২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:৩৫:৪১ অপরাহ্ন
আমি তো ভিক্ষা করিনা, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৭-২০২৩
আমি তো ভিক্ষা করিনা, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি

আগে জিনিসপত্রের দাম কম ছিল, সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো না। এখন তো সবকিছুর দাম বেশি। খেলনা বিক্রি করে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়। এই সামান্য আয়ে বাচ্চাদের পড়ালেখা আর সংসারের খরচাপাতি করতে খুব কষ্ট হয়। তারপরও আমি খুশি, ভালো আছি। ব্যবসা ছোট হোক তবু তো ভিক্ষা করি না।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী রহমত আলী। তিনি রাজশাহী মহানগরীর পদ্মার পাড়ে অস্থায়ী বস্তিতে থাকেন। সংসার জীবনে তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। মেয়েদের মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ানোর পর বিয়ে দিয়েছেন। আর ছেলে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।

রহমত আলী এক যুগেরও বেশি সময় ধরে শিশুদের খেলনা বিক্রি করে আসছেন। এর আগে তিনি চটপটি বিক্রি করতেন। পুঁজি কম থাকায় ব্যবসার ধরণ পরিবর্তন করে এখন তিনি পুরোপুরি খেলনা বিক্রেতা। সম্প্রতি রহমত আলীর সঙ্গে রাজশাহীর পদ্মার পাড়ের সামনে আলাপচারিতায় এসব তথ্য জানা যায়।

রোদ, বৃষ্টি ঝড়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি খেলনা বিক্রি করেন তিনি। হরেকরকম খেলনার পসরা সাজিয়ে প্রতিদিনই শিশুদের আনন্দ দেন। তার এক ফু-তে উড়তে থাকা বুদবুদ আকৃষ্ট করে পদ্মার পাড়ে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের। এতে কেউ খুশি হয়ে তাকে টাকা দিতে চাইলেও নেন না তিনি। সহযোগিতা করতে চাইলে তিনি অর্থের বিনিময়ে খেলনা তুলে দেন।

রহমত আলী বলেন, প্রতিদিন সকাল ৮টায় এসে খেলনার পসরা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। এভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যা বেচা-বিক্রি হয়, সেটাই আমার ব্যবসায়িক আয়। এই আয় দিয়ে কোনো মতে টিকে আছি। সারাদিন দাঁড়িয়ে

থাকতে কষ্ট হয়। তারপরও পরিবারের জন্য হাল ছাড়িনি। কারণ অন্য কোনো মাঝারি ব্যবসা করার মতো পুঁজি আমার নেই।

তিনি আরও বলেন, আমি কাজ করে খেতে পছন্দ করি। শরীর-স্বাস্থ্য আল্লাহ ভালো রাখছেন। অনেকেই আছে সামান্য অসুখ-বিসুখে, একটা হাতের বা পায়ের সমস্যার কারণে রাস্তাঘাটে ভিক্ষা করেন। আমি মনে করি এটা ঠিক না। মানুষের কাছে হাত পেতে খাওয়ার চাইতে কষ্ট করে কিছু করতে পারাটাও আনন্দের। আমি তো ভিক্ষা করি না, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। যদিও পরিবারে কষ্ট লেগেই আছে।

বেচাবিক্রি ও সংসারজীবন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুচকি হেসে রহমত আলী বলেন, আমার দিনটা কোনো মতে কেটে গেলেই ভালো। আবহাওয়া ভালো থাকলে বা বিশেষ দিনগুলোতে কখনো কখনো ব্যবসা হয়। তখন ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকার পর্যন্ত খেলনা বিক্রি হয়। এতে ৭শ থেকে হাজার পর্যন্ত আয় হয়। কিন্তু এটা খুব কমই হয়।

মূলত প্রতিদিন কমবেশি সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মতো আসে।

তিনি বলেন, আমার নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। আগে তো জিনিসপত্রের দাম কম ছিল, মাঝেমধ্যে মাছ-মাংস খাওয়া হতো। এখন আর মাছ-মাংস খাওয়ার চিন্তা করি না। চাল কিনলে সেদিন আর পছন্দ মতো তরকারি হয় না। তার মাঝে আবার ছেলেদের পড়াশোনার খরচও দেয়া লাগে। এখন আর আগের মত ভালো খাওয়া হয় না।

ফুঁ দিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেয়া বুদবুদের দিয়ে তাকিয়ে রহমত আলী বলেন, জীবনে তো অনেক মানুষকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হতে দেখলাম। অবৈধ পথে চলতে বা আয়রোজগার করতে চাইনা। কষ্ট শুধু মাথা গোঁজার মতো আমার নিজস্ব কোনো ঠিকানা নেই। সরকার হাজার হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে থাকার জায়গা করে দিচ্ছে, আমাকেও যদি একটা জমিসহ ঘরের ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে জীবনের বাকি

দিনগুলো নিজের ঘরে কাটিয়ে শান্তিতে মরতে পারতাম।


শেয়ার করুন