২১ জানুয়ারী ২০২৫, মঙ্গলবার, ০৪:৪৪:২৪ অপরাহ্ন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, স্থগিত আবেদন কবে শুরু, যা বলছে প্রশাসন
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০১-২০২৫
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, স্থগিত আবেদন কবে শুরু, যা বলছে প্রশাসন

পোষ্য কোটা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদন স্থগিত করেছে প্রশাসন। এ পরিস্থিতিতে কবে নাগাদ আবেদন শুরু হতে পারে, সেটিও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে ভর্তি পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও প্রশাসন বলছে, নির্ধারিত সময়েই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে পরীক্ষা যদি কোনো কারণে পেছায়, তাহলে সেশনজটে পড়তে পারেন শিক্ষার্থীরা।


শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালেয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাতিলের সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। ৫ জানুয়ারি ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদন শুরু হওয়ার কথা ছিল। আগের দিন রাতে কোনো কারণ উল্লেখ না করেই এক বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন স্থগিত ঘোষণা করে প্রশাসন। উপাচার্যের ওই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে ৬ জানুয়ারি থেকে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রশাসন আলোচনার মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও তাঁরা আন্দোলনে অনঢ়। দাবি মানা না হলে পরীক্ষা, পরিবহনসহ জরুরি পরিষেবা বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে যথাসময়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।


বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ৫ জানুয়ারি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদন শুরুর কথা ছিল। আগামী ১২, ১৯ ও ২৬ এপ্রিল বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজশাহী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রংপুরের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে পোষ্য কোটা ইস্যুর আনুষ্ঠানিক সমাধান না হওয়ায় স্থগিত করা প্রাথমিক আবেদন শুরু করা যাচ্ছে না।


বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ৪ শতাংশ পোষ্য কোটা ছিল। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন ১ শতাংশ কমিয়ে সেটি ৩ শতাংশ নির্ধারণ করে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এটি প্রত্যাখ্যান করে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যান। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১ জানুয়ারি শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সন্তানদের জন্য বরাদ্দ পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিল করে শুধু সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। এতেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। পোষ্য কোটা সম্পূর্ণভাবে বাতিলের দাবিতে ২ জানুয়ারি সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সহ-উপাচার্য, প্রক্টর, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসকসহ দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর তাঁরা অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পান। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ওই রাতেই পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের ঘোষণা দেন উপাচার্য সালেহ্‌ হাসান নকীব।


এদিকে এ ঘোষণার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনে নামেন। তাঁরা মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট, পূর্ণদিবস কর্মবিরতিসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন।


বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, তাঁরা সব ধরনের অযৌক্তিক কোটার বিরুদ্ধে। ভর্তি পরীক্ষায় তাঁদের সন্তানেরা যে সুবিধা পেতেন, সেটি কোনো কোটা নয়—এটি তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার। এ দাবিতে তাঁরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছেন। অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার বহাল আছে। তাঁরাও এ সুবিধা ফেরত চান। তাঁদের ন্যায্য দাবি আদায় না হলে ভবিষ্যতে পরীক্ষা, পরিবহনসহ জরুরি পরিষেবা বন্ধ করে দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে যাবেন।


পোষ্য কোটা নিয়ে জটিলতার কারণেই প্রাথমিক আবেদন শুরু করা যাচ্ছে না উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোষ্য কোটা নিয়ে জটিলতার কারণেই প্রাথমিক আবেদন স্থগিত করা হয়েছে। আমরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে কোটা বাতিল ঘোষণার পরিস্থিতির বিষয়টি আলোচনায় তুলে ধরেছি। শিক্ষকেরা মাঠে না নামলেও পোষ্য কোটা বাতিলের বিপক্ষে অবস্থান জানিয়েছেন। সব নিয়ে একপ্রকার জটিলতার মধ্যে আছি। ভর্তি পরীক্ষা পেছানো নিয়ে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। ভর্তি পরীক্ষাবিষয়ক সব সিদ্ধান্ত হয় ভর্তি উপ-কমিটির সভায়। এখন পর্যন্ত কোনো সভার ডাক দেওয়া হয়নি। তবে দ্রুত প্রক্রিয়া শেষ করলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব।’


সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘পোষ্য কোটা বাতিলের প্রক্রিয়াটি একটু জটিল। তাই একটু সময় লাগছে। তবে এর জন্য ভর্তি পরীক্ষায় কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না। কারণ, এখনো অনেক সময় বাকি আছে।’


শেয়ার করুন