১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, মঙ্গলবার, ১১:৪৫:১০ অপরাহ্ন
হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলার মামলা: বিএনপির ৪ নেতা কারামুক্ত
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০২-২০২৫
হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলার মামলা: বিএনপির ৪ নেতা কারামুক্ত

পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার অভিযোগের মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া চার আসামি হাইকোর্ট থেকে খালাস পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।



মুক্তি পাওয়া চারজন হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র মোখলেসুর রহমান ওরফে বাবলু, জেলা বিএনপির সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক কেএম আখতারুজ্জামান, পৌর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও ঈশ্বরদী প্রেস ক্লাবের সভাপতি আজিজুর রহমান ওরফে শাহীন এবং বিএনপির স্থানীয় নেতা শামসুল আলম।



রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, বিচারিক আদালতের রায়ে  মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ৯ জনসহ ৪৭ আসামিকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি খালাস দেন হাইকোর্ট। এ মামলার চারজন ফাঁসির আসামি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি ছিলেন। হাইকোর্টের আদেশ কারাগারে পৌঁছানোর পর মঙ্গলবার তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে।



এদিকে বিএনপির এসব নেতাদের মুক্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল থেকেই গাড়িবহর নিয়ে ইশ্বরদীর বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে এসে অপেক্ষা করতে থাকেন। নেতাদের মুক্তির কিছুক্ষণ আগে কারাগারের সড়কসংলগ্ন ফটকটি খুলে দেওয়া হয়। তখন নেতাকর্মীরা কারাগারের সীমানার ভেতরে ঢুকে পড়েন। কারাগারের প্রধান ফটক থেকে চার বিএনপি নেতা বের হলে তাদের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় কারাপ্রাঙ্গণ।



কারাগার থেকে বের হয়ে সাবেক মেয়র মোখলেসুর রহমান উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, মিথ্যা মামলায় বহুকষ্টে কারাগারে ছিলাম আমরা। আয়নাঘরের মতো কনডেম সেল। প্রতিটি দিন কেটেছে অত্যন্ত কষ্টে। স্বৈরাচার পতনের পর ন্যায়বিচার পেলাম।



ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও ঈশ্বরদী প্রেস ক্লাবের সভাপতি আজিজুর রহমান ওরফে শাহীন বলেন, যে ঘটনায় রায় হয়েছিল, সেদিন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এতগুলো দিন আমাদের জীবন থেকে চলে গেছে। এখন সবাই মিলে সুন্দরভাবে বাকি দিনগুলো কাটাতে চাই।



মুক্তি পাওয়া বিএনপি নেতা শামসুল আলম বলেন, আমাদের সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ দিন পর হলেও আমরা আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছি।



মতিয়ুর রহমান রেন্টুর লেখা ‘আমার ফাঁসি চাই’ বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে মুক্তি পাওয়া কেএম আখতারুজ্জামান বলেন, সেদিন ঈশ্বরদীতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী সুষ্ঠুভাবে ঈশ্বরদী পার হন। ওই যে একজন মানুষ একটা বই লিখে গেছেন। ওই বইতে যা আছে সবই সত্য।



কারাগারের পরিবেশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আখতারুজ্জামান আরও বলেন, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের মধ্যে যারা বন্দি রয়েছেন, বিশেষ করে আমরা যারা ফাঁসির সেলে ৫ বছর সাত মাস ছিলাম, এত জঘন্য পরিবেশ। এই কারাগারের পরিবেশ ভালো করা উচিত। ভিজিটররা কেন আসে না। তারা মাসে একবার আসেন, কিন্তু সব ওয়ার্ডে যান না। ভিজিটররা কারা প্রশাসনের কাছে যান, চা-মিষ্টি খান, তারপর চলে যান। ওনাদের দায়িত্ব সব জায়গায় যাওয়া, কিন্তু যান না। এই কারাগারে যে অব্যবস্থাপনা তা দূর করা হোক- এটাই আমরা এখন চাই। সরকারের প্রতিনিধি যারা আসবেন তাদের কাছে এটা দাবি।



অন্যদিকে মুক্তি পাওয়া চারজনকে অভ্যর্থনা জানাতে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা প্রাঙ্গণে এসেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব।



তিনি বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এই রকম জঘন্য রায় আর হয়নি। কোনো ধরনের ঘটনা ছাড়াই, কেউ আহত হয়নি, কেউ নিহত হয়নি, সেই মামলায় ফাঁসি কেন? যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কেন? পৃথিবীর ইতিহাসে এমন রায় হয়নি। যে বিচারক এমন সাজা দিয়েছিলেন, সেই বিচারকের বিচার করতে হবে এবার।



উল্লেখ্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকাকালে পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে তাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ঈশ্বরদী রেলওয়ে পুলিশ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে তৎকালীন ছাত্রদল নেতা ও ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করেন। পরের বছর পুলিশ কোনো সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন; কিন্তু আদালত সেই অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে অধিক তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিতে পাঠায়।



১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মামলাটির পুনঃতদন্ত হয়। ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল পুলিশ ঈশ্বরদীর বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ ৫২ জনের নামে আদালতে  অভিযোগপত্র দেন। এরপর ২০১৯ সালের ৩ জুলাই রায় দেন পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রোস্তুম আলী।



রায়ে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ৪৭ আসামির সবাইকে খালাস দেন হাইকোর্ট। ইতোমধ্যে এই মামলায় কয়েকজন মৃত্যুবরণ করেছেন।


শেয়ার করুন