোর্টের যে বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেবেন সেই বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স শুনানি হয়।

আইনজীবীরা জানান, সাধারণত বছর ও মামলার ক্রম অনুসারে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হয়ে থাকে। তবে গুরুত্ব বিবেচনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতেও ডেথ রেফারেন্স শুনানি হয়ে থাকে। ডেথ রেফারেন্সের শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরি করা হয়। আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, চলতি বছরের মে পর্যন্ত ৯০৫টি ডেথ রেফারেন্স মামলা বিচারাধীন। এখন ২০১৫ ও ২০১৬ সালে আসা ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলছে। সে হিসাবে হাইকোর্টে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা মামলাটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শুনানি হতে পারে ২০২৫ সালে। হাইকোর্টের রায়ের পর আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে সময় লাগতে পারে আরও ৫ বছর।

শেয়ার করুন