২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২:৫৭:৫৭ অপরাহ্ন
যেসব শিক্ষার্থী সরকারের পতন ঘটিয়েছে তারাই এখন গণতন্ত্র পুনর্নির্মাণ করছে
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-১২-২০২৪
যেসব শিক্ষার্থী সরকারের পতন ঘটিয়েছে তারাই এখন গণতন্ত্র পুনর্নির্মাণ করছে

সম্প্রতি এক সন্ধ্যায়, একটি বাণিজ্যিক ভবনের প্রথম তলার নির্মাণাধীন একটি অফিসে (যার সিলিং থেকে তার ঝুলে ছিল এবং তখনও ফ্লোরের কাজ চলমান ছিল) বসে একদল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যৎ নির্মাণের পরিকল্পনা করছিলেন। কয়েক মাস আগে, তারা হাজারো জনতার সঙ্গে একত্রে আন্দোলনের মাধ্যমে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদ, বর্বর ও দুর্নীতিগ্রস্থ শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করেছিলেন।


যত জটিল বা কঠিন পরিস্থিতি হোক না কেন এই শিক্ষার্থীরা এখন তাদের এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে একটি দৃঢ় গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পুনর্গঠনের বিষয়ে সংকল্পবদ্ধ। তারা এমন একটি ব্যবস্থা কল্পনা করে, যেখানে থাকবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ যা কোনো নেতা অপসারণ করতে পারবে না।


“আমাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা এখন খুবই নমনীয় অবস্থায় রয়েছে,” বলছিলেন আরিফ সোহেল নামক ২৬ বছর বয়সী একজন ছাত্র সংগঠক। তিনি আশা প্রকাশ করেন, শিক্ষার্থীদের একত্রিত করে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন অর্জনের মাধ্যমে তারা একটি শক্ত বার্তা দিতে পারবেন: “আমরা স্থিতিশীল এবং অগ্রসরমান একটি দেশ চাই ।”


বাংলাদেশের জন্য কাজটি বেশ চ্যালেঞ্জিং- ৫৩ বছর আগে সহিংসতার মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া এই জাতি শুরু থেকেই অস্থির। এখন দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে একটি অনির্বাচিত ব্যক্তিবর্গের অভিনব সমন্বয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের উপর, যেখানে রয়েছেন উচ্চ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রসিদ্ধ পেশাজীবীগণ এবং শিক্ষাজীবনে সদ্য পা দেওয়া তরুণেরা, যারা ইতিহাসের সাথে সাথে নানামুখী প্রচণ্ড চাপ সামলে কাজ করে চলেছেন।


শেখ হাসিনার শাসনামলে নিপীড়িত একটি বড় রাজনৈতিক দল দাবি করছে যে, যেকোনো সংস্কার আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হওয়ার আগেই কয়েক মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। তীব্র মূল্যস্ফীতির কারণে তেল ও চালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বিধ্বস্ত জনগণের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। রাজধানী ঢাকায় প্রতিবাদের কারণে জনজীবনে বিঘ্ন ঘটছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর মুসলিমদের আক্রমণের খবরে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বেড়েছে। এবং পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। চরমপন্থী ইসলামের পুনরুত্থানেরও আশঙ্কা রয়েছে। পুরনো শাসনব্যবস্থা অপসারণ দ্রুত সম্ভব হলেও, নতুন একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থার পুনর্গঠন সময়সাপেক্ষ—এবং শিক্ষার্থী ও বিশেষজ্ঞগণের এই অন্তর্বর্তীকালীন দল সম্ভবত সেই সময় পাবে না।


 

 

অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বদানকারী নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের প্রধান ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম (২৬)। “এগিয়ে চলছে, এগিয়ে চলছে, এগিয়ে চলছে,” অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বদানকারী নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের প্রধান ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সরকারের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে এভাবে মত প্রকাশ করছিলেন।


আগস্টের ৫ তারিখে শেখ হাসিনার পতনের পর সরকার শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে ব্যস্ত ছিল, এমনটি উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, “দুই মাস ধরে দেশ স্থবির ছিল, এখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এবং আমাদের অর্থনীতি সুস্থ হয়ে উঠছে।”


২৬ বছর বয়সী আলম, আন্দোলনের নেপথ্যের মূল কারিগর দাবি করে বলেন, “একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিলুপ্তি এবং ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের’ ধারণার কথাটি আমারই ছিল।”


শেয়ার করুন