সরাসরি উৎপাদক পর্যায় থেকে আড়তে ডিম সরবরাহের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে রাজধানীর বাজারে। প্রতি ডজন ডিমে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ডিম উৎপাদক পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে কয়েক হাত বদল হয়। এজন্য দাম বেড়ে যায়। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি ডিমের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। যে কারণে উৎপাদক ও বড় খামারিরা অনেকটা বাধ্য হয়ে বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়িয়েছে। এই সূত্র বলেছে, বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার আরো সাড়ে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিচ্ছে।
রোববার (২০ অক্টোবর) ডিম আমদানির এই অনুমতি দেওয়া হবে। এদিকে বাজারে ডিমের দাম কমলেও সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার, সোনালি মুরগি ও চিনির দাম বেড়েছে। এছাড়া, সবজির বাজার এখনো চড়া।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, শান্তিনগর ও তুরাগ এলাকার নতুন বাজারে খোঁজ নিয়ে বিভিন্ন পণ্যের দামের এ তথ্য পাওয়া যায়।
গতকাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি ডজন ডিম ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ হিসাবে প্রতি হালি ডিমের দাম পড়ছে ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি ডজন ডিম ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) গতকাল তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে ডিমের দাম কমার তথ্যটি জানিয়েছে।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলর (বিপিআইসিসি) যুগ্ম-আহ্বায়ক মসিউর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, সাম্প্র্রতিক সময়ের পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিজনিত বন্যার কারণে দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ জেলার পোলট্রি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে দৈনিক প্রায় ৬০-৭০ লাখ ডিমের উৎপাদন কমে গেছে। ফলে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, দেশের এ সংকটকালীন একটি মহল অতিরিক্ত মুনাফা লোটার চেষ্টা করলে ডিমের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। এ প্রসঙ্গে ‘ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (বিএবি)-এর সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বলেন, খামার থেকে ভোক্তার হাতে ডিম পৌঁছাতে সাত হাত বদল হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ডিমের দাম বৃদ্ধির কারণে বেশ কিছু এলাকায় কিছু অপেশাদার লোকজনও ডিমের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। এতে হাত বদলের সংখ্যা আরো বেড়েছে।
তিনি বলেন, যত হাত বদল হবে, দাম ততই বাড়বে। তাই আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে—উৎপাদিত ডিম সরাসরি আড়তে পৌঁছে দেওয়া। আশা করছি, এতে ডিমের দাম আরো কমবে। এদিকে ডিমের দাম কিছুটা কমলেও গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতে ১০ টাকা বেড়ে গতকাল তা ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে গতকাল তা ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তুরাগ এলাকার নতুন বাজারের মুরগির বিক্রেতা জামাল বলেন, হঠাত্ করেই বাজারে মুরগির সরবরাহ কমেছে। পাইকারি বিক্রেতারা জানিয়েছে বন্যা ও বৃষ্টির কারণে মুরগির সরবরাহ কম।
এদিকে বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সবজির দাম কিছুটা কমলেও এখনো তা চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পটোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৮০, বরবটি ৮০ থেকে ১০০, গোল বেগুন ১৩০ থেকে ১৪০, লম্বা বেগুন ১০০ থেকে ১২০, টমেটো ১৮০ থেকে ১৯০, ধুন্দল, ঝিঙ্গে ও চিচিঙ্গা ৮০ থেকে ১০০ ও করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে কাঁচা মরিচের দামে। ৪০০ টাকায় উঠে যাওয়া কাঁচা মরিচ গতকাল বাজারে ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার সরকার পরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেও উলটো এক দিনের ব্যবধানে বাজারে পণ্যটির দাম বেড়েছে। গতকাল কেজিতে ২ টাকা বেড়ে তা ১২৭ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।