আজ ১৫ জুন, বিশ্ব বায়ু দিবস সারা বিশ্বে প্রতি বছরের মতো পালিত হচ্ছে দিবসটি। বায়ুকে কীভাবে ব্যবহার যোগ্য করে তোলা যায়, সেই বিষয়ে নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে পালন করা হয় বিশ্ব বায়ু দিবস। শুধু তাই নয়, এ দিনে এই অপ্রচলিত শক্তি ব্যবহারের সুবিধা এবং এখনও পর্যন্ত এই শক্তিকে কীভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে, সেই বিষয়গুলোও পর্যবেক্ষণ করা হয়।
আজ থেকে বহু বছর আগে মিশরের নীল নদীতে নৌকা চালানোর জন্য কিছু বায়ু কল ব্যবহার করা হয়েছিল।
সেই প্রথম বায়ু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কোনো কাজ করেছিল মানুষ। এরপর ২০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে চীনে বায়ু চালিত পানির পাম্প তৈরি করা হয়। এই মেশিনটি তৈরি করার পর খুব কম সময়ে এবং খুব কম পরিশ্রমে ক্ষেতে পানি দেওয়ার কাজ করা যেত।
খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে আলেকজান্দ্রিয়ার হেরন উইন্ডহুইল তৈরি করেছিলেন, যা প্রথম বায়ু চালিত চাকা ছিল।
চাকাটিতে একটি ছোট্ট উইন্ড মিল ছিল, যা চাকাটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করত। এই আবিষ্কারটি ভীষণ জনপ্রিয় একটি যন্ত্র হিসেবে পরিচিতি পায় সারা বিশ্ব জুড়ে।
১৮০০ দশকের শেষের দিকে এবং ১৯০০ দশকের প্রথম দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক আকারে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়। ১৯৭০– এর দশকে তেলের ঘাটতির কারণে বায়ু শক্তিকে কাজে লাগানো হয় ব্যাপক হারে।
আর তখন থেকেই শুরু হয় বিশ্ব বায়ু দিবস উদযাপন।
জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১৫ জুন প্রথম বিশ্ব বায়ু দিবস উদযাপন করা হয়েছিল। তবে তখন তা ছিল শুধুই ‘বায়ু দিবস’। এর দুই বছর পর, ২০০৯ সালে এ দিবসের নাম দেওয়া হয় ‘বিশ্ব বায়ু দিবস’।
জানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বায়ু শক্তি নিয়ে যারা কাজ করছে, তাদের সমন্বয়ে ইউরোপিয়ান উইন্ড এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন (ইডব্লিউইএ) নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলা হয়।
‘উইন্ডইউরোপ’ সংস্থা জানিয়েছে, উপকূলীয় এলাকার বায়ুশক্তিই এখন বিশ্বের, বিশেষ করে ইউরোপের সবচেয়ে সস্তা শক্তি। বড় বড় উইন্ড টারবাইন ব্যবহার করে বায়ুশক্তিকে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপপান্তরিত করা হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলেই, বর্তমানে বাতাসের শক্তিকে কাজে লাগাতে এই বিশাল বিশাল টারবাইন ব্যবহার করা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের (ইপিআইসি) গবেষকরা বলছেন, বায়ুদূষণের এই সূচকের হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার পাঁচটি দেশের চারটিই দক্ষিণ এশিয়ায়।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের শিকার বাংলাদেশ। বায়ুদূষণের কারণে গড়ে সাত বছর করে আয়ু হারাচ্ছে বাংলাদেশিরা। ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এই বায়ুদূষণ জীবনকাল সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশে সবচেয়ে দূষিত শহর ঢাকার বাসিন্দারা গড়ে ৮ বছর করে আয়ু হারাচ্ছেন। চট্টগ্রামে আয়ু কমছে সাড়ে ছয় বছর করে।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ৬৪ জেলার সবগুলোতে বাতাসে দূষণকারী কণার উপস্থিতি ডব্লিউএইচওর সহনীয় সীমার বেশি।
দক্ষিণ এশিয়ার বিপুল জনসংখ্যা এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে এই অঞ্চলের গড় আয়ু হ্রাসের পরিমাণ বিশ্বের মোট আয়ুষ্কালের ৫২ শতাংশ এবং এটা হচ্ছে কারণ এখানকার বাতাসে ডব্লিউএইচও’র নির্দেশিত সীমার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে দূষণকারী কণার উপস্থিতি।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের ৯৭ শতাংশ মানুষ এমন এলাকায় বসবাস করছে, যেখানে বায়ুদূষণের মাত্রা সহনীয় সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আর তা মানুষের গড় আয়ু কমার ক্ষেত্রে যে ভূমিকা রাখছে, তা ধূমপান, এইডস কিংবা সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যুর চেয়ে অনেক বেশি।
এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বায়ুদূষণ রোধে আশা করা যাচ্ছে— বাংলাদেশ তাদের পর্যবেক্ষণ সক্ষমতা বাড়াবে। বর্তমানে চার শহরে চালু থাকা তাৎক্ষণিক পরিমাপ ব্যবস্থা বাড়িয়ে আট শহরে বিস্তৃত করার হবে।
এদিকে বাংলাদেশে ইটভাটাগুলোতে আরো পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে সরকার। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ঢাকার ৬০ শতাংশ দূষণের জন্য এসব ইটভাটা দায়ী। এছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে সরকার ইটের পরিবর্তে কংক্রিট ব্লক ব্যবহারের লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করছে, যা বায়ুদূষণ কমানো এবং জমির উপরিভাগের মাটি সংরক্ষণে সহায়ক হবে।