২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার, ১২:১৯:৪৫ পূর্বাহ্ন
পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে রিটের রায় আজ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-১২-২০২৪
পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে রিটের রায় আজ

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতার প্রশ্নে দায়েরকৃত দুটি রিটের ওপর আজ মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করবে হাইকোর্ট। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করবে। দুটি রিটের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার জন্য ১৭ ডিসেম্বর দিন ধার্য করে দেয়। সেই মোতাবেক হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের আজকের কার্যতালিকার এক ও দুই নম্বর ক্রমিকে দুটি রিট আবেদন রায়ের জন্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।


প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করে। ২০১১ সালের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন রাষ্ট্রপতি। এই সংশোধনীর মধ্য দিয়ে বাতিল করা হয় নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের আয়োজন করা হয় দলীয় সরকারের অধীনে। এই দলীয় সরকারের অধীনে বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ সরকার। সেসব নির্বাচন নানা সমালোচনার জন্ম দেয় দেশ ও বিদেশে। একতরফা ভোটের আয়োজন করায় নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের অনাগ্রহ তৈরি হয় নাগরিকদের মাঝে। দীর্ঘ দেড় দশক দলীয় সরকারের পরিবর্তে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে আন্দোলন করে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তাতে কোনো কর্ণপাত করেনি। শুধু নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই বাতিল করেনি, সংবিধানের প্রায় ৪০-এর অধিক অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়েছে এই সংশোধনীর মধ্য দিয়ে।


পঞ্চদশ সংশোধনীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়। পুনর্বহাল করা হয় সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। এছাড়া সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের পরে ৭(ক)(খ) অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, সংবিধান বহির্ভূতপন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করলে তা হবে রাষ্ট্রদ্রোহিতা। তবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখা হয়।


গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে দুটি রিট আবেদন দায়ের করা হয়। প্রথম রিট আবেদনটি করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, শিক্ষার্থী জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। এছাড়া মো. মোফাজ্জল হোসেন নামের এক মুক্তিযোদ্ধা এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আরেকটি রিট করেন। দুটি রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। রুলে পঞ্চদশ সংশোধনীকে কেন অবৈধ, সংবিধান পরিপন্থী ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এই রুলের ওপর দীর্ঘ শুনানিতে রিটকারী পক্ষ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এবং রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা অংশ নেন।


শেয়ার করুন