০৬ অক্টোবর ২০২৫, সোমবার, ০৪:৩০:০৫ পূর্বাহ্ন
নির্বাচন নিয়ে রহস্যঘেরা বিসিবি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৯-২০২৫
নির্বাচন নিয়ে রহস্যঘেরা বিসিবি

নানা কারণেই মিরপুরের ‘হোম অব ক্রিকেট’-এ বহুকাল আসা হয়নি তাঁর। বয়স এবং শারীরিক অসুস্থতায় এখন অনেকটাই কাবু হয়ে যাওয়া লোকমান হোসেন ভুইয়ার গতকালও এমুখো হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু তাঁর হিসাবে সাত বছর পর আসতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।


এসে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে এক অচেনা জগতই দেখে যাওয়ার অসন্তুষ্টি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক এই পরিচালকের কণ্ঠে, ‘আজ কাউন্সিলরশিপ নিয়ে আপত্তি জমা দেওয়ার দিন।


সকালে আমার প্রতিনিধি সেটি জমা দিতে এলে তাঁকে বলা হয় আমাকে সশরীরে আসতে হবে। সেই সঙ্গে আমার ভোটার আইডি দেখিয়ে প্রমাণ করে যেতে হবে যে আমিই লোকমান।’

সেই প্রমাণ লোকমানকে দিয়ে যেতে হলেও আপত্তি জানাতে আসা সবার ক্ষেত্রেই কি একই নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে? প্রশ্নটি আসছে কারণ গতকাল জমা হওয়া ৩০টি আপত্তির মধ্যে অন্যতম আলোচিত যেটি, সেটির বার্তাবাহক ভিন্ন ব্যক্তি। তামিম ইকবালের ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ নিয়ে আপত্তি জানানোর চিঠিতে সই-স্বাক্ষর এই মুহূর্তে ঢাকায় অবস্থান করা কানাডাপ্রবাসী সাবেক ক্রিকেটার হালিম শাহর।


কিন্তু হালিম শাহর বক্তব্য নির্বাচনকে ঘিরে রহস্যময় কর্মকাণ্ড আরো প্রকাশ্যই করে তুলেছে, ‘আমি কিছুই জানি না। আমি আজ (গতকাল) বিসিবিতে যাইওনি। গিয়ে থাকলে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করুক। এমনকি আমি কোনো চিঠিতেও সই করিনি।


কারা যে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে!’

কালের কণ্ঠের কাছে আসা সেই চিঠিতে এমন সব কারণ দেখানো হয়েছে, যেগুলো সংশ্লিষ্টদের কাছেও ‘হাস্যকর’ বলে মনে হয়েছে। যেমন—তামিমের কাউন্সিলরশিপ অবৈধ দাবি করে বলা হয়েছে, তিনি এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেননি। অথচ চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ান বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক। চিঠিতে তামিম ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের কেউ নন বলেও উল্লেখ করা হয়। এবার শুনুন ক্লাবটির সভাপতি ও সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদের বক্তব্য, ‘তামিম আমাদের ক্লাবের সদস্যই শুধু নয়, যুগ্ম সম্পাদকও।


 প্রমাণ হিসেবে ক্লাবের বিভিন্ন সভার কার্যবিবরণীও পাঠাচ্ছি।’

আপত্তি জানাতে এসে যাঁর কাছে সেটি জমা দিয়েছেন, তা নিয়েও তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন লোকমান, ‘আমি ভেবেছি নির্বাচন কমিশনারের কাছে জমা দিতে হবে। কিন্তু যাদের কাছে দিলাম, তাদের আমি চিনি না। পরিচয় জানতে চাইলে বলা হয়, তারা সিআইডির লোক।’ লোকমানের এই কথা চাঞ্চল্য তৈরি করলেও পরে এর একটি ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে আপত্তি জানাতে আসা বিসিবি পরিচালক ইফতেখার রহমানের কথায়, ‘নির্বাচন কমিশনে পুলিশের লোকও (অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি সিবগাত উল্লাহ) আছেন। ওনারই সচিব আপত্তি জমা নিয়েছেন।’


তৃতীয় বিভাগ বাছাই থেকে উঠে আসা বিতর্কিত দুটো ক্লাব নাখালপাড়া ক্রিকেটার্স ও ভাইকিংস একাডেমির প্রতিনিধি লোকমান এবং ইফতেখার। সেখান থেকে উঠে আসা ১৮টি ক্লাবের বিষয়ে অধিকতর তদন্তের সুপারিশ করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে তিনটি ক্লাব আবার বাছাইয়ে নেমেও গেছে। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় বাকি ১৫টি ক্লাবকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়ার সিদ্ধান্তই আমিনুল ইসলামের বোর্ড সভায় হয়েছিল বলে কাল জানিয়েছেন ইফতেখার। এর পরও নির্বাচন কমিশনের ওই ক্লাবগুলোকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তে ‘বোর্ডের হস্তক্ষেপ’ও দেখতে পাচ্ছেন তিনি। আজ তাদের আপত্তির শুনানি হবে। এতে উঠবে সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের কাউন্সিলরশিপ বাতিলের আবেদনও। নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে ফারুকের কাউন্সিরশিপ জমা হওয়ায় তা বাতিলের আবেদন জানিয়ে গেছেন আরেক কাউন্সিলর বোরহানুল হোসেন।


শেয়ার করুন