শবে বরাত, যা ‘লাইলাতুল বারাআত’ বা ‘মুক্তির রাত’ নামে পরিচিত, শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাত। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, এ রাতে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের ক্ষমা করেন, দোয়া কবুল করেন এবং অনুগ্রহ প্রদান করেন। বিশেষ এই রাত মুসলিম বিশ্বে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে পালন করা হয়। তবে শবে বরাতের ইবাদত ও আমল নিয়ে সমাজে কিছু প্রচলিত বিভ্রান্তি রয়েছে। তাই এ রাতে করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি।
শবে বরাতে করণীয়
এই রাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ফরজ ইবাদতের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। ইশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করা উচিত, কারণ রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এ দুই নামাজ জামাতে পড়ে, সে পুরো রাত ইবাদতের সওয়াব পায়।
নফল নামাজ পড়া যেতে পারে, বিশেষ করে তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত অত্যন্ত বেশি। কোরআন তিলাওয়াত করাও অত্যন্ত উত্তম কাজ, যা মানুষকে আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়।
এ রাতে মহান আল্লাহর কাছে তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ রয়েছে। নিজের পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করা উচিত। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, এই রাতে যারা আন্তরিকভাবে তওবা করে, আল্লাহ তাদের গুনাহ মাফ করেন।
শবে বরাতে দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করা যেতে পারে। ব্যক্তিগত ও পরিবারের কল্যাণ কামনায় দোয়া করা গুরুত্বপূর্ণ।
শবে বরাতে বর্জনীয়
শবে বরাত ইবাদতের রাত, তাই এতে কোনো ধরনের বিদআত বা হাদিসে বর্ণিত নয়—এমন কাজ পরিহার করা উচিত।
পটকা ফোটানো, আতশবাজি করা ও উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করা অনুচিত। এ ধরনের কাজ ইসলামের মূল আদর্শের পরিপন্থী।
এই রাতে বিশেষ খাবার রান্না করা বা হালুয়া-রুটির আয়োজনকে আবশ্যক মনে করা ঠিক নয়। ইবাদত ছেড়ে খাবার আয়োজনকে গুরুত্ব দেওয়া ভুল ধারণা।
বাড়ি, মসজিদ বা ধর্মীয় স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা অপচয় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যা ইসলাম সমর্থন করে না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা অপচয় কোরো না, নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৭)
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পুরো রাত নফল ইবাদতে ব্যস্ত থাকার পর ফজরের ফরজ নামাজ কাজা করা যাবে না। ফরজ ইবাদতের গুরুত্ব নফলের চেয়ে অনেক বেশি।
শবে বরাত উপলক্ষে ইবাদতের পাশাপাশি ইসলামের মূল শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং বিদআত এড়িয়ে চলা উচিত। এই পুণ্যময় রাতে সঠিক আমল পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সুযোগ রয়েছে।