রাজশাহীতে ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে ডেঙ্গুর কারণে । রাজশাহীসহ আশেপাশের জেলা উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বাড়তে থাকায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) পৃথক ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।
গত আগষ্ট থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আসা শুরু হয় রামেক হাসপাতালে। গত দুই মাসের তুলনায় চলতি অক্টোবরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে কয়েকগুণ হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন , ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বেশি রোগী আসছে নগরীর বাইরের এলাকা থেকে। রাজশাহীর আশেপাশের জেলাগুলি থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছে। নগর থেকে গ্রাম-সর্বত্রই এডিস মশার প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী সিভিল সার্জনের দপ্তর।
রামেকের সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছে।
চলতি ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ৩৭৯ জন রোগী চিকিৎসার জন্য রামেকে ভর্তি হয়েছেন। এখনো ৫১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সম্প্রতি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন।
সোমবার দুপুরে তিনি বলেন , প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত অনেক রোগী রামেক হাসপাতালে আসছেন। রাজশাহীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে গেছে। মশার উপদ্রব বাড়ায় ডেঙ্গু রোগীরও সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ডেঙ্গুর ধরণ বিবেচনা করে চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিচ্ছেন।
রামেকের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মৌসুমে শুধুমাত্র ঢাকা ফেরতরাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু এবার খোদ স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা অধিক। রাজশাহী জেলার মধ্যে এ পর্যন্ত সর্বাধিক ১৫৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন শুধুমাত্র চারঘাট উপজেলায়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছেন ৩৮৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। এর মধ্যে ২৪৩ জন নিজ এলাকাতেই আক্রান্ত হয়েছেন।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের গেল সাত দিনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে- চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রোগী ১৫ জন ও চারঘাট উপজেলা থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৫ জন। রাজশাহী বিভাগ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও উপজেলায় চারঘাটে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। গত বছরও চারঘাট ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। এই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার কালুহাটি গ্রামের আম্বিয়া বেগম (৬০) সম্প্রতি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। তিনি প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নেন। তাতে উন্নতি না হওয়ায় গত ৯ অক্টোবর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এখনো তিনি চিকিৎসাধীন। আম্বিয়া বেগমের ছেলে মনিরুল ইসলাম জানান, তাদের গ্রামের অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ৬ অক্টোবর রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য আসেন ৪৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। সর্বশেষ গত ১৩ অক্টোবর এসেছেন ৫৬ জন। অক্টোবরে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫৭ জন। তবে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৫ জন। চলতি মৌসুমে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তিনজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তারা সকলেই রাজশাহী জেলার বাসিন্দা।
এই বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস জানান , চলতি বছর স্থানীয়ভাবে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ডেঙ্গুতে। বিগত বছরগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ঢাকায় ভ্রমণের ইতিহাস ছিল। কিন্তু এ বছর নেই। তাতে ধারণা করা যাচ্ছে, স্থানীয়ভাবে মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। রাজশাহীর সিভিল সার্জন আবু সাঈদ ফারুক বলেন, গত বছর রাজশাহী জেলার মধ্যে চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ছিল। এবার চারঘাট উপজেলায় বেশি। আমরা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রেকে নির্দেশ দিয়েছি ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. রোজী আরা খাতুন জানান , ডেঙ্গুর প্রধান উৎস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি। বাসা বাড়ির আশপাশে ঝোপঝাড় পরিস্কার করা ছাড়াও কোথাও পানি জমে না থাকে সেজন্য নাগরকিদের সচেতন করছি। প্রতিটি জেলার স্বাস্থ্য বিভাগকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে।