বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বেচাকেনায় নিলাম পদ্ধতি চালুর বিষয়ে আলোচনা করছে বলে জানা গেছে। যদিও এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
জানা গেছে, রমজান সামনে রেখে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এলসি খোলায় উৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে দেশের মূল্যস্ফীতি দীর্ঘদিন ধরে দুই অঙ্কের ঘরে রয়েছে। এ সময় ডলারের দর আরও বাড়লে মূল্যস্ফীতিতে চাপ বাড়তে পারে। যে কারণে ডলারের দরে খুব একটা ওঠানামা হোক, তা চায় না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ডলার দরে ওঠানামা না থাকায় প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বেচাকেনায় নিলাম পদ্ধতি চালুর বিষয়ে আলোচনা করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে অর্থ পাচার ঠেকাতে নানা কঠোরতা আরোপের কারণে হুন্ডি অনেক কমেছে। যে কারণে চলতি অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে রেমিট্যান্সে ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আবার রপ্তানি বেড়েছে ১২ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কেনার পাশাপাশি আগের অনেক দায় পরিশোধের ব্যবস্থা করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ ডিসেম্বর আইএমএফের বিপিএম৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। গত ১১ ডিসেম্বর যা ছিল ১৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। এর আগে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) দেড় বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর গত ১১ নভেম্বর রিজার্ভ নেমেছিল ১৮ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে। বিগত সরকারের শেষ দিকে প্রতি মাসে গড়ে ১৩০ কোটি ডলার করে রিজার্ভ কমছিল। বিপিএম৬ থেকে আগামী একবছরের দায় বাদ দিয়ে নিট রিজার্ভের হিসাব হয়। বর্তমানে নিট রিজার্ভ ১৫ বিলিয়ন ডলারের কম রয়েছে। ফলে আইএমএফ নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য গ্রস রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, অনেক দিন ধরে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি হচ্ছে না। উল্টো বাজার থেকে কেনা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে চাপে ফেলে ডলার কিনছে, তেমন নয়। যেসব ব্যাংকের কাছে উদ্বৃত্ত ডলার রয়েছে, তারাই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে।
বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, রমজানকে সামনে রেখে এখন বড় অনেক এলসি হচ্ছে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইছে আগের বকেয়া যেন না থাকে। এসব কারণে ডলারের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। এর বাইরে এখন বড় এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো প্রবাসীদের সব ডলার কিনে ফেলছে। তারা বাড়তি দর চাইলেও অনেক ক্ষেত্রে কিছু করার থাকছে না। আগে ছোট ছোট এক্সচেঞ্জ হাউসের সঙ্গে দর কষাকষি করা সহজ ছিল। চাহিদা বাড়লেই ডলারের দর বৃদ্ধিওর এটিও এখন একটি কারণ।
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ উঠেছিল ২০২১ সালের আগস্টে। তখন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৮ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার। তবে করোনা-পরবর্তী অর্থনীতিতে বাড়তি চাহিদা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাই দিয়ে রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সময় ডলার বিক্রি করলেও দর ঠেকানো যায়নি। আবার অনেক ধরনের বকেয়া পরিশোধ না করে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। যে কারণে ওই সময়ে ডলার বিক্রি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ড. আহসান এইচ মনসুর গভর্নরের দায়িত্ব নিয়ে রিজার্ভ থেকে আপাতত কোনো ডলার বিক্রি করছে না। যে কারণে রিজার্ভ বাড়ছে।