২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:০৪:৫৪ অপরাহ্ন
সুপারিশ মানছেন না ভবনমালিকেরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৩-২০২৪
সুপারিশ মানছেন না ভবনমালিকেরা

চট্টগ্রাম নগরীতে গত বছর ৬৭৮টি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে হতাহতের সংখ্যা ছিল অর্ধশতের ওপর। প্রতিবার বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটলে নড়েচড়ে বসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফায়ার সার্ভিসের সুপারিশমালা বাস্তবায়ন নিয়ে শুরু হয় তোড়জোড়। তবে কিছুদিন গেলে গা ছাড়া ভাব চলে আসে ভবনমালিক ও দেখভালকারী কর্তৃপক্ষের। আর বাস্তবায়িত হয় না সেই সুপারিশমালা। 


ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর নগরীতে ৬৭৮টি দুর্ঘটনায় ১৭ জন মারা গেছে। আহত হয়েছে ৪৫ জন। এসব অগ্নিকাণ্ডে আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ১৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা। উদ্ধার করা হয় ১৮৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকার সম্পদ। 


সূত্র আরও জানায়, নগরীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হচ্ছে কোতোয়ালি থানাধীন খুচরা ও পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত রিয়াজউদ্দিন বাজার। এর আশপাশে ৭৮টি মার্কেটে ১৩ হাজার ৫৪৭টি দোকান ও গুদাম এবং ৪৫০টি আবাসিক ভবন রয়েছে। দ্বিতল ভবন থেকে শুরু করে ১০ তলা ভবন পর্যন্ত রয়েছে মার্কেটগুলো। অধিকাংশ ভবন ও মার্কেট ‘অধিক’ ঝুঁকিপূর্ণ। একই থানা এলাকায় কাপড়ের বৃহৎ পাইকারি বাজার টেরিবাজারেও ৭২টি মার্কেট অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া পোশাকের বাজার পৌর জহুর হকার্স মার্কেটসহ আশপাশে পাঁচটি মার্কেটের ১ হাজার ৪৬১ দোকান ও ৮১০টি গুদাম ঝুঁকিতে রয়েছে। 


গত বছর রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর এসব মার্কেট ও ভবনমালিকদের ১৫ থেকে ১৮টি সুপারিশ বাস্তবায়নের কথা বলে ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু এখনো পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এ ছাড়া গত বছর এপ্রিলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বরাবর একটি চিঠিতে রিয়াজউদ্দিন বাজারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ভূগর্ভস্থ পানির জলাধার নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও অনুরোধ করে ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু বাস্তবায়িত হয়নি। মার্কেটের ভেতরে হোটেল, গ্যাসের চুলা ও তাপ উৎপাদক সব স্থাপনা অপসারণের জন্য ব্যবসায়ী সমিতিদের চিঠি দিয়ে তাগাদা দেওয়া হয়েছিল। তা-ও তোয়াক্কা করেনি সংশ্লিষ্টরা। 


রিয়াজউদ্দিন বাজারের হাজি রশিদ আহমেদ কমপ্লেক্সের স্বত্বাধিকারী মো. রাশেদ বলেন, কিছু কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আরও কিছু বাকি আছে। 


বিপণি বিলাস নামের আরেকটি মার্কেটের মালিক শাখাওয়াত বিন আমিন বলেন, ‘মার্কেটের সার্বিক বিষয় আমার ম্যানেজার দেখেন। উনি এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করেছেন কি না, জানি না।’ 


নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, তামাকুমন্ডি লেন ও জহুর হকার্স মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, এসব মার্কেটের চলাচলের পথ সরু। একটি ভবনের সঙ্গে অন্যটি লাগানো। রিয়াজউদ্দিন বাজারের ভেতরের মার্কেটের গলি এতটা সরু যে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া আগুন নেভানোর জন্য পানির কোনো উৎস কিংবা জলাধার নেই। এসব মার্কেটে ইলেকট্রনিকস, কাপড়, জুতা, কসমেটিকস, কাঁচামালসহ নানা ধরনের পণ্যসামগ্রীর বহু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। 


ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক দিনমনি শর্মা বলেন, ‘অগ্নিঝুঁকিতে থাকা রিয়াজউদ্দিন বাজারসহ আশপাশের বিভিন্ন মার্কেটের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নেই যে সেখানে গিয়ে অভিযান চালাব। অভিযান চালাতে হলে ম্যাজিস্ট্রেট, জনবল চাওয়াসহ সব মিলিয়ে একটা দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়।’


ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, মানুষ তাঁর ভবন নিরাপত্তার জন্য তালা, কলাপসিবল গেটসহ লাখ লাখ টাকা খরচ করছেন। কিন্তু আগুন থেকে নিরাপদ থাকার জন্য সামান্য কিছু টাকা খরচ করছে না। সর্বোপরি এই বিষয়ে জনসচেতনতা জরুরি।


ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মালেক বলেন, ‘অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ভবনগুলোর বিষয়ে আমাদের একটি মনিটরিং টিম রয়েছে। ওরাই মূলত এ বিষয়ে নজরদারি করে আসছে।’ তিনি বলেন, ‘সাধারণত গরমের সময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি হয়ে থাকে। আমরা শিগগির এই বিষয়ে মাঠপর্যায়ে অভিযান চালাব। ভবনগুলোর তালিকা আছে, যারা ফায়ার সুপারিশ বাস্তবায়ন করছে না, সেই তালিকা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযানে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন মনে হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 


ফায়ার সার্ভিসের সুপারিশমালায় বলা হয়েছে—ফায়ার সেফটি প্ল্যান প্রণয়ন করে ফায়ার সার্ভিস ও ডিফেন্স অধিদপ্তরের অনুমোদন নেওয়া, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা তিন মাস পরপর পরীক্ষা, কমপক্ষে ৫০ লিটার ধারণক্ষমতার জলাধার সংরক্ষণ, বিকল্প সিঁড়ি স্থাপন, বাণিজ্যিক মার্কেটে আবাসিক হোটেল ও আবাসন না রাখা, ভবনের অভ্যন্তরে হোটেল, ক্যানটিন ও রান্নাঘর না রাখা ইত্যাদি।


শেয়ার করুন