১৫ জুন ২০২৫, রবিবার, ০৩:২৪:০০ পূর্বাহ্ন
শিশুদের সঙ্গে নবীজি (সা.) যেমন ব্যবহার করতেন
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৬-২০২৫
শিশুদের সঙ্গে নবীজি (সা.) যেমন ব্যবহার করতেন

প্রিয় নবী (সা.) শিশুদের খুব আদর-স্নেহ করতেন। অন্যদের তাদের প্রতি কোমল আচরণের নির্দেশ দিতেন। তাদের সঙ্গে দয়া ও সহানুভূতির আচরণের উপদেশ দিতেন। যারা শিশুদের সঙ্গে দয়ার আচরণ করে না তাদের ভর্ত্সনা করতেন।


তিনি বলেছেন, ‘যে আমাদের ছোটদের প্রতি রহম করে না এবং আমাদের বড়দের অধিকারের প্রতি লক্ষ রাখে না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’

(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪৩; জামে তিরমিজি, হাদিস : ২০৩২)


আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার নবী করিম (সা.) তাঁর নাতি হাসান (রা.)-কে চুমু খেলেন। আকরা ইবনে হাবিস (রা.) পাশে বসা ছিলেন। তিনি বলেন, আমার ১০ জন সন্তান।


একজনকেও আমি কখনো চুমু দিইনি। নবী করিম (সা.) তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘নিশ্চয়ই যে দয়া করে না তার প্রতিও দয়া করা হবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস ৫৯৯৭; সহিহ মুসলিম,

হাদিস : ২৩১৮)


শিশুদের অনুরাগ-অনুভূতির মূল্যায়ন করা


নবী করিম (সা.) শিশুদের চাহিদা ও অনুরাগ-অনুভূতির মূল্যায়ন করতেন। আদর-সোহাগ করে তাদের কাঁধে ওঠাতেন এবং তাদের শিশুসুলভ আচরণকে সহাস্যবদনে বরণ করে নিতেন।


শাদ্দাদ ইবনুল হাদ (রা.) বর্ণনা করেন, একদা রাসুলে করিম (সা.) হাসান বা হুসাইনকে কোলে নিয়ে মাগরিব বা ইশার নামাজের উদ্দেশে বের হলেন। তাকে পাশে রেখে তিনি সামনে অগ্রসর হলেন এবং তাকবির বলে নামাজ শুরু করলেন। নামাজের মাঝখানে একটি সিজদা খুব লম্বা করলেন। আমি মাথা ওঠালাম। দেখি, তিনি সিজদায়, আর শিশুটি তার পিঠে! আমি আবার সিজদায় চলে গেলাম।


নামাজ শেষ হলে সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! নামাজের মধ্যে একটি সিজদা অনেক দীর্ঘ করলেন! আমাদের তো আশঙ্কা হচ্ছিল, কোনো দুর্ঘটনা ঘটল না তো! বা ভাবছিলাম, আপনার প্রতি কোনো ওহি নাজিল হলো! নবী করিম (সা.) বলেন, এগুলোর কোনোটিই ঘটেনি, বরং আমার এই ছেলে (নাতি) আমার ওপর সওয়ার হয়েছে। আমার পছন্দ হলো না—তার (শিশু মনের) ইচ্ছাটুকু পূরণ হওয়ার আগে তাকে সরিয়ে দিই। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১১৪১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৩২৮৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৬০৩৩)

আনন্দদানের জন্য শিশুদের কাঁধে ওঠানো


নবী করিম (সা.) শিশুদের আনন্দ দিতেন, কাঁধে চড়িয়ে তাদের আহ্লাদ-আবদার পুরা করতেন। আবু কাতাদা (রা.) বলেন, একদিন আমরা মসজিদে বসা। নবীজি তাঁর কন্যা জয়নব (রা.)-এর মেয়ে উমামাকে কাঁধে করে আমাদের সামনে এলেন। (তিনি বলেন), এরপর নামাজের ইমামতি শুরু করলেন। উমামা তখনো নবীজির কাঁধে। রুকু করার সময় তাকে নামিয়ে রাখেন। সিজদা থেকে উঠে আবার উঠিয়ে নেন। পুরো নামাজ তিনি এভাবেই আদায় করলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৯৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৪৩)


শিশুদের সঙ্গে হাসি-আনন্দ


নবী করিম (সা.) কখনো কখনো শিশুদের সঙ্গে রসিকতা করতেন। হাসি-আনন্দ করতেন। আনাস (রা.) নবীজির খেদমত করতেন। তিনি ছিলেন খুব চঞ্চল। নবীজি রসিকতা করে তাঁকে দুই কানওয়ালা বলে ডাকতেন। আনাস (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) তাঁকে ‘হে দুই কানওয়ালা’ বলে ডেকেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, নবীজি তাঁর সঙ্গে রসিকতা করে এভাবে ডেকেছেন।


(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫০০২; জামে তিরমিজি, হাদিস : ২১০৯)


উম্মে সুলাইম (রা.)-এর এক সন্তানের নাম ছিল আবু উমাইর। ছোট্ট শিশু। তার একটা ‘নুগাইর’ পাখি ছিল। সে এটা দিয়ে খেলা করত। আনাস (রা.) বলেন, উম্মে সুলাইম (রা.)-এর এক ছোট্ট ছেলে ছিল। নাম আবু উমাইর। তার একটা ‘নুগাইর’ পাখি ছিল। নবী করিম (সা.) যখনই উম্মে সুলাইম (রা.)-এর ঘরে আসতেন আবু উমাইরের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করতেন। একদিন তার কাছে এসে দেখেন, তার মন খারাপ। বলেন, কী হলো আবু উমাইরের, মন খারাপ কেন? লোকেরা বলল, সে যে নুগাইর পাখিটা দিয়ে খেলা করত সেটা মারা গেছে। এর পর থেকে যখনই নবী করিম (সা.) তাকে দেখতেন, বলতেন, আবু উমাইর! তোমার নুগাইরটার কী হলো! (দেখছি না যে!) (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২০৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২১৫০)


শেয়ার করুন