০৮ জানুয়ারী ২০২৫, বুধবার, ০৫:৩৫:৫২ অপরাহ্ন
পেঁয়াজের বাম্পার ফলন, দাম না পেয়ে হতাশ চাষিরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০১-২০২৫
পেঁয়াজের বাম্পার ফলন, দাম না পেয়ে হতাশ চাষিরা

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে এরপরও চাষিরা হতাশ। কারণ পেঁয়াজের ভাল দাম পাচ্ছেন না তারা। সোমবার (৬ জানুয়ারি) পদ্মার চরে চকরাজাপুর বাজারে খুচরা হিসেবে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এ বিষয়ে পদ্মার মধ্যে কালিদাসখালী চরের গোলাম মোস্তফা জানান, বর্তমানে যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, দাম না বাড়লে চাষ করে লাভবান হওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে। কারণ বীজ ও অন্যান্য দ্রব্য সার, কিটনাশক ঔষুধের দাম আগের চেয়ে অনেক বেশি। চলতি মৌসুমে যারা পেঁয়াজ আবাদ করেছেন, ইতোমধ্যে তারা বিক্রি করতে শুরু করেছেন।

কালিদাসখালী চরের মহিলা শ্রমিক জয়গন বেগম জানান, চলতি মৌসুমে আগাম জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন করে চরের অধিকাংশ চাষিরা লাভবান হয়েছেন। বর্তমানে পেঁয়াজ বিক্রি করে খরচের টাকা উঠানোই কঠিন হয়ে পড়ছে।

চকরাজাপুর চরের পেঁয়াজ চাষি বাবলু দেওয়ান জানান, দাম ভালো ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর ছয় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার যারা আগাম জাতের পেঁয়াজ চাষ করেছেন তারা আর্থিক ভাবে বেশি লাভবান হয়েছেন।

তবে এখন খরচ উঠবে না। মোকামে পেঁয়াজের যথেষ্ট চাহিদা আছে। কিন্তু দাম কম। সরকার যদি এলসি বা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না করে, তাহলে চাহিদা ও দাম থাকবে।

খায়েরহাট এলাকার পেঁয়াজ চাষি সুজন আলী জানান, পদ্মার চরে এক বছরের জন্য চার বিঘা জমি এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে লিজ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করি। বীজ, সার, লেবার চাষ বাবদ আরও এক লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্যে লাভ হবে না। এ নিয়ে চিন্তায় আছি।

উপজেলার চাঁদপুর গ্রামে জাকির হোসেন, পলাশী ফতেপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন, লিটন আলী, বজলুর রহমান, পাকুড়িয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম, সাবাজুল প্রামাণিক, সাইফুল ইসলাম, ফজলুল হক, কলিগ্রামের মহিদুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় ১ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাঁটা পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজের বীজ অনেক উচ্চ মূল্যে চাষিরা ক্রয় করে জমিতে বপন করেন।  প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন খরচ হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে বিঘা প্রতি পেঁয়াজ উৎপাদন ৪০-৬০ মণ হচ্ছে। বর্তমান বাজার মূল্যে ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে কৃষকের লোকসান হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।

পেঁয়াজ উত্তোলনের ভরা মৌসুম চলছে। এরপরও বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার কারণে চাষিরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই মুহূর্তে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ না করা হয়, তাহলে চাষিরা বিরাট লোকসানের মুখে পড়বে।

এরমধ্যে চাষিরা বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দাবিতে ২ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান জানান, উপজেলার সর্বত্র কম বেশি পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। উপজেলার দুটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে যে পরিমাণ পেঁয়াজ চাষ হয়েছে তার চেয়ে বেশি চাষ হয়েছে শুধু পদ্মার চরাঞ্চলে। এ বছর প্রথমের দিকে ভালো দাম পেয়েছেন চাষিরা। উপজেলায় পেঁয়াজ চাষ হয়েছে এক হাজার ৮৪০ হেক্টর।


শেয়ার করুন