০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৯:৫৩:৫২ অপরাহ্ন
বিচারকের সামনেই এজলাসে সাংবাদিককে মারধর
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৯-২০২৫
বিচারকের সামনেই এজলাসে সাংবাদিককে মারধর

ঢাকার শাহবাগ থানার সন্ত্রাসবিরোধ আইনের মামলায় সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান পান্নার জামিন শুনানিতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন এক সাংবাদিক। কোর্ট চলাকালীন এজলাসে বিচারক থাকাকালে বেসরকারি টেলিভিশন ‘সময় টিভি’র আসিফ মোহাম্মদ সিয়াম নামে ওই সাংবাদিককে কয়েকজন আইনজীবী মিলে কিল, ঘুষি, লাথি মারেন। এতে গুরুত্বর আহত হন সিয়াম। এরপর তাকে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।


বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাস পিয়াসের আদালতে এ ঘটনা ঘটে।


এদিন আসামি লতিফ সিদ্দিকী এবং সাংবাদিক পান্নার জামিন শুনানির দিন ধার্য ছিল। লতিফ সিদ্দিকীকে আদালতে হাজির করা না হলেও সাংবাদিক পান্নাকে আদালতে হাজির করা হয়।


এই সংবাদ সংগ্রহ করতে আদালতে যান কয়েকজন সাংবাদিক। বিকেল ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে সাংবাদিক পান্নাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ৮ম তলায় ৩০ নং এজলাসে তোলা হয়।


এসময় মোক্তাদির রশীদ নামে আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমের সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান পান্নার কাছে জানতে চান, কারাগারে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে কি না। এসময় এজলাসের বেঞ্চে বসে থাকা অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন মাহি আসামির সঙ্গে কথা বলার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। বিষয়টা নিয়ে কিছুটা তর্ক-বিতর্ক হয় তাদের। এসময় তাকে আদালত থেকে বের হয়ে যেতে বলেন অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন। ওই সাংবাদিক তার কাছে জানতে চান, ‘আপনি কোর্ট ইন্সপেক্টর কি না? আমাকে বেরিয়ে যেতে বলছেন। বিচারক বললে আমি বেরিয়ে যাব।’


এরই মাঝে বিচারক এজলাসে ওঠেন। শাহবাগ থানার একটা মামলার শুনানি শুরু হয়।


এসময় একটু দূরে দাড়িয়ে থাকা সময় টিভির সাংবাদিক সিয়াম এসে ওই আইনজীবীকে বলেন, উনি বহিরাগত না, একজন সাংবাদিক। একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে বেঞ্চ থেকে লাফ দিয়ে উঠেই মহিউদ্দিন নামে ওই আইনজীবী সাংবাদিক সিয়ামের কানের ওপর ঘুষি মারেন। এসময় সিয়াম তার হাতে থাকা সময় টিভির মাইক্রোফোন উঠিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। তবে ওই আইনজীবী তাকে টেনে বাইরে নিয়ে আসেন। সিয়াম কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই আইনজীবীর কয়েকজন সহযোগী তাকে ঘিরে মারধর শুরু করেন। যে যেভাবে পেরেছেন তাকে মারধর করেন। চড়, থাপ্পড়, কিল, ঘুষি, লাথি কিছুই বাদ পড়েনি। এতে রক্তাক্ত আহত হন সিয়াম।


আদালত কক্ষে এ পরিস্থিতি দেখে এজলাস থেকে নেমে খাসকামড়ায় চলে যান বিচারক। এসময় প্রসিকিউশনের পক্ষে থাকা কাইয়ুম হোসেন নয়ন ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করে তাকে সাক্ষীর কাঠগড়ার কাছে নিয়ে যান।


এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক সিয়াম বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই বিচারকের সামনে মব সৃষ্টি করে আমাকে মারধর করল কয়েকজন আইনজীবী। আমি এঘটনার বিচার চাই।’


এরপর বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটের আবার এজলাসে আসেন বিচারক। এরপর শুনানি নিয়ে আদালত লতিফ সিদ্দিকী এবং সাংবাদিক পান্নার জামিন আবেদন নাকচ করে দেয়।


এরআগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির একটি প্রোগ্রাম থেকে লতিফ সিদ্দিকী, সাংবাদিক পান্নাসহ ১৬ জনকে আটক করা হয়। শুক্রবার শাহবাগ থানার সন্ত্রাস বিরোধ আইনের গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।


এবিষয়ে হেনস্তার শিকার বাংলা আউটলুকের সাংবাদিক মোকতাদির রমিদ রোমিও বলেন, সাংবাদিক পান্নাকে হেলমেট খোলার (কাঠগড়ায়) পরে পান্না পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন আপনারা এমন কেন করছেন আমি তো আপনাদের শত্রু নই।


এ সময়ে কাছে দাঁড়িয়ে থাকায় আমি সাংবাদিক পান্নাকে জিজ্ঞেস করি, ভাই আপনাকে কি জেলের ভেতরে নির্যাতন করা হয়েছে? সাংবাদিক পান্না উত্তর দেন ‘না’। ঠিক এ সময়েই আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহি আমাকে কোর্ট থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য ধমকাতে থাকে।


আমি বলি, আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা কেবলমাত্র বিচারকের আছে। উনি বললে বের হয়ে যাব। ওনাকে বলতে দিন।


একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই ওই আইনজীবী আমাকে মারতে উদ্ধত হলে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন সাংবাদিক আসিফ মোহাম্মদ সিয়াম তাকে নিভৃত করার চেষ্টা করে।


কোর্টের নিয়ম রক্ষার জন্য আইনজীবীকে অনুরোধ করেন। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে, আইনজীবী সময় টেলিভিশনের সাংবাদিক আসিফ মোহাম্মদ সিয়ামকে মারতে শুরু করে। ‌আর একই সঙ্গে আমাকে ‘কুকুরের বাচ্চা, শুয়োরের বাচ্চা’ বলতে থাকে। পাশে পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। নিছক দর্শকের মতোই।


শেয়ার করুন