১৩ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ০৮:১৪:৩১ অপরাহ্ন
ভিসা হয়ে উঠেছে সোনার হরিণ, হতাশ হতে হচ্ছে বাংলাদেশিদের
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৭-২০২৫
ভিসা হয়ে উঠেছে সোনার হরিণ, হতাশ হতে হচ্ছে বাংলাদেশিদের

কর্মী, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব ক্ষেত্রের পেশাজীবীদের জন্য দিনে দিনে জটিল হয়ে যাচ্ছে বিদেশের ভিসা পাওয়ার বিষয়টি। বিদেশি দূতাবাসগুলোয় জমা পড়া ভিসার অধিকাংশ আবেদন নাকচ হয়ে যাচ্ছে। যারা ভিসা পাচ্ছেন, তারাও সেটা পাচ্ছেন অনেক অপেক্ষার পর। আগে যেখানে ই-ভিসা কিংবা অন-অ্যারাইভাল সুবিধায় সহজেই বিদেশ ভ্রমণ করা যেত, এখন সেখানে ভিসা পেতে সময় লাগছে এক থেকে দুই মাস। 



বাংলাদেশিদের ভিসা পাওয়া ও নবায়নের ক্ষেত্রে জটিলতা সামনের দিনগুলোয় আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


এমনিতেই গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে ভারতের ভ্রমণ ভিসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে, অন্য ক্যাটাগরির ভিসার অনুমোদন হারও কম। তার ওপর এখন থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলোর ভিসাও সোনার হরিণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশিদের জন্য। একই পরিস্থিতি সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের ভিসার ক্ষেত্রেও। 



শুধু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াই নয়, ইউরোপ ও আমেরিকার ভিসা পাওয়াও এখন বাংলাদেশিদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। নিয়মিত ভ্রমণকারী ও ইউটিউবার নাদির নিবরাস জানান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি তিনটি দেশের ই-ভিসা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে তার।


নাদির জানান, বৈধ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার ভিসা এবং পর্যাপ্ত অর্থ থাকলেও তাজিকিস্তানের মতো সাধারণ ই-ভিসাও পাননি তিনি। কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়, ফি-ও ফেরত দেওয়া হয়নি। মলদোভা ও বাহরাইনের ই-ভিসার ক্ষেত্রেও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে তার।


চাকরিসূত্রে ও পর্যটক হিসেবে একাধিকবার থাইল্যান্ড সফর করেছেন কণা করিম। পাসপোর্টে রয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার একাধিক দেশের ভিসাও। তবে, এবছর এপ্রিল মাসে আবেদনের পর ভিসা প্রত্যাখ্যান করেছে ঢাকার থাই দূতাবাস।



একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন চীন থেকে নিয়মিত পণ্য আমদানি করা একজন ব্যবসায়ী। গত তিন বছরে অন্তত ছয়বার চীন সফর করেছেন তিনি। কিন্তু, এবার জুন মাসে তার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।



ব্যবসায়িক স্বার্থে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে কী, এটার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। জরুরি মিটিং এবং ব্যবসায়িক কাজ থাকার পরেও ভিসা পাইনি। গত কয়েক বছরে এই প্রথম এমন অভিজ্ঞতা হলো। তবে, ঠিক কী কারণে ভিসা পেলাম না সেটা জানার সুযোগ নেই।


ভ্রমণ ও ভিসা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, আগে তুলনামূলক সহজ ভিসা পাওয়া যেত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। এখন সেই দেশগুলোর দূতাবাসও বাংলাদেশিদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করছে। বাংলাদেশ থেকে বেড়ে চলা অবৈধ অভিবাসন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা এর অন্যতম কারণ।


বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভিএফএস গ্লোবাল ১৬৫টি দেশে তাদের ৩ হাজার ৯৩৬টি অফিসের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের ভিসার আবেদন গ্রহণের কাজ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে ২০টি এবং ভারতে ৮০টি দূতাবাসের হয়ে ভিসাপ্রার্থীদের সেবা দেয়। তাদের মতে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বাংলাদেশিদের ভুয়া সনদপত্র জমার প্রবণতা এই ভিসা প্রত্যাখ্যান বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে।


এ প্রসঙ্গে গত ২ জুলাই এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, বিদেশগামীদের মধ্যে জাল সনদ ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দেওয়ার প্রবণতা ভিসা জটিলতার অন্যতম প্রধান কারণ। এ বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।


শেয়ার করুন